মেধাস্বত্ব কি বা মেধাস্বত্ব অধিকার কি
মেধাসত্ত্ব (Intellectual Property Rights )
তথ্য ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ কিছু অধিকারের সমষ্টিগত নাম হলো মেধাসত্ত্ব বা কপিরাইট (Copyright) যা একটি আইনি ধারণা। সাধারণত কোন দেশের সরকার এই ধারণাটির বাস্তবায়ন করে। শাব্দিক অর্থে এটি কোন মৌলিক সৃষ্টির ‘অনুলিপি তৈরির অধিকার' বুঝায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অধিকারগুলো সীমিত মেয়াদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কপিরাইটের চিহ্ন হল এবং কিছু কিছু স্থানে বা আইনের এখতিয়ারে এটার বিকল্প হিসেবে (c) বা (C) লেখা হয় ।
কপিরাইট সম্পদ দু'ধরনের- বস্তুগত সম্পদ এবং মেধাসম্পদ। কপিরাইট আইন আছে মেধাসম্পদের জন্য। মেধাসম্পদের আওতায় আছে— গবেষণাকর্ম, সাহিত্যকর্ম, নাট্যকর্ম, শিল্পকর্ম, সঙ্গীতকর্ম, অডিও-ভিডিওকর্ম, চলচ্চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফি, ভাস্কর্যকর্ম, সম্প্রচারকর্ম, রেকর্ডকর্ম, সফ্টওয়্যার, ই-মেইল, ওয়েবসাইট, বেতার ও টেলিভিশন সম্প্রচারকর্ম ইত্যাদি। প্রতিটি সৃজনশীল মেধাকর্ম কপিরাইট আইনে গ্রন্থস্বত্ত্ব বা লেখস্বত্ত্ব দ্বারা রক্ষিত। মেধাস্বত্ত্ব আইন শুধুমাত্র ঠিক কী উপায়ে বা কী রূপে ধারণাসমূহ (আইডিয়া) অথবা তথ্য পরিবেশিত হবে সেটা বিবেচনা করে। এটা মেধাস্বত্ত্ব সংরক্ষিত কাজের মূল ধারণা, মূলনীতি (কনসেপ্ট), সত্য (ফ্যাক্ট), ধরন (স্টাইল) অথবা পদ্ধতিটিকে আওতাভুক্ত করে না বা করার চেষ্টা করে না। কিছু কিছু এখতিয়ারে, মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত কাজের বিদ্রুপাত্মক বা ব্যাখ্যামূলক কাজ প্রকাশেরও উপায় থাকে। ট্রেডমার্ক এবং পেটেন্টের মত অন্যান্য আইনের ধারা পুনঃপ্রকাশ বা পুনঃউৎপাদন কিংবা ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, যেটা মেধাস্বত্ত্ব আইন করে না। মেধা সম্পদের ক্ষেত্রে মূল হুমকি হলো পাইরেসি ( Piracy), যার মানে মেধাস্বত্ত্ব চুরি। এখন দেশি-বিদেশি গ্রন্থ, চলচ্চিত্র, সংগীত ও কম্পিউটার সফ্টওয়্যার ইত্যাদি ব্যাপকভাবে পাইরেসি হয়।
মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ এড়ানোর জন্য কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না হলেও জরুরি। বাংলাদেশে কপিরাইট আইন মোতাবেক কপিরাইট সংক্রান্ত ফটোগ্রাফ, রেকর্ডিং এবং চলচ্চিত্র ব্যতীত কর্মের মেয়াদ কপিরাইট প্রণেতার মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে। বাংলাদেশের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়াদি কপিরাইট আইন- ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) দ্বারা পরিচালিত। বাংলাদেশ WIPO এর সদস্য দেশ হিসেবে বার্ন কনভেনশন, ইউনির্ভাসেল কপিরাইট কনভেনশন (UCC) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) সদস্য হওয়ার কারণে এতদসংক্রান্ত TRIPS (Trade Related Aspects of Intellectual Property Rights) চুক্তিসহ কপিরাইট সংক্রান্ত সকল শর্ত মেনে চলতে বাধ্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কপিরাইটের গুরুত্ব অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের কপিরাইট আইন- ২০০০ প্রণয়ন করা হয় এবং এ আইনটি যুগোপোযোগীকরণের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে সংশোধন করা হয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ কপিরাইট ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে কপিরাইট আইনের ১০৩ ধারার বিধান মতে কপিরাইট রুলস- ২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে কপিরাইট আইন বাস্তবায়ন ও পাইরেসি বন্ধের চাপ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে কপিরাইট-এর অবস্থা নাজুক। কপিরাইট আইনে বুদ্ধিবৃত্তিক তস্কর্য রোধে কার্যকর আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ সীমিতই রয়ে গেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions