নির্বাচন কমিশনের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী
আধুনিক গণতন্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম ভাগে ১১৮ থেকে ১২৬ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা বা গঠন উপস্থাপন করা হলো-
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। উক্ত বিষয়ে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার সভাপতিরূপে কার্য পরিচালনা করবেন।
বাংলাদেশ সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে কোন নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাঁর কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর হবে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এমন কোন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না । অন্য কোন নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনাররূপে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন, তবে অন্য কোনভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না ।
নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলি রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করবেন সেরূপ হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হবেন না। কোন নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন। [অনুচ্ছেদ ১১৮]
নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি
বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৯ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বা কার্যাবলি লিপিবদ্ধ রয়েছে। নিম্নে নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-
i. রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকবে।
ii. রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন।
iii. সংসদ-সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন।
iv. সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবেন।
V. রাষ্ট্রপতির পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবেন।
Vi. স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন ।
vii. নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত দায়িত্বসমূহের অতিরিক্ত যেরূপ দায়িত্ব সংবিধান বা অন্য কোন আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে, সেরূপ দায়িত্ব পালন করবেন।
পরিশেষে বলা যায়, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা এবং অপরিহার্যতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি একটি রাষ্ট্রে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা পায় ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions