Home » » সেমিকন্ডাক্টর কাকে বলে?

সেমিকন্ডাক্টর কাকে বলে?

সেমিকন্ডাক্টর

সেমিকন্ডাক্টর (Semiconductor) হল এমন এক ধরনের পদার্থ, যা বিদ্যুৎ পরিবাহিতার ক্ষেত্রে কন্ডাক্টর (পরিবাহী) এবং ইনসুলেটর (অপরিবাহী)-এর মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকে। এর মানে, সেমিকন্ডাক্টর কিছু নির্দিষ্ট শর্তে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে এবং আবার অন্য শর্তে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে অক্ষম হয়।

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য:

  1. পরিবাহিতা:
    সেমিকন্ডাক্টরের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। সাধারণ তাপমাত্রায় এটি ইনসুলেটরের মতো আচরণ করে, কিন্তু তাপমাত্রা বাড়লে এর পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।

  2. বন্ধ গ্যাপ (Band Gap):
    সেমিকন্ডাক্টরের কন্ডাকশন ব্যান্ড এবং ভ্যালেন্স ব্যান্ডের মধ্যে একটি মাঝারি আকারের গ্যাপ থাকে, যা এর বিদ্যুৎ পরিবাহিতার প্রধান কারণ।

  3. ডপিং (Doping):
    সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য উন্নত করতে এর মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণে অপদ্রব্য (Impurity) যোগ করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে ডপিং বলা হয়। ডপিংয়ের ফলে সেমিকন্ডাক্টর দুই ধরনের হতে পারে:

    • এন-টাইপ (N-type): যেখানে অতিরিক্ত ইলেকট্রন বিদ্যমান।
    • পি-টাইপ (P-type): যেখানে পজিটিভ চার্জ ক্যারিয়ার বা হোল বিদ্যমান।
  4. তাপমাত্রার প্রভাব:
    ইনসুলেটরের মতো সেমিকন্ডাক্টরের পরিবাহিতা শূন্য নয়; বরং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বৃদ্ধি পায়।


সেমিকন্ডাক্টরের উপকরণ:

সেমিকন্ডাক্টর সাধারণত নির্দিষ্ট উপাদান থেকে তৈরি হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল:

  1. সিলিকন (Silicon): সবচেয়ে প্রচলিত সেমিকন্ডাক্টর উপাদান।
  2. জার্মেনিয়াম (Germanium): অতীতে ব্যবহৃত হত, তবে এখন তুলনামূলক কম ব্যবহৃত হয়।
  3. গ্যালিয়াম আর্সেনাইড (Gallium Arsenide): উচ্চ গতিসম্পন্ন ডিভাইসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  4. কার্বন ন্যানোটিউব ও গ্রাফিন: আধুনিক গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার:

সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যাপক। এটি ইলেকট্রনিক্স শিল্পের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এর প্রধান ব্যবহারগুলো হলো:

  1. ডায়োড: বিদ্যুৎ প্রবাহকে একদিকে প্রবাহিত করতে ব্যবহার হয়।
  2. ট্রানজিস্টর: এটি সিগনাল অ্যাম্প্লিফিকেশন এবং সুইচিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  3. ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC): ছোট ডিভাইসে বড় ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।
  4. সোলার সেল: সূর্যালোক থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে ব্যবহার হয়।
  5. LED ও LCD ডিসপ্লে: আলোক উৎস এবং ডিসপ্লে প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ।

সেমিকন্ডাক্টরের সুবিধা:

  • ছোট আকৃতির এবং হালকা ওজন।
  • কম শক্তি খরচ।
  • দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য।

সেমিকন্ডাক্টরের ভবিষ্যৎ:

আজকের দিনে, সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির অগ্রগতি স্মার্টফোন, কম্পিউটার, মেডিক্যাল ডিভাইস, এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। ভবিষ্যতে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং এআই ডিভাইসের উন্নয়নে সেমিকন্ডাক্টরের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *