বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের উপায়
দরিদ্র, জনবহুল বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে উর্ধ্বমুখী, ধাবমান করার লক্ষ্যে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ করা প্রয়োজন । কিন্তু বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদের পরিমাণ অত্যন্ত অপ্রতুল বিধায় বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। বৈদেশিক সাহায্যে কিছু দোষ-ত্রুটি থাকলেও তা স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করতে হয়। তবে নিজস্ব অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনতে হয়। বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের উপায়সমূহ নিম্নরূপ-
১. অভ্যন্তরীণ সম্পদের আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার : অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বৃদ্ধি, অপচয় রোধ, দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনে বিদেশে রপ্তানি করে দেশিয় আয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তৈল, চুনাপাথর, বনজ ও মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ সম্পদের আহরণ বৃদ্ধি এবং উত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে।
২. উন্নয়ন বান্ধব আমদানি ও রপ্তানি নীতি : দেশিয় শিল্পের প্রসার, বিদেশে বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশি মিশনগুলোকে অধিকতর সক্রিয় করার মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশী বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা, বাণিজ্য সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশ নেয়া প্রয়োজন ।
এছাড়া, বিদেশি বিলাস দ্রব্য বা কম গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশে উক্ত দ্রব্যের আমদানি বিকল্প দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দেশিয় শিল্প সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে।
৩. মুদ্রার অবমূল্যায়ন : বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন ঘাটতি বিদ্যমান। এ ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে আমদানি ব্যয় হ্রাস ও রপ্তানি আয় বাড়ানো প্রয়োজন। এ জন্য দেশিয় মুদ্রার মান ‘অবমূল্যায়ন' করা হলে রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে এরূপ ঘাটতি দূর হতে পারে। এর ফলে বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ হ্রাস পাবে ।
৪. অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় এবং উৎসব ব্যয় হ্রাস : পরনির্ভরশীলতা হ্রাস করার লক্ষ্যে অপ্রয়োজনীয় বিলাস দ্রব্যের অতিরঞ্জিত ব্যবহার রোধ, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বন্ধ এবং উৎসব ব্যয় যথাসম্ভব সংকোচন করা প্রয়োজন ।
৫. দেশিয় সঞ্চয়-বিনিয়োগ বৃদ্ধি : জনবহুল, কৃষিজ দ্রব্য অথবা প্রাথমিক পণ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী দেশের জনগণের স্বল্প আয়, স্বল্প সঞ্চয়, স্বল্প বিনিয়োগ দ্বারা পরনির্ভরশীলতা দূর করা কঠিন। এজন্য বাংলাদেশের মত এসব দেশের গ্রামে গঞ্জে জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে সমন্বিত করে দেশিয় সঞ্চয়-বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ।
এছাড়াও, দেশিয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিদেশি সাহায্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন । বেকার, অর্ধবেকার, ছদ্মবেকার জনগণকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মানব সম্পদ রপ্তানি করে দেশিয় আয় বৃদ্ধি করতে পারে। প্রয়োজনে বিদেশি কঠিন শর্তযুক্ত সাহায্য গ্রহণ না করে, বন্ধু রাষ্ট্র হতে শর্তহীন বা তুলনামূলক সহজ শর্তে ঋণ-সাহায্য গ্রহণ করা যেতে পারে। গৃহীত সাহায্যের ব্যবহার যেন যথাযথভাবে হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সর্বোপরি, দেশের জনগণের পরনির্ভরশীলতার মনোভাব পরিবর্তন করে স্বনির্ভর ধারায় রূপান্তর করতে পারলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions