সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরুত্ব
বর্তমান বিশ্বে যেকোন দেশের অর্থনীতি পরিচালনার জন্য দক্ষ সরকারি অর্থ ব্যবস্থা অপরিহার্য। একটি দেশের সরকারি অর্থব্যবস্থার উপর নির্ভর করে ঐ দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা তথা অর্থনৈতিক কল্যান । উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত সরকারি আয়-ব্যয় তথা সরকারি অর্থ ব্যবস্থার তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। তখন ভাবা হতো, যে সরকার অর্থনীতিতে কম ব্যয় করে কম আয় করে সে সরকারই উত্তম। সরকার অর্থনীতিতে যত কম হস্তক্ষেপ করবে ততই মঙ্গল। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণা ভিন্ন।
এখন অনেকটা বলা যায়, যে সরকার বেশী আয়-ব্যয় করে সেই সরকারই উন্নয়ন বান্ধব। তাই পৃথিবীর বেশীর ভাগ দেশই বর্তমানে ঘাটতি বাজেট করে থাকে; যেখানে, সরকার আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশী করে। এক্ষেত্রে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার প্রচুর ব্যয় করে থাকে। এসকল খাতে সরকারি ব্যয় ছাড়া উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব । Adam Smith যখন অদৃশ্য হাত ধারণার কথা বলেন তখন বলা হয় বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদের দক্ষ বণ্টন হতে পারে, সরকারি হস্তক্ষেপের কোন প্রয়োজন নাই। তখন কিছু অর্থনীতিবিদ বলেছেন যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ না করে ববং মুক্ত বাজার নীতি বজায় রাখা উচিত। এ ধারণা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আংশিকভাবে কার্যকর ছিল যা বলবৎ ছিল। কিন্তু অন্যদিকে কিছু অর্থনীতিবিদ এ বক্তব্যের বিপক্ষে ছিলেন। তাদের মতে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সমাজের দুর্বল শ্রেণীর মানুষের কল্যাণ হতে পারে না তথা সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়। তারা বলেন যে, উৎকৃষ্ট প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক কার্যাবলীর সঙ্গে সমন্বয় সাধন অত্যন্ত জরুরি।
কাজেই সরকারি অর্থ ব্যবস্থা ছাড়া বর্তমানে কোন দেশের অর্থনীতি সক্রিয় তথা প্রত্যাশিত অবস্থানে থাকতে পারে না। তাই সরকারি অর্থ ব্যবস্থার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি অর্থ ব্যবস্থার গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণ গুলো আলোচনা করা যাক। যার মাধ্যমে সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরুত্ব ফুটে উঠবে।
১। সামাজিক কারণ : সমাজে কতগুলো বিষয় যেমন প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারি অর্থব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই।
২। কর আরোপের মাধ্যমে ক্ষতিকর দ্রব্যকে নিরুৎসাহিত করা: কতগুলো দ্রব্য আছে যা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর যেমন: সিগারেট, এলকোহল, অপিয়াম ইত্যাদি। সরকার এসব পণ্যের উপর করা বা লেভী আরোপ করে এসবের ভোগ ও উৎপাদন নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব বাড়তে পারে ।
৩। শিশু শিল্প সংরক্ষণ : উন্নয়নশীল দেশের শিশু শিল্পগুলো অর্থাৎ নতুন গড়ে ওঠা শিল্প গুলো উন্নত দেশের প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারে না। সরকার এসব উঠতি শিল্পের বিকাশের জন্য এসব শিল্পের প্রতিযোগী দ্রব্যের উপর আমদানি শুল্ক আরোপ করতে পারে।
৪। পণ্য দ্রব্যের সরবরাহ : সরকার দেশের জনগণকে পণ্য দ্রব্য সরবরাহ করে থাকে। যেমন, রাস্তা, ব্রিজ, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এয়ারপোর্ট ইত্যাদি। সরকারি অর্থব্যবস্থা এসবের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশের মানুষের কল্যাণ তথ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারে।
৫। আয়ের পুণ:বণ্টন : সরকার দেশের ধনী শ্রেনীর উপর কর আরোপ করে দরিদ্র শ্রেনীর জন্য আয় সৃষ্টিকারি উপাদান বৃদ্ধি তথা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পারে ।
৬। সমতা: সরকারি অর্থব্যবস্থা আয়ের অসমতা দূর করে ধনী দরিদ্র ব্যবধান কমিয়ে আনে যার ফলে সুষম আয় তথা উন্নয়ন হয়। সরকার ধনী শ্রেনীর উপর অধিক হারে কর আরোপ করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পারে। যেমন-খাদ্যে ভর্তুকী, ফ্রি-মেডিকেল সহায়তা, গৃহায়ন, শিক্ষা ইত্যাদি।
৭। ভর্তুকী ও বিশেষ বরাদ্দ : আধুনিক্কানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবা খাতে ভর্তুকী ও বরাদ্দ অনিবার্য হয়ে দাড়িয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনগনের প্রয়োজনে সরকার জ্বালানী তেল ও পরিবহন খাতে প্রচুর ব্যয় করে থাকে । ৮। সম্পদের কাম্য ব্যবহার : সরকার উপযুক্ত বাজেট নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে যা সরকারি অর্থব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
৯। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে। যেমন: পঞ্চবার্ষিক, দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা করে সম্পদ, কর ও সরকারি ঋনের সঠিক সমন্বয় সাধন করে থাকে ।
১০। কর্মসংস্থান সৃষ্টি : সরকার দেশের বেকারত্ব দূরীকরণ ও জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকে। যেমন: সরকারি কল-কারখানা, সরকারি ই-পিজেড, সরকারি পূর্ত কাজ ইত্যাদি ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions