Home » » বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ আলোচনা কর

বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ আলোচনা কর

বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ আলোচনা কর

বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ অবদান রেখেছে তার মধ্যে- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

নিম্নে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো:

(১) ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন: বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের মাধ্যমে ভারতবর্ষ ভাগের পর পাকিস্তান অংশের সাথে বাংলাকে যুক্ত করা হয়। তার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে এদেশের নাম রাখ হয় পূর্ব পাকিস্তান। সমস্ত পাকিস্তানের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের (শতকরা ৫৬ ভাগ) ভাষা ছিলো বাংলা। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার নীল নকশার ষড়যন্ত্র শুরু করে। আর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন সময় উর্দুকে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। তবে এদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠী তাদের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে এবং প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। অবশেষে ১৯৫২ সালের এদেশের ছাত্র- শিক্ষক এবং জনতার সাথে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের দাবী মানতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভাষা আন্দোলনের এ ঘটনার মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়।

(২) ১৯৫৪ সালের নির্বাচন: ১৯৫৪ সালের নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের হীন ষড়যন্ত্র চরিতার্থ করার লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে শোষণ শুরু করে। কিন্তু এদেশের বাঙালি নেতৃবৃন্দ তাদের শোষণের ছক বুঝতে পেরে রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন ও প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। অতপর ১৯৩৫ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের সাথে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল এবং খিলাফতে রব্বানি পার্টির সমন্বয় গঠিত যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ৩০৯ আসনের মধ্যে ২২৮ টি আসন লাভ করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলে বোঝা যায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা কতটা সুদৃঢ় ছিল।

(৩) ১৯৬৬ সালের ৬ দফাঃ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং এদেশের মানুষকে সমস্ত প্রকার বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানী শোষণের প্রকৃত মাত্রা বুঝতে পারে এবং নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে আরও সচেতন ও সোচ্চার হয়ে উঠে। ৬ দফা কর্মসূচির মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের সকল রসদ বিদ্যমান ছিল। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে এর বাস্তবে প্রতিফলন ঘটেছিল ।

(৪) ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান: বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৮ সালের ছাত্র অসন্তোষ গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে তীব্র প্রতিবাদে রূপ নেয়। ঢাকার রাজপথ রূপান্তরিত হয় মিছিলের নগরীতে। গভর্নর হাউস ঘেরাও হলে পুলিশের সাথে জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সূত্র ধরে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। এসময় শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে আরও একটি অনন্য ঘটনা ।

(৫) ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন: ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখে। দীর্ঘদিনের শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ আরও বেশি সোচ্চার হয়ে উঠে। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রলয়ংকরী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তখন অসহায় মানুষের দিকে নজর না দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার বিষয়ে ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। যার ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা আরও সুদৃঢ় হয়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসনে এবং জাতীয় পরিষদের (পূর্ব পাকিস্তান) ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয় লাভ করে। এতে প্রমাণিত হয় যে, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে গঠিত ঐক্য ও সংহতি কতটা সুদৃঢ় হয় ।

(৬) বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ ভাষণের মাধ্যমে তিনি কেবল মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত এবং অনুপাণিত করেননি, এ জনপদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছেন। গুরুত্ব এবং প্রভাব বিবেচনা করে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চেও ভাষণকে “বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল” বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

(৭) ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেকটি ঘটনা বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সমগ্র বাঙালি জাতি নিঃসঙ্কচিত্তে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিনের শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের ফলে পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে অগ্নিঝরা মুক্তিসংগ্রামে মধ্য দিয়ে। ২৩ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তির এ মঞ্চ প্রস্তুত করেন বাঙালির অবিসাংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর আহ্বানে অকুতোভয় সাধারণ মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং প্রায় দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এ যুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। বস্তুত বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে মুক্তিযুদ্ধই সবচেয়ে প্রভাবশালী উপাদান, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *