Home » » সাবনেটিং কি? সাবনেটিং কিভাবে কাজ করে ও এর সুবিধা এবং অসুবিধা

সাবনেটিং কি? সাবনেটিং কিভাবে কাজ করে ও এর সুবিধা এবং অসুবিধা

সাবনেটিং কি?

সাবনেটিং (Subnetting) হলো একটি নেটওয়ার্কিং কৌশল যা একটি বড় নেটওয়ার্ককে ছোট ছোট সাবনেটে বিভক্ত করে। এটি মূলত IP ঠিকানা ব্যবস্থাপনার একটি পদ্ধতি, যা নেটওয়ার্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং নিরাপত্তা বাড়ায়।

সাবনেটিং এর গুরুত্ব

সাবনেটিং নেটওয়ার্কের ব্যবস্থাপনায় অনেক সুবিধা নিয়ে আসে। এর মধ্যে প্রধান কিছু সুবিধা হলো:

উন্নত নিরাপত্তা

  • সাবনেটিং এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ককে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে রাখলে নেটওয়ার্কের এক অংশে কোনো সমস্যা হলেও অন্য অংশে তার প্রভাব পড়ে না।
  • একটি সাবনেটে অপ্রয়োজনীয় ট্রাফিক প্রবেশ করতে পারে না, যা নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে।

IP ঠিকানা ব্যবস্থাপনা

  • সাবনেটিং এর মাধ্যমে IP ঠিকানা গুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।
  • এটি বড় নেটওয়ার্ক গুলোর মধ্যে IP ঠিকানা পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে ঠিকানা সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে।

নেটওয়ার্ক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি

  • সাবনেটিং এর মাধ্যমে ছোট ছোট নেটওয়ার্কে বিভক্ত করে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক কমানো যায়।
  • এর ফলে নেটওয়ার্কের প্রতিটি অংশে ট্রাফিক কমে যায় এবং সামগ্রিকভাবে নেটওয়ার্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সাবনেটিং এর প্রাথমিক ধারণা

সাবনেটিং বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের IP ঠিকানা এবং এর ধরণ সম্পর্কে জানতে হবে।

IP ঠিকানা

IP (Internet Protocol) ঠিকানা হলো একটি সংখ্যার সমষ্টি যা নেটওয়ার্কের প্রতিটি ডিভাইসকে একটি ইউনিক পরিচয় প্রদান করে। IP ঠিকানা দুই প্রকারের হতে পারে:

  • IPv4 (32-বিট ঠিকানা)
  • IPv6 (128-বিট ঠিকানা)

আমাদের আলোচনায় আমরা মূলত IPv4 ঠিকানা নিয়ে কথা বলব।

IP ঠিকানার ক্লাস

IPv4 ঠিকানা ৪টি অক্টেট বা ৮-বিট গ্রুপ নিয়ে গঠিত। IP ঠিকানা গুলো ৫টি ক্লাসে বিভক্ত করা হয়েছে: A, B, C, D, এবং E।

ক্লাস A

  • শুরু: 1.0.0.0
  • শেষ: 126.255.255.255
  • ডিফল্ট সাবনেট মাস্ক: 255.0.0.0

ক্লাস B

  • শুরু: 128.0.0.0
  • শেষ: 191.255.255.255
  • ডিফল্ট সাবনেট মাস্ক: 255.255.0.0

ক্লাস C

  • শুরু: 192.0.0.0
  • শেষ: 223.255.255.255
  • ডিফল্ট সাবনেট মাস্ক: 255.255.255.0

ক্লাস D

  • শুরু: 224.0.0.0
  • শেষ: 239.255.255.255
  • ব্যবহার: মাল্টিকাস্ট

ক্লাস E

  • শুরু: 240.0.0.0
  • শেষ: 255.255.255.255
  • ব্যবহার: রিজার্ভড

সাবনেট মাস্ক

সাবনেট মাস্ক হলো একটি 32-বিট সংখ্যা যা IP ঠিকানার নেটওয়ার্ক এবং হোস্ট অংশ পৃথক করতে ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ

একটি ক্লাস C IP ঠিকানা 192.168.1.0 এবং ডিফল্ট সাবনেট মাস্ক 255.255.255.0। এই সাবনেট মাস্কের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে প্রথম ২৪-বিট হলো নেটওয়ার্ক অংশ এবং শেষ ৮-বিট হলো হোস্ট অংশ।

সাবনেটিং কিভাবে কাজ করে

সাবনেটিং এর মাধ্যমে একটি বড় নেটওয়ার্ককে ছোট ছোট সাবনেটে বিভক্ত করা হয়। এটি করতে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়:

ধাপ ১: নেটওয়ার্ক প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ

প্রথমে, আপনাকে জানতে হবে কতগুলো সাবনেট এবং প্রতি সাবনেটে কতগুলো হোস্ট প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমাদের একটি বড় নেটওয়ার্ক থাকে এবং ৪টি সাবনেটে বিভক্ত করতে হয়, এবং প্রতি সাবনেটে ৫০টি হোস্ট থাকতে হবে।

ধাপ ২: সাবনেট সংখ্যা নির্ধারণ

সাবনেট সংখ্যা নির্ধারণ করতে ২-এর শক্তি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি ৪টি সাবনেট দরকার হয়, তবে ২² = ৪।

ধাপ ৩: হোস্ট সংখ্যা নির্ধারণ

প্রতি সাবনেটে হোস্ট সংখ্যা নির্ধারণ করতে ২-এর শক্তি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রতি সাবনেটে ৫০টি হোস্ট দরকার হয়, তবে নিকটতম শক্তি ২^৬ = ৬৪। সুতরাং, প্রতি সাবনেটে ৬৪টি হোস্ট ঠিকানা থাকবে।

ধাপ ৪: সাবনেট মাস্ক নির্ধারণ

প্রত্যেক সাবনেটের জন্য সাবনেট মাস্ক নির্ধারণ করতে আপনাকে IP ঠিকানার নেটওয়ার্ক এবং হোস্ট অংশের বিট সংখ্যা পরিবর্তন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ক্লাস C IP ঠিকানা 192.168.1.0 এবং সাবনেট মাস্ক 255.255.255.0

সাবনেট মাস্ক উদাহরণ

প্রথম ২৪-বিট নেটওয়ার্ক অংশ (192.168.1) এবং শেষ ৮-বিট হোস্ট অংশ (0)। যদি আমাদের ৪টি সাবনেট প্রয়োজন হয়, তবে ২-বিট হোস্ট অংশ থেকে নেটওয়ার্ক অংশে নিয়ে যেতে হবে।

  • নতুন সাবনেট মাস্ক: 255.255.255.192
  • নেটওয়ার্ক বিট: ২৬
  • হোস্ট বিট: ৬

ধাপ ৫: সাবনেট ঠিকানা নির্ধারণ

নতুন সাবনেট মাস্ক ব্যবহার করে আমরা নতুন সাবনেট ঠিকানা নির্ধারণ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, 192.168.1.0 IP ঠিকানা সহ ৪টি সাবনেট:

  • প্রথম সাবনেট: 192.168.1.0/26
  • দ্বিতীয় সাবনেট: 192.168.1.64/26
  • তৃতীয় সাবনেট: 192.168.1.128/26
  • চতুর্থ সাবনেট: 192.168.1.192/26

সাবনেটিং এর উদাহরণ

আমরা একটি উদাহরণ দেখে সাবনেটিং এর প্রক্রিয়া বুঝতে পারি।

উদাহরণ ১: ক্লাস C সাবনেটিং

আমাদের একটি ক্লাস C নেটওয়ার্ক 192.168.10.0/24 আছে এবং এটি ৮টি সাবনেটে বিভক্ত করতে হবে। প্রতি সাবনেটে কতগুলো হোস্ট ঠিকানা থাকবে এবং সাবনেটিং এর প্রক্রিয়া কিভাবে হবে তা আমরা দেখি।

ধাপ ১: সাবনেট সংখ্যা নির্ধারণ

আমাদের ৮টি সাবনেট দরকার। ২-এর শক্তি ৩-বিট ব্যবহার করে ২³ = ৮।

ধাপ ২: হোস্ট সংখ্যা নির্ধারণ

প্রতি সাবনেটে হোস্ট সংখ্যা নির্ধারণ করতে হোস্ট বিট সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের ৮-বিট হোস্ট অংশ আছে। ৩-বিট নেটওয়ার্ক অংশে ব্যবহৃত হলে ৮ - ৩ = ৫-বিট হোস্ট অংশ থাকবে।

  • হোস্ট বিট সংখ্যা: ৫
  • প্রতি সাবনেটে হোস্ট সংখ্যা: ২⁵ - ২ = ৩০

ধাপ ৩: নতুন সাবনেট মাস্ক

নতুন সাবনেট মাস্ক হবে 255.255.255.224

ধাপ ৪: সাবনেট ঠিকানা নির্ধারণ

নতুন সাবনেট ঠিকানা নির্ধারণ করতে IP ঠিকানা এবং সাবনেট মাস্ক ব্যবহার করি:

  • প্রথম সাবনেট: 192.168.10.0/27 (৩০ হোস্ট)
  • দ্বিতীয় সাবনেট: 192.168.10.32/27 (৩০ হোস্ট)
  • তৃতীয় সাবনেট: 192.168.10.64/27 (৩০ হোস্ট)
  • চতুর্থ সাবনেট: 192.168.10.96/27 (৩০ হোস্ট)
  • পঞ্চম সাবনেট: 192.168.10.128/27 (৩০ হোস্ট)
  • ষষ্ঠ সাবনেট: 192.168.10.160/27 (৩০ হোস্ট)
  • সপ্তম সাবনেট: 192.168.10.192/27 (৩০ হোস্ট)
  • অষ্টম সাবনেট: 192.168.10.224/27 (৩০ হোস্ট)

উদাহরণ ২: ক্লাস B সাবনেটিং

আমাদের একটি ক্লাস B নেটওয়ার্ক 172.16.0.0/16 আছে এবং এটি ১৬টি সাবনেটে বিভক্ত করতে হবে। প্রতি সাবনেটে কতগুলো হোস্ট ঠিকানা থাকবে এবং সাবনেটিং এর প্রক্রিয়া কিভাবে হবে তা আমরা দেখি।

ধাপ ১: সাবনেট সংখ্যা নির্ধারণ

আমাদের ১৬টি সাবনেট দরকার। ২-এর শক্তি ৪-বিট ব্যবহার করে ২⁴ = ১৬।

ধাপ ২: হোস্ট সংখ্যা নির্ধারণ

প্রতি সাবনেটে হোস্ট সংখ্যা নির্ধারণ করতে হোস্ট বিট সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের ১৬-বিট হোস্ট অংশ আছে। ৪-বিট নেটওয়ার্ক অংশে ব্যবহৃত হলে ১৬ - ৪ = ১২-বিট হোস্ট অংশ থাকবে।

  • হোস্ট বিট সংখ্যা: ১২
  • প্রতি সাবনেটে হোস্ট সংখ্যা: ২¹² - ২ = ৪০৯৪

ধাপ ৩: নতুন সাবনেট মাস্ক

নতুন সাবনেট মাস্ক হবে 255.255.240.0

ধাপ ৪: সাবনেট ঠিকানা নির্ধারণ

নতুন সাবনেট ঠিকানা নির্ধারণ করতে IP ঠিকানা এবং সাবনেট মাস্ক ব্যবহার করি:

  • প্রথম সাবনেট: 172.16.0.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • দ্বিতীয় সাবনেট: 172.16.16.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • তৃতীয় সাবনেট: 172.16.32.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • চতুর্থ সাবনেট: 172.16.48.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • পঞ্চম সাবনেট: 172.16.64.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • ষষ্ঠ সাবনেট: 172.16.80.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • সপ্তম সাবনেট: 172.16.96.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • অষ্টম সাবনেট: 172.16.112.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • নবম সাবনেট: 172.16.128.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • দশম সাবনেট: 172.16.144.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • একাদশ সাবনেট: 172.16.160.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • দ্বাদশ সাবনেট: 172.16.176.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • ত্রয়োদশ সাবনেট: 172.16.192.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • চতুর্দশ সাবনেট: 172.16.208.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • পঞ্চদশ সাবনেট: 172.16.224.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)
  • ষোড়শ সাবনেট: 172.16.240.0/20 (৪০৯৪ হোস্ট)

সাবনেটিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা

সুবিধা

  • নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা সহজ হয়: সাবনেটিং এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ককে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করা যায়, যা ব্যবস্থাপনা সহজ করে।
  • নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়: সাবনেটিং এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়, কারণ একটি সাবনেটে কোনো সমস্যা হলেও অন্য সাবনেট প্রভাবিত হয় না।
  • কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: ছোট ছোট নেটওয়ার্কে বিভক্ত করে নেটওয়ার্কের ট্রাফিক কমানো যায়, যা সামগ্রিকভাবে নেটওয়ার্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

অসুবিধা

  • জটিলতা বৃদ্ধি পায়: সাবনেটিং এর মাধ্যমে নেটওয়ার্কের জটিলতা বৃদ্ধি পায়, যা নতুনদের জন্য কঠিন হতে পারে।
  • ব্যবস্থাপনার খরচ বৃদ্ধি পায়: বড় নেটওয়ার্কে অনেকগুলো সাবনেট ব্যবস্থাপনা করতে হলে খরচ বৃদ্ধি পায়।

সাবনেটিং হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কিং কৌশল যা নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি IP ঠিকানা ব্যবস্থাপনা সহজ করে এবং নেটওয়ার্ককে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে রাখে। সাবনেটিং এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাওয়া যায়, তবে এটি ব্যবস্থাপনার জটিলতা ও খরচও বৃদ্ধি করে। সবশেষে, সাবনেটিং এর মাধ্যমে একটি বড় নেটওয়ার্ককে কার্যকরভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *