Home » » ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন

১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন

১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের সহযোগিতায় সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে কার্যকর হওয়া সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা ৮ অক্টোবর ১৯৫৬ সালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন। একই তারিখে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। অক্টোবর মাসেরই ২৭ তারিখে ইস্কান্দার মীর্জাকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন আইয়ুব খান ।


সামরিক শাসন জারির বাস্তবতা

১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের কুফল ছিল সুদূর প্রসারী। সামরিক সরকার জনগণের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে অস্ত্রের মুখে দেশ পরিচালনা করতে চেষ্টা করেন। সামরিক সরকার জনগণের অনুভূতিকে বুঝতে না পেরে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকে । ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির কারণগুলো নিম্নরূপ :

১। সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের অভাব : ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তানে সংগঠিত কোন রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মুসলিম লীগ কিছু নেতার পকেট সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগেরও তখন জাতীয় ভিত্তিক কোন ইমেজ তৈরি হয়নি। তাই অসংগঠিত রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার কারণে বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও সেনা বাহিনী রাজনীতিতে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে সক্ষম হয়। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ১৯৫৮ সালে সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করলেও, এর বিরুদ্ধে শুরুতে তেমন কোন সাংগঠনিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেনি।

২। মুসলিম লীগের দুর্বল অবস্থা: পাকিস্তানের দু'অংশের মধ্যে ঐক্যবন্ধনের প্রতীক হিসেবে বিরাজ করার পরিবর্তে জাতীয় পর্যায়ে মুসলিম লীগের অবস্থা হয়ে ওঠে অত্যন্ত শোচনীয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় যুক্তফ্রন্টের নিকট মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে। এর জন্য জাতীয় ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অভাব দেখা যায়। ফলে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলে আগ্রহী করে তোলে ।

৩। সময়মত নির্বাচন অনুষ্ঠান না হওয়া: পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর কখনই সময়মতো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে মুসলিম লীগ শূণ্য হওয়া আসনে উপনির্বাচন দিতে ভীত হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী এ সুযোগ গ্রহণ করে ।

৪ । সেনাবাহিনীর ক্ষমতা লাভের বাসনা: পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করছিলেন। সামরিক শাসন জারির বৈধতা দাবী করে ইস্কান্দার মীর্জা বলেন “আমি একজন নীরব দর্শক হিসেবে দেশ ধ্বংসের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করতে পারি না” । মূলত ১৯৫৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থান ছিল আইয়ুব খানের নেতৃত্বে কতিপয় ক্ষমতালোভী সামরিক কর্মকর্তার পরিকল্পিত ইচ্ছার বাস্তবায়ন।

৫। গভর্নর জেনারেলের অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ: ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল অযাচিতভাবে মন্ত্রিসভার কাজে হস্তক্ষেপ করতেন। গভর্ণর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ এবং ইস্কান্দার মির্জার ষড়যন্ত্র, মন্ত্রিসভা ও আইন সভার কাজে অন্যায় হস্তক্ষেপ পাকিস্তানে সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।

৬। ১৯৫৯ সালের নির্বাচনের ব্যাপারে ভীতি: পাকিস্তানে প্রস্তাবিত ১৯৫৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ সম্ভাবনা পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে শঙ্কিত করে তোলে। সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে পশ্চিমা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বানচাল করার ব্যবস্থা করে ।


১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের প্রভাব বা ফলাফল

১। একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা: সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন। তিনি এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করেন যাতে করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

২। সামরিক আইন জারির ধারা সূচনা: ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন জারির ফলে পাকিস্তানে সামরিক একনায়কতন্ত্র এবং সামরিক আইন জারির ধারা সূচিত হয়। যার ফলে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি অব্যাহত থাকে। তাছাড়া উপমহাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়ে।

৩। সংবিধান বাতিল: ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করে সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন। 

৪। সরকার বিরোধী আন্দোলন: সামরিক সরকার একটি বেসামরিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনার চেষ্টা করে। কিন্তু আইয়ুব সরকার বৈধতার সঙ্কট অতিক্রমে ব্যর্থ হয়। ‘ছয় দফা' কে কেন্দ্র করে বাঙালিরা একত্রিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে ‘আগরতলা মামলা' দায়ের করা হয়। এর প্রতিবাদে বিশাল এক গণঅভ্যুত্থান হয়।

৫। রাজনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা: আইয়ুব সরকার মৌলিক গণতন্ত্র নামে গণতন্ত্র নস্যাৎকারী এক অভিনব রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন। ১৯৬২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার চালু করেন।

৬। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রুদ্ধ: ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত হানে। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের আর্বতে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *