Home » » সামাজিক আইন কি

সামাজিক আইন কি

সামাজিক আইন কি

সামাজিক আইন বলতে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত এমন সব বিধিবিধানকে বোঝায় যা সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত শ্রেণি বিশেষ করে শারীরিকভাবে অক্ষম, দরিদ্র, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধা বঞ্চিতদের অধিকার সংরক্ষণ করে এবং সমাজের বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার ও কুপ্রথা দূর করে সমাজকে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দিকে ধাবিত করে।

Dictionary of Social Welfare (১৯৪৮) এ বলা হয়েছে, “সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ ও কল্যাণের জন্য অথবা সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সুবিধা কম থাকার কারণে সন্তোষজনক জীবনযাপনে অক্ষম, তাদের প্রয়োজনসমূহ পূরণে কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে প্রবর্তিত আইন হলো সামাজিক আইন।”

D. Paul Chowdhury (১৯৭৯) তাঁর “Social Administration” গ্রন্থে বলেন, “সামাজিক আইন সমাজের অবস্থার উন্নয়ন ও বৈরি অবস্থান সমূহ প্রতিরোধ কল্পে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানাদির সংস্কার সাধনে প্রয়োগ করা হয় (Social legislation tries to bring about reform in the working of social institutions and enables action to prevent social ill-health and preserve and promote social health.) " মোঃ আলী আকবরের মতে, “সামাজিক আইন সরকারের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার জন্য সামাজিক প্রগতি সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে, যাতে সামাজিক লক্ষ্য নির্ধারণ অথবা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব উপাদান বাধা সৃষ্টি করে তা দূর হয়।” Robert L. Barker (১৯৯৫) তাঁর “Dictionary of Social Work” উল্লেখ করেন, “সামাজিক আইন হলো মানবকল্যাণের আবশ্যকীয় প্রয়োজনসমূহ, আয়-নিরাপত্তা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, নাগরিক অধিকার, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য গৃহীত কর্মসূচি পরিচালনা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত আইনসমূহ (Social legislation, laws and resource allocation providing for human welfare needs, income security, education and cultural progress, civil rights, consumer protection and programs that address social problems.) "

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে সামাজিক আইন হলো, রাষ্ট্র কর্তৃক প্রবর্তিত এমন সকল বিধিবিধান যা বিশেষ করে দুর্বল, অসহায় ও অবহেলিত গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ ও সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানসহ সমাজজীবনের ক্ষতিকর অবস্থা নিরসন করে একটি সুস্থ, সুন্দর ও উন্নত সমাজ গঠনে সাহায্য করে।


 সামাজিক আইনের উদ্দেশ্য (Objectives of Social Legislation )

সমাজজীবনের কল্যাণ, উন্নয়ন এবং সুস্থতা বর্ধন সামাজিক আইনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সমাজের যেসকল মানুষ পশ্চাৎপদ তাদেরকে উন্নয়নের গতিধারায় আনয়ন, সমস্যা মুক্তকরণ এবং সামাজিক প্রয়োজন পূরণ করাই হলো সামাজিক আইনের উদ্দেশ্য।

মোঃ আলী আকবর (১৯৬৫) তাঁর “Elements of Social Welfare” গ্রন্থে সামাজিক আইনের নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। যেমন- ক) সমাজ নিয়ন্ত্রণ; খ) সমাজসংস্কার ও পরিকল্পিত পরিবর্তন; গ) সামাজিক স্থিতিশীলতা ও ঐক্যবদ্ধতা; ঘ) মূল্যবোধ ও জীবনমানের দ্বন্দ্ব নিরসন; ঙ) সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ; চ) সামাজিক সুবিচার ও সমতা; এবং ছ) সেবা সম্প্রসারণ ও সামঞ্জস্য বিধানের কর্মপন্থা গ্রহণ ।

ডি. পল চৌধুরীর মতে, সামাজিক আইনের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো সমাজের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবাঞ্ছিত অবস্থা নিরসন, জনকল্যাণ ও প্রগতি অর্জন এবং আইনের মাধ্যমে মানবাধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা।

সমাজ জীবন থেকে অবাঞ্ছিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ও কুপ্রথা নিরসনকল্পে এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক আইন প্রণীত হয়েছে। বহু প্রাচীন প্রথা যেমন- দাসপ্রথা, সতীদাহপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতির প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষণে সামাজিক আইন প্রণীত হয়েছে। আবার সামাজিক আইনের মাধ্যমে সমাজের নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, যুব, প্রবীণ কল্যাণসহ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া সামাজিক আইনের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অনাচার ও কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করা হয়।

সামাজিক আইন সমাজ থেকে সকল প্রকার অবাঞ্ছিত ও অনাকাঙ্খিত অবস্থা দূর করে সামাজিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। সমাজের সকল সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধের মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে সামজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে ।

এ প্রসঙ্গে এম. আব্দুল হালিম বলেন, অধিকতর কার্যকরভাবে সমাজ কল্যাণমূলক আইন অসুবিধাগ্রস্থদের প্রতিরোধমূলক, সমাজসেবামূলক এবং জীবনমান সংরক্ষণে সামাজিক নীতিকে রুপান্তর ঘটিয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো উন্নত জীবন মান সৃষ্টি করা ।


সামাজিক আইনের গুরুত্ব (Importance of Social Legislation)

সামাজিক আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সুনিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত সমাজকাঠামো গঠন করে সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির ন্যায়সংগত অধিকার সংরক্ষণ এবং বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাঝে নিহিত। প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা; সামাজিক অনাচার, কুপ্রথা ও কুসংস্কার দূরীকরণ; অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ, শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে সামাজিক আইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সামাজিক আইনের মাধ্যমে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, নারী, শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা কোনো কারণে উপার্জন করতে অক্ষম নির্ভরশীল ব্যক্তিদের ন্যায়সংগত অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

Encyclopedia of Social Work in India (vol. II, 1968) গ্রন্থে বলা হয়েছে- সামাজিক আইন মানবসমাজের ব্যাপক এলাকায় ব্যাপৃত যেমন- মানব সমাজের বহুমুখী চাহিদা নিরসনে বিভিন্ন আইন কাজ করে। এ আইনগুলোর অন্তর্ভুক্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক যেমন- বিবাহ, পঙ্গু ব্যক্তি এবং সংখ্যালঘু বা ক্ষমতাহীন গোষ্ঠী; সামাজিক ব্যাধি কেন্দ্রিক কিছু সংস্কারমূলক ব্যবস্থা যেমন ভবঘুরে, কিশোর অপরাধ, ভিক্ষাবৃত্তি এবং কিছু আইন রয়েছে যা সামাজিক নিরাপত্তা কেন্দ্রিক।

সামাজিক আইন সমাজ উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গণ্য হয়। সামাজিক আইন সামাজিক চাহিদাসমূহ পূরণ এবং সামাজিক সমস্যাবলী মোকাবিলার মাধ্যমে একটি উন্নত ও কল্যাণমুখী সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখে। এছাড়া সামাজিক নীতি প্রণয়ন, কার্যকর মানবকল্যাণ এবং সমাজ কাঠামোর সম্পর্ক উন্নয়নে সামাজিক আইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক আইন সমাজের অনাকাঙ্খিত অবস্থা দূর করে সমাজের বাঞ্ছিত পরিবর্তন বা সমাজ সংস্কার করে থাকে। সমাজে যেসকল ক্ষতিকর প্রথা বা অবস্থা থাকে তা দূর করে একটি কল্যাণমুখী ও সুস্থ সমাজ গঠন শুধু সামাজিক আইনের মাধ্যমেই সম্ভব।

পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক আইন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, কুপ্রথা ও কুসংস্কার দূর করে সমাজের বাঞ্ছিত পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি কাঙ্খিত ও উন্নত সমাজ গঠনে সামাজিক আইনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *