Home » » উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন সংস্করণ কি কি?

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন সংস্করণ কি কি?

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন সংস্করণ কি কি?

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হলো মাইক্রোসফটের তৈরি একটি গ্লোবাল পিসি অপারেটিং সিস্টেম যা পৃথিবীজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহারকারীর সহজতর কম্পিউটার ব্যবহার, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা এবং যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।

উইন্ডোজ 1.0 থেকে শুরু

উইন্ডোজ 1.0

১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া উইন্ডোজ 1.0 ছিল মাইক্রোসফটের প্রথম গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। এটি ডস-এর উপরে একটি গ্রাফিকাল শেল হিসেবে কাজ করতো এবং ব্যবহারকারীদের মাউস ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন চালানোর সুবিধা দিতো।

  • প্রধান ফিচার:
    • উইন্ডোজ ম্যানেজার
    • ক্যালকুলেটর
    • নোটপ্যাড
    • রিভার্সি গেম

উইন্ডোজ 2.0

উইন্ডোজ 2.0 মুক্তি পায় ১৯৮৭ সালে এবং এতে নতুন ধরনের ডেস্কটপ আইকন এবং উন্নততর মেমোরি ম্যানেজমেন্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি উইন্ডোজ অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ওভারল্যাপিং উইন্ডো হিসেবে প্রদর্শনের অনুমতি দেয়।

  • প্রধান ফিচার:
    • আইকন ভিত্তিক ডেস্কটপ
    • উন্নততর গ্রাফিক্স

উইন্ডোজ 3.0 এবং 3.1

উইন্ডোজ 3.0

১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া উইন্ডোজ 3.0 ছিল মাইক্রোসফটের জন্য একটি বড় সাফল্য। এটি নতুন গ্রাফিক্স এবং মেমোরি ম্যানেজমেন্ট ফিচার নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • উন্নততর GUI
    • মাইক্রোসফট পেইন্ট
    • ফাইল ম্যানেজার

উইন্ডোজ 3.1

উইন্ডোজ 3.1 মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে এবং এতে ট্রু-টাইপ ফন্ট সাপোর্ট, মাল্টিমিডিয়া ইন্টিগ্রেশন এবং উন্নততর সিস্টেম স্ট্যাবিলিটি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • ট্রু-টাইপ ফন্ট সাপোর্ট
    • মাল্টিমিডিয়া ইন্টিগ্রেশন

উইন্ডোজ 95

উইন্ডোজ 95 মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে এবং এটি একটি মেজর রিলিজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি পুরোপুরি ৩২-বিট অপারেটিং সিস্টেম এবং সম্পূর্ণ নতুন স্টার্ট মেনু এবং টাস্কবার নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • স্টার্ট মেনু
    • টাস্কবার
    • প্লাগ অ্যান্ড প্লে সাপোর্ট

উইন্ডোজ 98

১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া উইন্ডোজ 98 ছিল আরও বেশি ইন্টারনেট-ভিত্তিক এবং এটি USB সাপোর্ট এবং দ্রুততর পারফরম্যান্স নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • USB সাপোর্ট
    • ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৪.০

উইন্ডোজ 2000

উইন্ডোজ 2000 প্রফেশনাল

উইন্ডোজ 2000 প্রফেশনাল মুক্তি পায় ২০০০ সালে এবং এটি মূলত ব্যবসায়িক ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজাইন করা হয়। এটি আরও বেশি স্ট্যাবল এবং নিরাপদ ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • উন্নততর নিরাপত্তা
    • মেমোরি প্রোটেকশন

উইন্ডোজ ME (মিলেনিয়াম এডিশন)

উইন্ডোজ ME মুক্তি পায় ২০০০ সালে এবং এটি উইন্ডোজ 9x সিরিজের শেষ সংস্করণ ছিল। এটি হোম ইউজারদের জন্য ডিজাইন করা হয়।

  • প্রধান ফিচার:
    • ইমপ্রুভড মিডিয়া প্লেয়ার
    • ইন্টারনেট রিস্টোর ফিচার

উইন্ডোজ XP

উইন্ডোজ XP মুক্তি পায় ২০০১ সালে এবং এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে নতুন ইউজার ইন্টারফেস, উন্নততর সিকিউরিটি এবং পারফরম্যান্স অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • নতুন স্টার্ট মেনু
    • রিমোট ডেস্কটপ
    • ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৬

উইন্ডোজ ভিস্তা

উইন্ডোজ ভিস্তা মুক্তি পায় ২০০৭ সালে এবং এটি ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল (UAC) এবং এ্যারো গ্রাফিক্স ইন্টারফেস সহ আরও উন্নত সিকিউরিটি এবং গ্রাফিক্স ফিচার নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল (UAC)
    • এ্যারো গ্লাস ইন্টারফেস
    • উইন্ডোজ ডিফেন্ডার

উইন্ডোজ 7

উইন্ডোজ 7 মুক্তি পায় ২০০৯ সালে এবং এটি উইন্ডোজ ভিস্তার তুলনায় অনেক বেশি পারফরম্যান্স এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ছিল। এটি দ্রুততর বুট টাইম এবং উন্নততর ডেস্কটপ ম্যানেজমেন্ট ফিচার নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • উন্নততর টাস্কবার
    • লাইব্রেরি ফিচার
    • উইন্ডোজ মিডিয়া সেন্টার

উইন্ডোজ 8 এবং 8.1

উইন্ডোজ 8

উইন্ডোজ 8 মুক্তি পায় ২০১২ সালে এবং এতে সম্পূর্ণ নতুন মেট্রো ইউজার ইন্টারফেস এবং টাচ স্ক্রিন সাপোর্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • মেট্রো ইউজার ইন্টারফেস
    • উইন্ডোজ স্টোর
    • টাচ স্ক্রিন সাপোর্ট

উইন্ডোজ 8.1

উইন্ডোজ 8.1 মুক্তি পায় ২০১৩ সালে এবং এটি উইন্ডোজ 8-এর উন্নততর সংস্করণ। এতে স্টার্ট বোতাম ফিরে আসে এবং আরও বেশি কাস্টমাইজেশন অপশন অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • স্টার্ট বোতাম ফিরে আসা
    • উন্নততর পারফরম্যান্স
    • বিং সার্চ ইন্টিগ্রেশন

উইন্ডোজ 10

উইন্ডোজ 10 মুক্তি পায় ২০১৫ সালে এবং এটি এখনও মাইক্রোসফটের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেম। এটি নিয়মিত আপডেট এবং নিরাপত্তা ফিচার দিয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

  • প্রধান ফিচার:
    • স্টার্ট মেনু রিটার্ন
    • কর্টানা ডিজিটাল অ্যাসিস্টেন্ট
    • মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার
    • ভার্চুয়াল ডেস্কটপ

উইন্ডোজ 11

উইন্ডোজ 11

উইন্ডোজ 11 মুক্তি পায় ২০২১ সালে এবং এটি উইন্ডোজ 10-এর উপর ভিত্তি করে নির্মিত। এটি আরও আধুনিক এবং উন্নততর ইউজার ইন্টারফেস এবং ফিচার নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • নতুন স্টার্ট মেনু
    • স্ন্যাপ লেআউট
    • উইজেট সাপোর্ট
    • উন্নততর গেমিং পারফরম্যান্স

উইন্ডোজ সার্ভার সংস্করণ

উইন্ডোজ সার্ভার 2003

উইন্ডোজ সার্ভার 2003 মুক্তি পায় ২০০৩ সালে এবং এটি মূলত সার্ভার ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়। এতে উন্নততর সার্ভার ম্যানেজমেন্ট এবং সিকিউরিটি ফিচার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • উন্নততর সার্ভার ম্যানেজমেন্ট
    • অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি

উইন্ডোজ সার্ভার 2008

উইন্ডোজ সার্ভার 2008 মুক্তি পায় ২০০৮ সালে এবং এতে আরও উন্নততর সার্ভার পারফরম্যান্স এবং নিরাপত্তা ফিচার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • হাইপার-ভি
    • সার্ভার কোর

উইন্ডোজ সার্ভার 2012

উইন্ডোজ সার্ভার 2012 মুক্তি পায় ২০১২ সালে এবং এটি ক্লাউড-ভিত্তিক ফিচার এবং ভার্চুয়ালাইজেশন ক্ষমতা নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • ক্লাউড ইন্টিগ্রেশন
    • উন্নততর ভার্চুয়ালাইজেশন

উইন্ডোজ সার্ভার 2016

উইন্ডোজ সার্ভার 2016 মুক্তি পায় ২০১৬ সালে এবং এতে আরও উন্নততর নিরাপত্তা এবং ক্লাউড ফিচার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • শিল্ডেড ভিএম
    • ন্যানো সার্ভার

উইন্ডোজ সার্ভার 2019

উইন্ডোজ সার্ভার 2019 মুক্তি পায় ২০১৮ সালে এবং এটি হাইব্রিড ক্লাউড ফিচার এবং উন্নততর ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা নিয়ে আসে।

  • প্রধান ফিচার:
    • হাইব্রিড ক্লাউড ইন্টিগ্রেশন
    • উইন্ডোজ অ্যাডমিন সেন্টার

উইন্ডোজ লাইট

উইন্ডোজ লাইট হলো মাইক্রোসফটের হালকা ওএস যা কম্পিউটার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এটি উইন্ডোজ 10-এর লাইটওয়েট সংস্করণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

  • প্রধান ফিচার:
    • হালকা ওএস
    • দ্রুততর বুট টাইম

উইন্ডোজ মোবাইল ওএস

উইন্ডোজ মোবাইল ওএস হলো মাইক্রোসফটের মোবাইল ডিভাইসের জন্য তৈরি অপারেটিং সিস্টেম। এটি উইন্ডোজ ফোন এবং উইন্ডোজ মোবাইল নামে পরিচিত ছিল।

  • প্রধান ফিচার:
    • টাইল-ভিত্তিক ইন্টারফেস
    • মাইক্রোসফট অ্যাপ্লিকেশন ইন্টিগ্রেশন

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ভবিষ্যৎ

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলতে গেলে, মাইক্রোসফট সবসময় নতুন প্রযুক্তি এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কাজ করছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নততর নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইন্টিগ্রেশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ফিচার নিয়ে আসবে।

FAQ's

উইন্ডোজ 10 এবং উইন্ডোজ 11 এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য কি?

উইন্ডোজ 10 এবং উইন্ডোজ 11 এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল ইউজার ইন্টারফেস এবং নতুন ফিচার। উইন্ডোজ 11 এর নতুন স্টার্ট মেনু, স্ন্যাপ লেআউট, এবং উইজেট সাপোর্ট রয়েছে।

উইন্ডোজ 8 এবং উইন্ডোজ 8.1 এর মধ্যে পার্থক্য কি?

উইন্ডোজ 8 এবং উইন্ডোজ 8.1 এর মধ্যে পার্থক্য হলো স্টার্ট বোতামের প্রত্যাবর্তন, আরও বেশি কাস্টমাইজেশন অপশন এবং বিং সার্চ ইন্টিগ্রেশন।

উইন্ডোজ সার্ভার 2016 এবং উইন্ডোজ সার্ভার 2019 এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য কি?

উইন্ডোজ সার্ভার 2016 এবং উইন্ডোজ সার্ভার 2019 এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো হাইব্রিড ক্লাউড ইন্টিগ্রেশন এবং উন্নততর ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা।

উইন্ডোজ XP কেন এত জনপ্রিয় ছিল?

উইন্ডোজ XP এত জনপ্রিয় ছিল কারণ এটি ছিল অত্যন্ত স্ট্যাবল, ব্যবহারকারী বান্ধব এবং বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উইন্ডোজ ভিস্তা কেন সমালোচিত হয়েছিল?

উইন্ডোজ ভিস্তা সমালোচিত হয়েছিল কারণ এতে ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল (UAC) নিয়ে ব্যবহারকারীদের অসন্তোষ ছিল এবং এটি উইন্ডোজ এক্সপি-এর তুলনায় ধীর ছিল।

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ভবিষ্যতে কি আসতে পারে?

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ভবিষ্যতে আরও উন্নততর নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইন্টিগ্রেশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ফিচার আসতে পারে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *