প্রত্যক্ষ কর কি
প্রত্যক্ষ কর:
কোন ব্যক্তির উপর কর ধার্য করা হলে যদি সেই ব্যক্তিকেই করের আর্থিক ভার বহন করতে হয় তবে তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে। অর্থাৎ যে করের ক্ষেত্রে করের প্রাথমিক ভার ও চূড়ান্ত ভার একই ব্যক্তির উপর পড়ে তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে । আরো সংক্ষেপে বললে, যে করের করঘাত ও করপাত একই ব্যক্তির উপর আরোপিত হয় তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে। যেমন- আয়কর, মৃত্যুই কর, ভূমির রাজস্ব ইত্যাদি। এসকল ক্ষেত্রে যার উপর করা আরোপিত হয় তাকেই কর পরিশোধ করতে হয়। সে কোনভাবেই অন্যের উপর তার করের বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে না। এ জন্য এ করকে প্রত্যক্ষ কর বা Direct Tax বলা হয়।
প্রত্যক্ষ করের সুবিধা
প্রত্যক্ষ কর সরকার কর্তৃক সংগৃহীত হয়। এ করের সুবিধা সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. ন্যায়ভিত্তিক : প্রত্যক্ষ কর সততা ও ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। নাগরিকগণের আয়ের পরিমান এবং কর প্রদান সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে প্রত্যক্ষ কর ধার্য করা হয়। ফলে করভার বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায়নীতি অনুসরণ করা হয় ।
২. নিশ্চয়তা : প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে করদাতা কর প্রদানের পূর্বেই জানতে পারে যে কখন এবং কি পরিমান কর তাকে পরিশোধ করতে হবে। আবার সরকারও পূর্বেই জানতে পারে কোন উৎস হতে কি পরিমাণ রাজস্ব পেতে পারে। তাই প্রত্যক্ষ করের করদাতা ও কর গ্রহীতা কর সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে বলে প্রত্যক্ষ কর নিশ্চয়তার নীতি মেনে চলে।
৩. মিতব্যয়িতা : প্রত্যক্ষ কর আদায় করতে সরকারের খরচ কম হয়। কারণ সরকার করদাতার কাছ থেকে সরাসরি কর আদায় করে । যেমন-আয়কর, কাজেই প্রত্যক্ষ কর আদায়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা লক্ষ্য করা যায় ।
৪. স্থিতিস্থাপক : প্রত্যক্ষ কর স্থিতিস্থাপক। কারণ প্রয়োজন অনুযায়ী করের পরিমান হ্রাস-বৃদ্ধি করা সম্ভব।
৫. উৎপাদনশীল : প্রত্যক্ষ করের হার পরিবর্তন করে এবং ধনী ব্যক্তির উপর অধিক হারে কর ধার্য করে অধিক রাজস্ব আদায় করা যায়। বলা যায় যে, প্রত্যক্ষ কর উৎপাদনশীল।
৬. নাগরিক চেতনা : প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে একজন নাগরিক নিজে কর প্রদান করে। এতে সে বুঝতে পারে যে, দেশের উন্নয়নে সরকার যে ব্যয় করে তাতে তার অংশগ্রহণ আছে। তাই বলা যায়, প্রত্যক্ষ কর নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি করে।
প্রত্যক্ষ করের অসুবিধা
১. অপ্রিয় : প্রত্যক্ষ কর সরাসরি করদাতার পকেট থেকে দিতে হয়। তাই এটি অপ্রিয়। কেউ তার পকেট থেকে সুবিধা প্রত্যাশা ছাড়া অর্থ ব্যয় করতে চায় না । কিন্তু প্রত্যক্ষ কর বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয়।
২. কর ফাঁকি : একজন করদাতা ইচ্ছা করে ভুল তথ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ কর ফাঁকি দিতে পারে। এতে কর ব্যবস্থাপনায় দূর্নীতির প্রসার ঘটতে পারে। তাই ব্যক্তির সততা না থাকলে প্রত্যক্ষ কর ফাঁকি দেয়া সহজ।
৩. স্বেচ্ছাচারিতা : প্রত্যক্ষ করা বিভিন্ন লোকের উপর বিভিন্ন হারে বসানো হয়। এই হার নির্ধারনের কোন বৈজ্ঞানিক মাপকাঠি নাই। করের হার ব্যক্তির সামার্থ্যের সাথে সামাজ্ঞস্যপূর্ণ করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক সময় ন্যায়নীতি উপেক্ষা করে করা নির্ধারন করা হয়।
৪. সঞ্চয় প্রবণতা হ্রাস : করের হার বেশী হলে প্রত্যক্ষ করদাতাদের কর্মোদ্যম হ্রাস পায়। এতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা হ্রাস পায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions