সরকারি কর্ম কমিশন কি
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যা সরকারি কর্মী নিয়োগ ব্যবস্থার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৮ এপ্রিল, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন' আদেশ জারি করেন। বাংলাদেশ সংবিধানের নবম ভাগে ২য় পরিচ্ছেদের ১৩৭ থেকে ১৪১ নং অনুচ্ছেদে সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলি উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিশন গঠন
আইনের দ্বারা বাংলাদেশের জন্য এক বা একাধিক সরকারি কর্ম-কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান করা যাবে এবং একজন সভাপতিকে ও আইনের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত, সেরূপ অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে প্রত্যেক কমিশন গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির ৫৭ নং অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য সংখ্যা সভাপতিসহ অন্যূন ৬ জন এবং অনূর্ধ্ব ১৫ জন নির্ধারণ করা হয় । [অনুচ্ছেদ- ৩৭]
সদস্য নিয়োগ
প্রত্যেক সরকারি কর্ম কমিশনের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রত্যেক কমিশনের যতদূর সম্ভব অর্ধেক সংখ্যক সদস্য এমন ব্যক্তিগণ হবেন যাঁরা বিশ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে যে কোন সময়ে কার্যরত কোন সরকারের কর্মে কোন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইন-সাপেক্ষে কোন সরকারি কমিশনের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যের কর্মের শর্তাবলি রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে যেরূপ নির্ধারণ করবেন, সেরূপ হবে [অনুচ্ছেদ- ১৩৮ (১), ১৩৮ (২)]
পদের মেয়াদ
কোন সরকারি কর্ম কমিশনের সভাপতি বা অন্য কোন সদস্য তাঁর দায়িত্বগ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বছর বা তাঁর ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া - এর মধ্যে যা আগে ঘটে, সে কাল পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন ।
সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারক যে পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ছাড়া কোন সরকারি কর্ম কমিশনের সভাপতি বা অন্য কোন সদস্য অপসারিত হবে না। তবে কোন সরকারি কর্ম কমিশনের সভাপতি বা অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন। [অনুচ্ছেদ- ১৩৯ (১), ১৩৯ (২), ১৩৯ (৩)]
সরকারি কর্ম কমিশনের কার্যাবলি
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪০ নং অনুচ্ছেদে কমিশনের দায়িত্ব বা কার্যাবলি সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে কমিশনের কার্যাবলি তুলে ধরা হল-
i. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা-পরিচালনা করা। [অনু- ১৪০ (১ক)]
ii. রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোন বিষয় সম্পর্কে কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হলে কিংবা কমিশনের দায়িত্ব-সংক্রান্ত কোন বিষয়ে কমিশনের নিকট প্রেরণ করা হলে সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশদান এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত পালন । [অনু-১৪০ (১খ), ১৪০ (১গ)]
iii. জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত কোন আইন এবং কোন কমিশনের সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত কোন প্রবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত ক্ষেত্ৰসমূহে কোন কমিশনের সাথে পরামর্শ করবেন-
(ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মের জন্য যোগ্যতা ও তাতে নিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়াদি;
(খ) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদান, উক্ত কর্মের এক শাখা হতে অন্য শাখায় পদোন্নতিদান ও বদলিকরণ এবং অনুরূপ নিয়োগদান, পদোন্নতিদান বা বদলিকরণের জন্য প্রার্থীর উপযোগিতা-নির্ণয় সম্পর্কে অনুসরণীয় নীতিসমূহ ;
(গ) অবসর-ভাতার অধিকারসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মের শর্তাবলিকে প্রভাবিত করে, এরূপ বিষয়াদি এবং
(ঘ) প্রজাতন্ত্রের কর্মের শৃঙ্খলামূলক বিষয়াদি । [অনু-১৪০ (২)]
পরিশেষে বলা যায়, সরকারি কর্ম কমিশন অন্যতম একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের উপর সরকারের অগ্রযাত্রা ও সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে কেননা এ প্রতিষ্ঠানই প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য নাগরিকদের যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা করে থাকে । এছাড়া আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্বপালন করে থাকে সরকারি কর্ম কমিশন ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions