কর কি
কর হলো জনসাধারণের বাধ্যতামূলক প্রদেয় অর্থ। জনগণ সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে যে অর্থ প্রদান করে তাকে কর বলে। সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকার বিভিন্ন উৎস হতে রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আয় যে উৎস হতে আসে তা হলো কর, একটি দেশের নাগরিকগণ তাদের আয়ের একটি অংশ কর হিসেবে সরকারকে প্রদান করে। তাই কোনরূপ প্রত্যক্ষ সুবিধা প্রত্যাশা ব্যতিরেকে একটি দেশের জনগণ সরকারি ব্যয় নির্বাহের স্বার্থে সরকারকে বাধ্যতামূলক ভাবে যে অর্থ প্রদান করে তাই কর।
করের উদ্দেশ্য :
একটি অর্থনীতিকে পরিচালনার জন্য সরকার প্রধানত কর থেকে বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থায়ন করে। এসব ব্যয়ের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি খাত। স্বাভাবিকভাবে জনগণ সরকারকে কর প্রদান করে কোনরূপ প্রত্যক্ষ সুবিধা প্রত্যাশা না করে। তবে পরোক্ষভাবে জনগণ বহু সুবিধা ভোগ করে থাকে। সঠিক ভাবে কর আদায় করে জনগনের কল্যানে ব্যয় করাই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য।
করের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ :
১. রাজস্ব সংগ্রহ : রাজস্ব সংগ্রহ করাই কর ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য। সরকার প্রতিবছর বাজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে কি পরিমান রাজস্ব কোন কোন খাত হতে সংগৃহীত হবে। দেশের অভ্যন্তরীন শান্তিশৃংখলা রক্ষা, বিভিন্ন জনকল্যানমূলক কাজে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজনীয় অর্থের সিংহভাগ আসে কর হতে।
২. কাম্য উৎপাদন বজায় রাখা : একটি দেশের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী যাতে বিদেশী প্রতিযোগিতার সম্মুখীন না হয় সে দিকে খেয়াল রাখে সরকার। যদি বিদেশী কোন পণ্য সস্তায় দেশের অভ্যন্তরে সহজলভ্য হয় তবে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দেশীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য প্রতিযোগী দ্রব্যের আমদানীর উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করা হয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে আমদানীকৃত দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যায় এবং দেশীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এভাবে উৎপাদন কাম্য স্তরে রাখা যায়।
৩. ক্ষতিকারক দ্রব্যের ভোগ নিয়ন্ত্রন : সরকার বিভিন্ন ক্ষতিকারক দ্রব্য যেমন-মদ, আফিম, বিয়ার ইত্যাদির উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করে এগুলোর ব্যবহার নিরুৎসাহিত তথা নিয়ন্ত্রন করে থাকে ।
৪. আয়ের সুষম বণ্টন : কর হচ্ছে সরকারের রাজস্বনীতির অন্যতম হাতিয়ার। এর মাধ্যমে দেশে বিরাজমান আয় বৈষম্য দূরীকরণ করা সম্ভব। ধনীদের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করে এই বৈষম্য দূর করা যায়।
৫. দামস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা : অর্থনীতিতে বানিজ্যচক্রের ফলে অনেক সময় মন্দা দেখা দেয়। তখন পণ্যের মূল্য পরিবর্তিত হলে সরকার প্রয়োজনে ভর্তুকী প্রদান ও কর আরোপ করে দ্রব্যের দাম পুনরায় ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনতে পারে ।
৬. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন : সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অপরিহার্য। সরকার সঠিক কর নীতি তথা রাজস্বনীতি প্রয়োগ করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে পারে যার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
কাজেই করের উদ্দেশ্য মূলত দেশের জনগনের কল্যানের জন্য। জনগনের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কর আরোপ করে থাকে ।
করের শ্রেণীবিভাগ
কর বোঝার উপর ভিত্তি করে করকে দুইভাগে ভাগ করা হয়:
১. প্রত্যক্ষ কর
২. পরোক্ষ কর
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions