“হযরত ওমর নিবেদন করলেন- বায়তুলমাল হতে একটি থলি ভরা আশরাফি নিয়ে হাজির হয়েছি অনুগ্রহ করে এগুলো কবুল করুন।
ওয়ায়েছ জবাব দিলেন, ওমর! অবসর সময়ে আমি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লোকের উট চরিয়ে থাকি। দেখুন এখনও আমার পকেটে দুটি দিরহাম অবশিষ্ট রয়েছে। যদি আপনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে, এ দুটি দিরহাম খরচ না হওয়া পর্যন্ত আমার মৃত্যু আসবে না, তবেই আপনার আশরাফির থলি গ্রহণ করব।”
সরকারি অনুদান নেয়ার পূর্বে যে ঘটনাটি জানা দরকার!
খিলাফত লাভ করার পর হযরত ওমর (রাঃ), হযরত ওয়ায়েছ করনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। ওয়ায়েছ তখন নজদ এলাকার গারা নামক একটি মরু-প্রান্তরে অবস্থান করছিলেন। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর হযরত ওমর গারা প্রান্তরে পৌঁছলেন। দেখতে পেলেন, হযরত ওয়ায়েছ নিবিষ্ট মনে নামায পড়ছেন। নামায শেষ হওয়ার পর উভয়ের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হল ।
ওমর জিজ্ঞেস করলেন— শুনেছি ওহুদ যুদ্ধে রাসূলে মকবুলের (সাঃ) একটি দাঁত শহীদ হওয়ার খবর শুনে আপনি নিজ হাতে একটি একটি করে নিজের সব কয়টি দাঁত ফেলে দিয়েছিলেন?
ওয়ায়েছ—রাসূলের প্রতি মহব্বত প্রকাশ করার জন্যই আমি তা করেছিলাম।
ওমর- আশ্চর্যের বিষয়, এমন গভীর ভালবাসা পোষণ করার পরও আপনি আল্লাহর রাসূলকে (সাঃ) একবার স্বচক্ষে দেখার জন্য হাজির হলেন না?
ওয়ায়েছ—আল্লাহর ইচ্ছা ছিল না, তাছাড়া চর্মচক্ষে না দেখলেই কী দেখা হয় না?
ওমর--আমাকে কিছু উপদেশ দিন।
ওয়ায়েছ—হে ওমর! যদি আল্লাহর সম্মুখে পরিচিত হতে পারেন, তবে চেষ্টা করবেন যেন দুনিয়ায় আর কেউ কোনদিন আপনার পরিচয় না পায়। আর যদি আপনি নিজে তাঁর পরিচয় লাভ করতে পারেন তবে অবশিষ্ট জীবনে আর কারও পরিচয় জানার চেষ্টা করবেন না।
হযরত ওমর নিবেদন করলেন- বায়তুলমাল হতে একটি থলি ভরা আশরাফি নিয়ে হাজির হয়েছি অনুগ্রহ করে এগুলো কবুল করুন।
ওয়ায়েছ জবাব দিলেন, ওমর! অবসর সময়ে আমি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লোকের উট চরিয়ে থাকি। দেখুন এখনও আমার পকেটে দুটি দিরহাম অবশিষ্ট রয়েছে। যদি আপনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে, এ দুটি দিরহাম খরচ না হওয়া পর্যন্ত আমার মৃত্যু আসবে না, তবেই আপনার আশরাফির থলি গ্রহণ করব ।
ওমর বলে উঠলেন-সুবহানাল্লাহ! কী অপূর্ব তাওয়াক্কুল! ওয়ায়েছ তৎক্ষণাৎ একটু রুক্ষস্বরে বললেন – “ ওমর, আমার প্রশংসা করবেন না। সকল প্রশংসারই মালিক একমাত্র আল্লাহ । তা ছাড়া হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি আর সময় নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, কিয়ামত খুবই নিকটবর্তী।”
এ কথা বলতে বলতেই হযরত ওয়ায়েছ উঠে গেলেন এবং পুনরায় নামায শুরু করে দিলেন।
হযরত ওয়ায়েছ শেষ বয়সে কুফায় চলে এসেছিলেন। এখানে তিনি অধিকাংশ সময় ফুরাত নদীর তীরে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন।
একদিন সে যুগের প্রখ্যাত বুযুর্গ হযরত হারাম ইবনে হাব্বান তাঁর খিদমতে হাজির হয়ে সালাম পেশ করলেন।
হযরত ওয়ায়েছ জবাব দিলেন, ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম, হে হারাম ইবনে হাব্বান! হারাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমার এবং আমার পিতার নাম পর্যন্ত কিরূপে জানলেন।
ওয়ায়েছ জবাব দিলেন — ঈমানদারগণের আত্মা একে অপরকে শনাক্ত করতে পারে। এখন বলুন কী মনে করে এসেছেন?
হাব্বান— আপনার সাক্ষাৎলাভ করে আত্মাকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে।
ওয়ায়েছ— মুমিনের পক্ষে একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্য ব্যতীত আর কোথাও শান্তি লাভ করার স্থান নেই । সেই নিয়ামত আপনি ভুল জায়গায় তালাশ করতে এসেছেন।
হাব্বান— আপনি ঠিকই বলেছেন । এখন আমাকে কিছু নসিহত করুন ।
ওয়ায়েছ— শোয়ার সময় মনে করবেন, মৃত্যু আপনার শিয়রেই রয়েছে। জাগ্রত অবস্থায় মনে করবেন, আল্লাহ আপনার চোখের সামনে। কোন পাপকেই তুচ্ছ মনে করবেন না; কেননা এতে আল্লাহকেই অপমান করা হয়।
হাব্বান- দোয়া করবেন, রিজিকের ব্যাপারে যেন আল্লাহপাক আমাকে কারও মুখাপেক্ষী না করেন ।
ওয়ায়েছ— আল্লাহর রাজ্জাক গুণ সম্পর্কে যে ব্যক্তি এতটুকু সন্দেহ পোষণ করে তার জন্য আবার কী দোয়া করব? এ কথা বলার পর ওয়ায়েছ উঠে চলে গেলেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions