Home » » যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা ও প্রকৃতি

যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা ও প্রকৃতি

যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা ও প্রকৃতি

যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রকৃতি

(Nature of Logical Definition)

যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, যুক্তিবিদ্যা যুক্তিপদ্ধতি বা অনুমান ছাড়াও কতকগুলো সহায়ক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে, যে প্রক্রিয়াগুলো যুক্তি বা অনুমান গঠনে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে । যৌক্তিক সংজ্ঞা এ প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । সাধারণত কোনো পদের অর্থ ও তাৎপর্য সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্যই তার সংজ্ঞা প্রদান করা হয় । যৌক্তিক সংজ্ঞা আমাদেরকে একটি জিনিস আসলে কী এবং কী নয় তা বুঝতে সহায়তা করে । এটি মূলত একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া । কেননা এর সাহায্যে একটি পদের পরিপূর্ণ জাত্যর্থ প্রকাশ করে তার বিজ্ঞানসম্মত রূপ ও প্রকৃত অর্থ নির্ণয় করা হয় । উল্লেখ্য, কোনো পদের প্রকৃত অর্থ কেবল যৌক্তিক সংজ্ঞার সাহায্যেই প্রকাশ করা সম্ভব । এ প্রসঙ্গে এল. এস. স্টেবিং (L.S. Stebbing) তাঁর Introduction to Logic বইয়ে বলেন, “সংজ্ঞা হলো একটি শব্দের অর্থ বোঝার একমাত্র উপায়” (“Definition is only one of the means through which we come to understand words. " 1942, P. 422) আবার যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুক্তিবিদ হাওয়ার্ড কাহেনও প্রায় একই কথা বলেছেন । তিনি তাঁর Logic and Philosophy গ্রন্থে বলেন, “একটি সংজ্ঞা হলো একটি শব্দ (বা শব্দ সমষ্টির) অর্থ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা।” (“A definition is an explanation of the meaning of a word ( or phrase)." P. 176) । 

যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রকৃতি সম্পর্কিত এ আলোচনা থেকে আমরা নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ উল্লেখ করতে পারি:

১ । যৌক্তিক সংজ্ঞা সব সময়ই একটি পদ বিষয়ক প্রক্রিয়া । কারণ পদকে কেন্দ্র করেই এর আলোচনা আবর্তিত ।

২ । যৌক্তিক সংজ্ঞা হচ্ছে জাত্যর্থের একটি পরিপূর্ণ বর্ণনা । কারণ কোনো পদের অর্থ সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করার একমাত্র উপায় হলো এর জাত্যর্থকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা। জাত্যর্থ বলতে বোঝায় পদের সাধারণ ও অনিবার্য গুণসমূহকে যা ঐ পদের অন্তর্গত সকল সদস্যের মধ্যে বিদ্যমান থাকে ।

৩ । যৌক্তিক সংজ্ঞা কেবলমাত্র শ্রেণিবাচক পদের ক্ষেত্রেই সম্ভব । সকল পদের ক্ষেত্রে এটি প্রজোয্য নয়। কেবল শ্রেণিবাচক পদকেই সংজ্ঞায়িত করা যায়, ব্যক্তিবাচক পদের বা বিশিষ্ট বস্তুর সংজ্ঞা দেয়া যায় না । কারণ ব্যক্তিবাচক পদের বা বিশিষ্ট বস্তুর অসংখ্য বৈশিষ্ট্য থাকে ।

8। যৌক্তিক সংজ্ঞার দু'টি দিক রয়েছে । যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করলে এর মধ্যে দু'টি দিক লক্ষ্য করা যায় । যথা- সংজ্ঞেয় (Definiendum) ও সংজ্ঞার্থ (Definiens) যে পদটির সংজ্ঞা প্রদান করা হয় তাকে ‘সংজ্ঞেয়' বলে এবং যে সব শব্দ ব্যবহার করে পদটির সংজ্ঞা নির্ণয় করা হয় তাকে ‘সংজ্ঞার্থ' বলে । যেমন, মানুষ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয় “মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব” । এখানে 'মানুষ' পদটি হচ্ছে সংজ্ঞেয় । আর ‘বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব'- এ শব্দগুচ্ছ হলো সংজ্ঞার্থ ।

৬। যৌক্তিক সংজ্ঞা সব সময় একটি সমীকরণ নির্দেশ করে । অর্থাৎ সংজ্ঞেয় ও সংজ্ঞার্থ - এ দু'য়ের ব্যক্তর্থ সব সময় সমান হয়। যেমন, সংজ্ঞেয় = ‘মানুষ' এবং সংজ্ঞার্থ = ‘বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব' এদের উভয়ই একই পরিমাণ ব্যক্তর্থ প্রকাশ করে । কারণ ‘মানুষ' বলতে যা বোঝায়, ‘বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব' বলতেও তাই বোঝায় । আর এ কারণেই বলা হয়, সংজ্ঞেয় = সংজ্ঞার্থ ।

৬ । যৌক্তিক সংজ্ঞা কেবল জাত্যর্থক পদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, অজাত্যর্থক পদের সংজ্ঞা দেয়া যায় না । কারণ কোনো অজাত্যর্থক পদকে তার আসন্নতম জাতি (proximate genus) ও বিভেদক লক্ষণ (differentia) - এ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না । উল্লেখ্য কোনো উপজাতির সবচেয়ে নিকটবর্তী জাতিকে বলা হয় আসন্নতম জাতি । আর যে গুণের জন্য একই জাতির অন্তর্ভুক্ত একটি উপজাতি তার সমজাতীয় অন্যান্য উপজাতি থেকে পৃথক তাকে ঐ উপজাতির লক্ষণ বা বিভেদক লক্ষণ বলে ।

৭ । যৌক্তিক সংজ্ঞা হচ্ছে কোনো শব্দ বা পদের ভাষাগত অর্থ সম্পর্কিত বিবরণ । এ বিবরণের সাহায্যে একটি পদের মূল বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় ।


যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা

(Relevance of Logical Definition)

আপনাদের অবগতির জন্য পূর্বেই বলা হয়েছে যে, অনুমান তথা যৌক্তিক চিন্তা পদ্ধতি নির্ভুল ও সুসংগত হওয়ার জন্য যুক্তিবিদ্যায় কিছু সহায়ক বা আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন । এ সহায়ক বা আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে যৌক্তিক সংজ্ঞা অন্যতম । কারণ যৌক্তিক সংজ্ঞা পদের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য নির্ণয়ের মাধ্যমে জাত্যর্থ সম্পর্কিত জ্ঞান স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল করতে সাহায্য করে । অর্থাৎ যৌক্তিক সংজ্ঞার সাহায্যে শব্দ বা পদের অর্থ ও তাৎপর্য সঠিকরূপে উপলব্দি করা যায় । তাই যুক্তিবিদ্যার আলোচনায় যৌক্তিক সংজ্ঞার অবতারণা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক । এর প্রাসঙ্গিকতার দিকসমূহ নিম্নরূপ :

১ । কোনো যুক্তিতে যুক্তিবাক্যের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত পদসমূহের সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট অর্থ জানা না থাকলে সেই যুক্তির প্রয়োগ যথার্থ হয় না । তাই যুক্তির যথার্থ প্রয়োগের জন্য যৌক্তিক সংজ্ঞার আলোচনা যুক্তিবিদ্যায় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।

২। অনেক ক্ষেত্রে পদের অর্থ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করি । ফলে পদের প্রকৃত অর্থ প্রকাশিত হয় না । কিন্তু যৌক্তিক সংজ্ঞা প্রয়োগ করলে পদের অর্থ স্পষ্ট ও বোধগোম্য হয় ।

৩ । যৌক্তিক সংজ্ঞার সাহায্যে নতুন নতুন শব্দের সাথে আমাদের উত্তরোত্তর পরিচয় ঘটে । আর এভাবেই যৌক্তিক সংজ্ঞা আমাদেরকে শব্দের সঞ্চয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।

8। যৌক্তিক সংজ্ঞা দুর্বোধ্য বিষয়কে সুবোধ্য করে, জটিল বিষয়কে সরল করে এবং কঠিন বিষয়কে সহজ করে । তাই যুক্তিবিদ্যায় ব্যবহৃত দুর্বোধ্য, জটিল ও কঠিন বিষয়সমূহকে ব্যাখ্যর ক্ষেত্রে যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে ।

৫ ৷ যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বারা যুক্তিবিদ্যায় ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ ও শব্দের দ্ব্যর্থকতা দূর করা যায় ।

৬ । যৌক্তিক সংজ্ঞা একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া বলে এর সাহায্যে মানব মনের বিভিন্ন বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার দূর করা যায় ।

৭। যুক্তি গঠনের ক্ষেত্রে এর সহায়ক বিষয়াবলির, যেমন- পদ, যুক্তিবাক্য, সংযোজক, অনুমান ইত্যাদি ধারণার প্রাঞ্জলতার ক্ষেত্রে যৌক্তিক সংজ্ঞা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।

সুতরাং যুক্তিবিদ্যার আলোচনায় যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য। তবে এটি যে কেবলমাত্র যুক্তিবিদ্যার আলোচনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়, বিভিন্ন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এটি খুবই প্রয়োজন। অর্থাৎ যুক্তিবিদ্যার ন্যায় বৈজ্ঞানিক আলোচনা, অনুসন্ধান ও গবেষণার ক্ষেত্রেও যৌক্তিক সংজ্ঞা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয় ।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *