ফ্রান্স দখল
ফ্রান্স দখলের ৪৪ দিন
জার্মানির জাতশত্রু ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে স্থানীয় পরিসরে তাদের ক্ষোভটা ফ্রান্সের উপরেই বেশি ছিল। অ্যাডলফ হিটলার ক্ষমতায় বসার সাথে সাথে ভার্সাই চুক্তির ন্যক্কারজনক শর্তগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, যেকোনো মূল্যে ফ্রান্সকে শায়েস্তা করা হবে। এদিকে ফরাসিরা তখনকার দিনে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলে ম্যাজিনো লাইন। তারা মনে করত আর যাই হোক বিশ্বের কোনো সেনা বাহিনীর পক্ষে এই ম্যাজিনো লাইন অতিক্রম করা সম্ভব হবে না। এদিকে সে অসম্ভবকে সম্ভব করে বসে জার্মানির দুর্জয় পাঞ্জার ডিভিশন। তারা সুকৌশলে এই ম্যাজিনো লাইন অতিক্রম করে সরাসরি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে গিয়ে উপস্থিত হলে মাত্র চুয়াল্লিশ দিনের মাথায় পতন ঘটে ফ্রান্সের। নরওয়ে অভিযানের ব্যর্থতায় নেভিল চেম্বারলিনকে তুলোধুনো করে ছাড়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আর সে সুযোগটাই নিয়েছিলো হিটলারের বাহিনী। জার্মানরা যে বিদ্যুৎগতির ব্লিৎসক্লিগ অপারেশন চালিয়ে একের পর এক পোল্যান্ড, ও ডেনমার্ক দখল করেছিল ফ্রান্সের ক্ষেত্রে সে অভিযানে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছিল শক্তিশালী ম্যাজিনো লাইন। এক্ষেত্রে জার্মান পাঞ্জার ডিভিশনগুলো ম্যাজিনো লাইন এড়িয়ে বেলজিয়ামের মধ্যে দিয়ে ফ্রান্স আক্রমণ করে প্যারিস দখলের চেষ্টা করে সফলতার মুখ দেখে। এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলো বিখ্যাত ‘ম্যানস্টেইন পরিকল্পনা' ।
ফ্রান্সের ত্রাণকর্তা শার্লে দ্য গল
ম্যাজিনো লাইন অতিক্রম করে জার্মান পাঞ্জার ডিভিশনের অবিশ্বাস্য সফলতা দুর্ভাগ্যের দিন ডেকে আনে ফরাসিদের। এ সময় ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হন শার্লে দ্য গল। তিনি ১৯৪১ সালের দিকে সুয়েজ খাল অঞ্চলে প্রথম জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন। এরপর যখন যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তখন পুরো জাতির হাল ধরেন তিনিই । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন অপেক্ষাকৃত বৈজ্ঞানিক চিন্তার অধিকারী জার্মান বাহিনীর সামনে যত শক্তিশালীই হোক না কেন সব ধরনের পদাতিক বাহিনী ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে। তিনি যখন ফরাসিদের উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অনেকগুলো ফরাসি উপনিবেশ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট দ্য গলের চরম বৈরি হলেও ১৯৪২ সালের ২২ জুলাই তিনি সাক্ষাৎ করেন জেনারেল আইসেনহাওয়ারের সাথে। এমনি পরিস্থিতিতে ১৯৪২ সালের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ পতনের দিনে গল ফ্রান্সবাসীকে মাঠে না নামার অনুপ্রেরণা যোগাতে মার্কিন সহায়তা প্রার্থনা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হন। এর ফলে ফ্রান্স একেবারে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে জার্মানির পরাজয়ের মাধ্যমে স্বাধীন ফ্রান্স গড়ে তোলার জন্য ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions