বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের তালিকা
বাংলাদেশের আমদানি পণ্য
দরিদ্র ও জনবহুল বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রীকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন— (ক) দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্য বা ভোগ্যপণ্য (Consumer's Goods), (খ) শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Industrial Raw Materials) এবং (গ) মূলধনী দ্রব্য (Capital Goods)। এছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করা হয়। নিচে এদের বিবরণ দেওয়া হলো :
(ক) ভোগ্যপণ্য :
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। এ খাতে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধান প্রধান ভোগ্যপণ্যসমূহের বিবরণ নিচে দেওয়া হলো :
(i) খাদ্যশস্য : বাংলাদেশে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল, গম প্রভৃতি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। যেমন—
(ii) তৈলবীজ : বাংলাদেশের চাহিদানুযায়ী তৈলবীজ উৎপাদন হয় না। তাই প্রতি বছর বিদেশ থেকে তৈলবীজ আমদানি করতে হয়। ২০১২-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তৈলবীজ আমদানির জন্য যথাক্রমে ২৪২ ও ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয় ।
(iii) অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম : বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের মধ্যে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম উল্লেখযোগ্য । ২০১২-১৩ এবং ২০১৪-১৫ সময়ে বাংলাদেশে এ খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ১১০২ এবং ৩১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
(iv) কাঁচা তুলা : বাংলাদেশ বিদেশ হতে কাঁচা তুলাও আমদানি করে। ২০১২-১৩ এবং ২০১৪-১৫ সালে কাঁচা তুলা আমদানির জন্য যথাক্রমে ২০০৫ ও ২২৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়।
(খ) শিল্পজাত দ্রব্যসমূহ :
বাংলাদেশ যেসব শিল্পদ্রব্য আমদানি করে সেগুলো নিম্নরূপ :
(i) ভোজ্যতেল : বাংলাদেশ প্রতি বছর ভোজ্যতেল আমদানির জন্য প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে। ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ সময়ে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য এ খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ১৪০২ ও ৯২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
(ii) পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য : বাংলাদেশে খুব সামান্য পরিমাণে পেট্রোলিয়াম সামগ্রী উৎপন্ন হয়। তাই প্রতি বছর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে পেট্রোলিয়াম সামগ্রী আমদানি করতে হয়। ২০১২-১৩ এবং ২০১৪-১৫ সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৩৬৪২ ও ২০৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
(iii) সার : বাংলাদেশ প্রতি বছর বেশকিছু পরিমাণ সার আমদানি করে। অবশ্য এদেশে অনেকগুলো সার কারখানা আছে। কিন্তু এখনও সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয় নি। ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ১১৮৮ ও ১৩৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
(iv) ক্লিংকার : বাংলাদেশকে অতীতে প্রতি বছর বিদেশ হতে প্রচুর পরিমাণ সিমেন্ট আমদানি করতে হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ এ খাতে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এর কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানি ব্যয় দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ২০১২-১৩ এবং ২০১৪- ১৫ অর্থবছরে ক্লিংকার আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৪৮৭ এবং ৬৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
(v) সুতা : পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের জন্য বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ কারখানায় উৎপাদিত সুতা আমদানি করে। এ খাতে মোট আমদানি ব্যয়ের ৭% থেকে ৯% ব্যয় হয়। ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ১৩৫৬ ও ১৮৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
(vi) স্টেপল ফাইবার : পোশাক শিল্পের প্রয়োজনে বাংলাদেশকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ স্টেপল ফাইবার আমদানি করতে হয়। ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৪৫৪ ও ১০৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
(গ) মূলধনী দ্রব্য :
কৃষি ও শিল্পখাতের উন্নয়নের প্রয়োজনে বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মূলধনী দ্রব্য, যেমন— কলকব্জা, যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, ইঞ্জিন প্রভৃতি আমদানি করতে হয়। ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ১৮৩৫ ও ৩৩২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ চিনি, শিশু খাদ্য, সিগারেট, তামাক, সিল্ক বস্ত্র, কয়লা, কেরোসিন তেল, টায়ার, টিউব, রবারজাত দ্রব্যসামগ্রী, ঢেউটিন, ড্রাইসেল ব্যাটারি, ব্রেকওয়েল, বল, বিয়ারিং, বৈদ্যুতিক বাল্ব, মোটর সাইকেল, সাইকেল, স্কুটার, ঘড়ি, রেডিও, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকুলার, বই, পত্রপত্রিকা, চলচ্চিত্র, এক্সরে ফিল্ম ইত্যাদি আমদানি করে থাকে ।
বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি করে থাকে। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীন এরপর ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, পাকিস্তান, জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্স, ইরান, ইরাক, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য প্রভৃতি প্রধান ।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নানাবিধ চাহিদা মিটানোর প্রয়োজনে বর্তমানে এদেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অধিক। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের নিজস্ব উৎপাদনের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়, এ কারণে প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান হারে বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions