বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নে বা গ্রামীণ উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উন্নয়ন কর্মসূচি জড়িত রয়েছে। বস্তুত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতির এই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনেক দিন ধরেই অনেক ধরনের বেসরকারি সংস্থা কাজ করে আসছে। এনজিও ব্যুরো'র তথ্য মতে বর্তমানে আড়াই হাজারের মত দেশী-বিদেশী বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশে কাজ করছে । এই বেসরকারি সংস্থাগুলো দারিদ্র্য বিমোচন, পল্লি উন্নয়ন, পরিবেশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, লৈঙ্গিক সমতা এবং মানবাধিকারসহ নানাবিধ বিষয়ে কাজ করে।
এদেশে সাধারণত তিন ধরনের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) কাজ করে। এগুলো হল:
ক. আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা
খ. জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা
গ. স্থানীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা
এনজিওকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা বেশ কঠিন। তবে সাধারণভাবে বলা যায় জনগণের স্বার্থে উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত সেবাদানকারী অলাভজনক সামাজিক সংস্থাই হল এনজিও। এনজিও-র গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এ ধরনের সংস্থা সরকারের কাছ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে সরকারের আইন মেনে জনগণের উন্নয়নের জন্য নানান ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এই সংস্থাগুলো অলাভজনক সংস্থা হিসাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে জনকল্যাণে ব্যয় করে। বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়শীল দেশের ক্ষেত্রে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কথা বললে চলবে না বরং এখানে আর্থ-সামাজিক প্রতিটি খাতের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে।
এনজিওগুলো নিম্নোক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে:
দারিদ্র দূরীকরণ: বাংলাদেশের গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এনজিওগুলো নানান কর্মসূচি সম্পাদন করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ঋণদান কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্নকর্মসংস্থান।
ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প: বাংলাদেশে অনেক মানুষ অতি গরীব বিধায় তারা প্রচলিত ব্যবস্থায় ঋণ নিতে পারে না। এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতিতে এক ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের সামষ্টিক ভূমিকা বৃদ্ধি ও নিজেদের অধিকার তুলে ধরার সক্ষমতা সৃষ্টিতে এনজিও কাজ করে। তথ্য জানার অধিকার, সহিংসতা বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতা বাড়াতে এনজিওসমূহের যে কার্যক্রম তা সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্য দান: বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলো ভূমিকা পালন করে থাকে। ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ, উদ্ধারকার্য সম্পাদন ও পুনর্বাসন ইত্যাদি কাজে এরা ভূমিকা রেখে চলেছে ।
শিক্ষা সম্প্রসারণ: শিশু ও বয়স্কদের শিক্ষা, গণশিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ কার্যক্রমে এনজিওগুলো ভূমিকা পালন করে চলেছে।
এছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধানে বেসরকারি সংস্থাসমূহ সচেতনতা বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্য, নারীর উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা, কর্মসংস্থান, কৃষি উন্নয়ন, মূলধন সৃষ্টি, পরিবেশগত উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে এনজিওদের ভূমিকা নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা রয়েছে। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র ঋণের উচ্চহার ও ঋণ আদায়ে কখনো-কখনো জবরদস্তির বিষয়টিকে নানা মহল সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions