Home » » কিভাবে কম্পিউটার ফাস্ট করা যায়?

কিভাবে কম্পিউটার ফাস্ট করা যায়?

কিভাবে কম্পিউটার ফাস্ট করা যায়?

কম্পিউটার ধীরগতিতে কাজ করলে সেটি বিরক্তিকর হতে পারে এবং কাজের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। তবে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনি আপনার কম্পিউটারের গতি বৃদ্ধি করতে পারেন। নিম্নে কিছু প্রধান উপায় উল্লেখ করা হলো যেগুলি অনুসরণ করে আপনি কম্পিউটারের গতি বাড়াতে পারবেন।

১. সিস্টেমের হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করুন

র‍্যাম (RAM) আপগ্রেড করুন

  • র‍্যাম বাড়ানো: র‍্যাম হলো কম্পিউটারের অস্থায়ী মেমরি যা কম্পিউটার পরিচালনার সময় বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও ডেটা সংরক্ষণ করে। অধিক র‍্যাম থাকা মানে কম্পিউটার একই সময়ে বেশি কাজ করতে পারে।
  • অপ্টিমাল র‍্যাম: কম্পিউটারের মডেল ও ব্যবহারের উপর নির্ভর করে র‍্যামের পরিমাণ নির্ধারণ করুন। সাধারণত ৮ জিবি থেকে ১৬ জিবি র‍্যাম অধিকাংশ কাজের জন্য যথেষ্ট।

SSD (Solid State Drive) ইনস্টল করুন

  • SSD এর গতি: হার্ড ড্রাইভের তুলনায় SSD অনেক দ্রুত কাজ করে। এতে আপনার অপারেটিং সিস্টেম ও প্রোগ্রামগুলো দ্রুত লোড হয়।
  • SSD ইনস্টলেশন: আপনার পুরনো হার্ড ড্রাইভ পরিবর্তন করে SSD ইনস্টল করুন। এটি খুব সহজে আপনার কম্পিউটারের পারফরমেন্সকে উন্নত করবে।

২. অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার আপডেট রাখুন

অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করুন

  • নিয়মিত আপডেট: অপারেটিং সিস্টেমের আপডেটগুলো সাধারণত বিভিন্ন বাগ ফিক্স ও পারফরমেন্স ইম্প্রুভমেন্ট নিয়ে আসে। তাই নিয়মিত আপনার অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করুন।
  • স্বয়ংক্রিয় আপডেট: অপারেটিং সিস্টেমের স্বয়ংক্রিয় আপডেট ফিচার চালু রাখুন যাতে আপনি সবসময় সর্বশেষ সংস্করণে থাকতে পারেন।

সফটওয়্যার আপডেট রাখুন

  • প্রোগ্রাম আপডেট: বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রোগ্রামের আপডেট তাদের কার্যকারিতা ও পারফরমেন্স বৃদ্ধি করে। নিয়মিত আপনার সফটওয়্যার প্রোগ্রাম আপডেট রাখুন।
  • আনইন্সটল অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার: আপনার কম্পিউটারে যে সব সফটওয়্যার আপনি ব্যবহার করেন না, সেগুলি আনইন্সটল করুন। এটি কম্পিউটারের স্পেস ও পারফরমেন্স বাড়াতে সাহায্য করে।

৩. ডিস্ক ক্লিনআপ ও ডিফ্র্যাগমেন্টেশন

ডিস্ক ক্লিনআপ

  • অপ্রয়োজনীয় ফাইল রিমুভ: ডিস্ক ক্লিনআপ টুল ব্যবহার করে আপনার কম্পিউটারের অপ্রয়োজনীয় ফাইল, ক্যাশে, টেম্পোরারি ফাইল এবং অন্যান্য জাঙ্ক ফাইল মুছে ফেলুন।
  • স্পেস মুক্ত করুন: ডিস্ক ক্লিনআপের মাধ্যমে আপনি হার্ড ডিস্কের স্পেস মুক্ত করতে পারবেন যা কম্পিউটারের গতি বাড়াবে।

ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্টেশন

  • ফাইল অর্গানাইজেশন: হার্ড ডিস্ক ড্রাইভের ফাইল গুলি পুনরায় অর্গানাইজ করে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্টেশন করতে হবে। এটি ফাইল অ্যাক্সেস টাইম কমিয়ে কম্পিউটারের গতি বাড়ায়।
  • ডিফ্র্যাগমেন্টেশন টুল: উইন্ডোজের বিল্ট-ইন ডিফ্র্যাগমেন্টেশন টুল ব্যবহার করে সহজেই এটি করতে পারবেন।

৪. স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ

স্টার্টআপ প্রোগ্রাম অপটিমাইজেশন

  • প্রোগ্রাম ডিসেবল: কম্পিউটার চালু হওয়ার সময় অনেক প্রোগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয় যা কম্পিউটারের বুট টাইম কমিয়ে দেয়। স্টার্টআপ প্রোগ্রাম ম্যানেজার ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামগুলি ডিসেবল করুন।
  • স্টার্টআপ টাস্ক ম্যানেজার: উইন্ডোজ টাস্ক ম্যানেজারের স্টার্টআপ ট্যাব থেকে আপনি সহজেই স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৫. ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার স্ক্যান করুন

অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার

  • ভাইরাস স্ক্যান: ভালো মানের অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিয়মিত আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস স্ক্যান করুন। ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয়।
  • রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন: অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারের রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন ফিচার চালু রাখুন যাতে নতুন ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে না পারে।

৬. ব্রাউজার অপটিমাইজ করুন

ব্রাউজার ক্লিনআপ

  • ব্রাউজার ক্যাশে ক্লিন: আপনার ওয়েব ব্রাউজারের ক্যাশে ও কুকিজ ক্লিন করুন। এটি ব্রাউজারের পারফরমেন্স বাড়াবে।
  • অপ্রয়োজনীয় এক্সটেনশন রিমুভ: ব্রাউজারের অপ্রয়োজনীয় এক্সটেনশন বা অ্যাড-অন গুলি আনইন্সটল করুন।

৭. ভার্চুয়াল মেমরি সেটিংস পরিবর্তন

পেজ ফাইল সাইজ অপটিমাইজেশন

  • পেজ ফাইল সাইজ: ভার্চুয়াল মেমরি বা পেজ ফাইল সাইজ অপটিমাইজ করুন। এটি কম্পিউটারের পারফরমেন্স বাড়াতে সাহায্য করে।
  • অপটিমাল সেটিংস: আপনার কম্পিউটারের র‍্যামের পরিমাণ অনুযায়ী পেজ ফাইল সাইজ সেট করুন।

৮. পাওয়ার সেটিংস পরিবর্তন

হাই পারফরমেন্স মোড

  • পাওয়ার প্ল্যান: কম্পিউটারের পাওয়ার প্ল্যান পরিবর্তন করে হাই পারফরমেন্স মোড নির্বাচন করুন। এটি কম্পিউটারের সিপিইউ ও অন্যান্য হার্ডওয়্যারের গতি বাড়াবে।
  • ব্যাটারি সেভার মোড: ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ব্যাটারি সেভার মোড এড়িয়ে চলুন। এটি কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয়।

৯. অপ্রয়োজনীয় ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বন্ধ করুন

ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস অপটিমাইজেশন

  • অ্যানিমেশন বন্ধ করুন: উইন্ডোজের অপ্রয়োজনীয় অ্যানিমেশন ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বন্ধ করুন। এটি কম্পিউটারের গতি বাড়াবে।
  • পারফরমেন্স প্রেফারেন্স: ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস সেটিংসে "Adjust for best performance" অপশন নির্বাচন করুন।

১০. রেজিস্ট্রি ক্লিনআপ

রেজিস্ট্রি অপটিমাইজেশন

  • রেজিস্ট্রি ক্লিনার ব্যবহার: ভালো মানের রেজিস্ট্রি ক্লিনার সফটওয়্যার ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি ক্লিন করুন। এটি কম্পিউটারের গতি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • রেজিস্ট্রি ব্যাকআপ: রেজিস্ট্রি ক্লিন করার পূর্বে ব্যাকআপ তৈরি করুন যাতে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন।

১১. ডিস্ক স্পেস ম্যানেজমেন্ট

বড় ফাইল ও ডেটা ক্লিনআপ

  • বড় ফাইল মুছে ফেলুন: হার্ড ড্রাইভে বড় ফাইল ও অপ্রয়োজনীয় ডেটা মুছে ফেলুন। এটি কম্পিউটারের স্পেস বাড়াবে এবং গতি বৃদ্ধি করবে।
  • ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার: বড় ফাইল ও ডেটা ক্লাউড স্টোরেজে সংরক্ষণ করুন। এটি হার্ড ডিস্কের স্পেস মুক্ত রাখবে।

১২. অপ্রয়োজনীয় সার্ভিসেস বন্ধ করুন

উইন্ডোজ সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট

  • অপ্রয়োজনীয় সার্ভিসেস ডিসেবল: উইন্ডোজ সার্ভিসেস টুল ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় সার্ভিসেস ডিসেবল করুন। এটি কম্পিউটারের রিসোর্স ব্যবহারে সাহায্য করবে।
  • সার্ভিসেস অপটিমাইজেশন: সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট কনসোল থেকে প্রয়োজনীয় সার্ভিসেস শুধুমাত্র চালু রাখুন।

১৩. থার্মাল ম্যানেজমেন্ট

কম্পিউটার কুলিং

  • কুলিং প্যাড ব্যবহার: ল্যাপটপের জন্য কুলিং প্যাড ব্যবহার করুন। এটি কম্পিউটারকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
  • থার্মাল পেস্ট: সিপিইউ ও জিপিইউ এর উপর নতুন থার্মাল পেস্ট প্রয়োগ করুন। এটি তাপ অপসারণে সাহায্য করবে এবং পারফরমেন্স বাড়াবে।

১৪. গ্রাফিক্স সেটিংস অপটিমাইজ করুন

গ্রাফিক্স কার্ড সেটিংস

  • ড্রাইভার আপডেট: আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের ড্রাইভার নিয়মিত আপডেট রাখুন। এটি গ্রাফিক্স পারফরমেন্স বাড়াবে।
  • গেম সেটিংস অপটিমাইজেশন: গেম খেলার সময় গেম সেটিংস অপটিমাইজ করুন। লোয়ার রেজুলেশন ও ডিটেইল সেটিংস কমিয়ে পারফরমেন্স বাড়ান।

১৫. সিস্টেম রিস্টোর ব্যবহার

সিস্টেম রিস্টোর পয়েন্ট

  • রিস্টোর পয়েন্ট তৈরি করুন: গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের আগে সিস্টেম রিস্টোর পয়েন্ট তৈরি করুন। এটি সমস্যা হলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে সাহায্য করবে।
  • রিস্টোর পয়েন্ট থেকে রিস্টোর করুন: কোন সমস্যা হলে সিস্টেম রিস্টোর পয়েন্ট থেকে রিস্টোর করুন। এটি দ্রুত আপনার কম্পিউটারকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

১৬. ক্লিন ইনস্টলেশন

অপারেটিং সিস্টেম পুনরায় ইনস্টল

  • ক্লিন ইনস্টল: অনেক সময় কম্পিউটারে নানা সমস্যার কারণে ক্লিন ইনস্টল করা ভালো হতে পারে। এটি সকল সমস্যা সমাধান করে নতুন ভাবে শুরু করতে সাহায্য করে।
  • ব্যাকআপ তৈরি: ক্লিন ইনস্টল করার পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ ডেটার ব্যাকআপ তৈরি করুন।

১৭. নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করুন

রেগুলার চেকআপ

  • নিয়মিত স্ক্যান ও ক্লিনআপ: নিয়মিত ভাইরাস স্ক্যান, ডিস্ক ক্লিনআপ, ও সফটওয়্যার আপডেট করুন। এটি কম্পিউটারকে দীর্ঘ সময় ভালো পারফরমেন্সে রাখতে সাহায্য করবে।
  • মেইনটেন্যান্স টুলস ব্যবহার: বিভিন্ন মেইনটেন্যান্স টুলস ব্যবহার করে কম্পিউটার নিয়মিত চেকআপ করুন।


উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে আপনি আপনার কম্পিউটারের গতি বাড়াতে সক্ষম হবেন। নিয়মিত মেইনটেন্যান্স ও সচেতনতা আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে দ্রুতগতির কম্পিউটার ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সাথে সাথে সঠিক টুলস ও রিসোর্স ব্যবহার করলে কম্পিউটারের পারফরমেন্স বাড়ানো সহজ হবে।

এছাড়াও, যদি আপনি উন্নত প্রযুক্তিগত সমাধান বা অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন অনুভব করেন, তবে প্রফেশনাল আইটি সার্ভিস বা টেকনিক্যাল সাপোর্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *