Home » » উয়ারী বটেশ্বর কোথায় অবস্থিত

উয়ারী বটেশ্বর কোথায় অবস্থিত

উয়ারী বটেশ্বর কোথায় অবস্থিত

উত্তর: উয়ারী বটেশ্বর নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবচর উপজেলার ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উয়ারি এবং বটেশ্বর গ্রাম অবস্থিত।

বাংলাদেশে সম্প্রতি আবিষ্কৃত এবং বহুল আলোচিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হচ্ছে উয়ারি-বটেশ্বর। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি দীর্ঘকাল মাটিচাপা পড়েছিল। উয়ারি-বটেশ্বর আবিষ্কারের পূর্বে বগুড়ার মহাস্থানগড়কে (পুণ্ড্রনগর) বাংলার সর্বাধিক প্রাচীন সভ্যতা বলে অভিহিত করা হতো। কিন্তু উয়ারি-বটেশ্বর সে ধারণায় চিড় ধরিয়েছে। নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, সমগ্র খনন কাজ শেষে গবেষণায় এটি প্রমাণিত হতে পারে যে, উয়ারি- বটেশ্বরই বাংলাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা।


উয়ারী বটেশ্বর অবস্থানঃ 

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবচর উপজেলার ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ- পশ্চিমে উয়ারি এবং বটেশ্বর গ্রামের অবস্থান। উয়ারি ও বটেশ্বর পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ভিন্ন গ্রাম হলেও প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দেশন হিসেবে একসাথে উচ্চারণ করা হয়। গ্রাম দু'টি আশে-পশের সমতল ভূমি থেকে একটু উঁচু। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে কয়রা নদীর দক্ষিণ তীরে উয়ারি এবং বটেশ্বর গ্রামের অবস্থান। সম্প্রতি আবিষ্কৃত হলেও এটি ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।


উয়ারী বটেশ্বর উৎপত্তিঃ 

নব্যপ্রস্তর যুগের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নগর সভ্যতার গোড়াপত্তন হতে থাকে। মিশর, মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু সভ্যতা অনুরূপ নগর সভ্যতা হিসেবে স্বীকৃত। মহাস্থানগড় এবং উয়ারি-বটেশ্বর হচ্ছে এর পরবর্তী প্রজন্মের নগর সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে একটি দুর্গ নগর হিসেবে উয়ারি-বটেশ্বরের আত্মপ্রকাশ ঘটে বলে ধারণা করা হয়। গ্রিকো- রোমান গণিতবিদ টলেমি (Claudius Ptolemy, ১০০-১৭০খ্রি.) তাঁর Geographia গ্রন্থে উয়ারি-বটেশ্বরকে ‘সোনাগড়া’ বলে উল্লেখ করেছেন । তিনি ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডেও অনুরূপ কিছু প্রাচীন বাণিজ্যিক নগরীর উল্লেখ করেছেন। মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্গত এই জনপদে ২৫০০ বছর পূর্বে সমৃদ্ধ সংস্কৃতির স্ফূরণ ঘটেছিল। কিন্তু এ সভ্যতা আধুনিক গ্রামীণ সভ্যতার নিচে চাপা পড়েছিল দীর্ঘকাল।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ হানিফ পাঠান ১৯৩৩ সালে এখানে প্রাচীনকালের কিছু মুদ্রা খুঁজে পান। হানিফ পাঠান এবং তার ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান উয়ারি-বটেশ্বর এলাকার গঠন, স্থাপনা এবং বিভিন্ন প্রাচীন সামগ্রী অনুসন্ধান ও সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করেন। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তারা বিষয়টি অনেকের নজরে আনেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ২০০০ সাল থেকে এখানে খনন কাজ পরিচালিত হয়। আবিষ্কৃত হয় বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন নগর সভ্যতার ।


উয়ারি-বটেশ্বরের প্রধান প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন: 

খনন কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহের মধ্যে প্রাচীন দুর্গনগরী, বন্দর, রাস্তা, ঘরবাড়ি, টেরাকোটা, রৌপ্যমুদ্রা, হাতের কাজ করা ধাতব সামগ্রী, অস্ত্রশস্ত্র ও গৃহকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য উল্লেখযোগ্য। উয়ারি-বটেশ্বর থেকে চার কিলোমিটার দূরে মন্দিরভিটা নামক একটি বৌদ্ধ মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। অন্য আরেকটি গ্রামেও এরূপ আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করা যায়, এই জনপদে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাধান্য ছিলো। পুরো জনপদে এখনো পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র পাওয়া গেছে, যার মধ্যে রঙেরটেক, সোনারুটলা, কেন্দুয়া, মরজাল, টঙ্গী রাজার বাড়ি, মন্দিরভিটা, চণ্ডীপাড়া, জয়মঙ্গল, কুণ্ডাপাড়া ও গোদাশিয়া উল্লেখযোগ্য।

খননকার্য পরিচালনাকারী অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, উয়ারি-বটেশ্বর একটি পরিকল্পিত, সমৃদ্ধ এবং প্রাচীন বাণিজ্যনগরী। আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে উয়ারি-বটেশ্বরের দুর্গনগরী ও প্রত্নসামগ্রী খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে উয়ারি-বটেশ্বরে ৬০০ মিটার করে দীর্ঘ চারটি মাটির দুর্গ- প্রাচীর আবিস্কৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য দুর্গের চারদিকে পরিখার চিহ্ন বিদ্যমান। দুর্গের কাছাকাছি অসম রাজার গড় নামে ৫.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি মাটির বাঁধ রয়েছে। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের অবস্থান থেকে ধারণা করা যায়, উয়ারি- বটেশ্বর ছিলো এক দূর্গনগর। আবার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকেও উয়ারি-বটেশ্বর সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিলো। উয়ারি গ্রামে ১৬০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৬ মিটার প্রশস্ত প্রাচীন পাকা রাস্তা বন্দর ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের নিদর্শন বলে মনে করা হয়। এখানে উচ্চতাপমাত্রায় লোহা গলিয়ে কুঠারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করা হতো। এখানে কয়েক হাজার কুঠার পাওয়া গেছে। বন্দর ও বাণিজ্য নগরী হিসেবে এখানে বিভিন্ন কারখানা স্থাপিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তামা, রূপা ও ব্রোঞ্জ গলিয়ে মুদ্রা প্রস্তুত করা হতো। পাথর কেটে তারা মনোরম ও সুদৃশ্য পুঁতি তৈরি করতো। তারা বিভিন্ন রাসয়নিকের ব্যবহার জানতো।

বাংলাদেশে একমাত্র উয়ারি-বটেশ্বরেই ‘গর্ত-বসতি'র সন্ধান পাওয়া গেছে। মাটিতে গর্ত করে বসবাসের উপযোগী ‘ঘর’ নির্মাণ করা হতো। মানব সভ্যতার ‘তাম্রযুগে' এরূপ ‘ঘর’ নির্মাণ করা হতো। ভারত এবং পাকিস্তানেও এরূপ ‘গর্ত- বসতি'র সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, প্রায় ৪০০০ বছর আগে মানুষ এ ধরনের ঘরে বসবাস করতো । উয়ারি-বটেশ্বরের নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে কৃষিকাজ বিস্তার লাভ করেছিল। এর পাশাপাশি ধনিক, বণিক, পুরোহিত, কারিগর, রাজকর্মচারী ও যোদ্ধারা নগরে বসবাস করতো। ধাতব সামগ্রী তৈরি করার মতো দক্ষ কারিগর সেখানে ছিলো। কৃষিজীবীরা অ-কৃষিজীবী পেশাজীবীদের জন্য খাদ্য-শস্যের যোগান দিত।

ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী হওয়ার কারণে উয়ারি-বটেশ্বরের সাথে তৎকালীন অন্যান্য জনপদের নৌপথে যোগাযোগ গড়ে ওঠা সহজ ছিল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চক্রবর্তীর মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও রোমান সাম্রজ্যের সাথে উয়ারি-বটেশ্বরের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল। নগরতত্ত্ববিদ গর্ডন চাইল্ডের মতে, ইটের ব্যবহার নগরায়নের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করে। একইসাথে নদীর উপস্থিতি হেনরি পিরানির নগরসৃষ্টি তত্ত্ব সমর্থন করে। সার্বিক বিচারে উয়ারি-বটেশ্বরকে বাণিজ্য-নগরী বলেই অভিহিত করা যায়।


উয়ারি-বটেশ্বরের গুরুত্বঃ 

বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগর সভ্যতার নিদর্শন হচ্ছে উয়ারি-বটেশ্বর। এটি একাধারে প্রাচীন দুর্গনগরী এবং বাণিজ্য-নগরী হিসেবে স্বীকৃত। কৃষির পাশাপাশি এখানে নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ, জীবিকা নির্বাহ, ব্যবসা- বাণিজ্য এবং বন্দরভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। মুদ্রা অর্থনীতি ও কৃষি বহির্ভুত পেশার চর্চা উয়ারি-বটেশ্বরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । ইটের ব্যবহার, পাকা রাস্তা, প্রাচীর ও পরিখা উন্নত নগর সভ্যতার পরিচায়ক।

বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকার বিকাশ হয়েছে পনের শতকের পর। কিন্তু আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে ঢাকার অদূরে ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে উঠেছিল এক বিশাল বন্দর ও বাণিজ্য নগরী। দুর্গ ও পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত নিরাপত্ত ব্যবস্থা থেকেই এ নগরীর সমৃদ্ধি ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

বাংলার ইতিহাস চর্চা হতো আর্যদের আগমন এবং মৌর্য, পাল ও সেন সেনযুগ থেকে। আদিবাসী বলতে অনগ্রসর কোল- ভিল-সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে বুঝানো হতো। কিন্তু উয়ারি-বটেশ্বর বাংলার সমাজ-ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে বাধ্য করছে। এ জনপদে প্রাচীন সভ্যতার স্ফুরণ ঘটেছিল উয়ারি-বটেশ্বর থেকে আমরা সে প্রমাণই পাই।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *