রাউটারের নিরাপত্তা বাড়ানোর উপায়।
রাউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনার ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের প্রবেশদ্বার। হ্যাকাররা যদি রাউটারের নিরাপত্তা ভেঙে ফেলে, তাহলে তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে বা আপনার ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে বেআইনি কার্যক্রম চালাতে পারে। নিচে রাউটারের নিরাপত্তা বাড়ানোর কিছু কার্যকর উপায় দেওয়া হলো—
১. রাউটারের ডিফল্ট লগইন তথ্য পরিবর্তন করুন
রাউটারের ডিফল্ট ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড সহজেই অনুমানযোগ্য হয়, তাই এগুলো পরিবর্তন করা জরুরি।
✔ সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যাতে সংখ্যা, বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর ও বিশেষ চিহ্ন থাকে।
✔ পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করুন এবং কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
২. শক্তিশালী Wi-Fi পাসওয়ার্ড সেট করুন
আপনার Wi-Fi নেটওয়ার্কের জন্য শক্তিশালী WPA3 (বা অন্তত WPA2) এনক্রিপশন ব্যবহার করুন।
✔ সহজ অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড এড়িয়ে চলুন (যেমন: "12345678" বা "password")।
✔ কমপক্ষে ১২-১৬ অক্ষরের জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৩. রাউটারের ফার্মওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন
রাউটারের নির্মাতারা সময়-সময় নিরাপত্তা দুর্বলতা ঠিক করতে ফার্মওয়্যার আপডেট প্রকাশ করে।
✔ নিয়মিত ফার্মওয়্যার চেক করুন এবং সর্বশেষ আপডেট ইন্সটল করুন।
✔ অনেক রাউটারে অটো-আপডেট অপশন থাকে, সেটি চালু করা যেতে পারে।
৪. রিমোট অ্যাক্সেস ও অননুমোদিত পরিষেবা বন্ধ করুন
✔ রাউটারের রিমোট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Remote Management) বন্ধ করুন, যাতে বাইরে থেকে কেউ সেটিংস পরিবর্তন করতে না পারে।
✔ UPnP (Universal Plug and Play) ও WPS (Wi-Fi Protected Setup) বন্ধ করুন, কারণ এগুলো নিরাপত্তা দুর্বলতা তৈরি করতে পারে।
৫. MAC ফিল্টারিং চালু করুন
✔ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ডিভাইসের MAC (Media Access Control) ঠিকানা অনুমোদিত রাখুন, যাতে অন্য কেউ সংযোগ করতে না পারে।
৬. গেস্ট নেটওয়ার্ক চালু করুন
✔ পরিবারের সদস্য বা অতিথিদের জন্য আলাদা গেস্ট নেটওয়ার্ক চালু করুন, যাতে মূল নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে না পড়ে।
✔ গেস্ট নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস (যেমন: স্মার্ট টিভি, ক্যামেরা) সংযুক্ত করবেন না।
৭. রাউটারের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ধারণ করুন
✔ রাউটার এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে সংকেত শুধু আপনার বাসার মধ্যে সীমিত থাকবে।
✔ দরকার হলে Wi-Fi সিগন্যাল শক্তি কমিয়ে দিন, যাতে বাইরে থেকে কেউ সহজে সংযোগ করতে না পারে।
৮. সন্দেহজনক সংযোগ মনিটর করুন
✔ রাউটারের অ্যাডমিন প্যানেলে গিয়ে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোর তালিকা চেক করুন।
✔ অচেনা বা সন্দেহজনক ডিভাইস দেখলে সাথে সাথে ব্লক করুন ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
৯. VPN (Virtual Private Network) ব্যবহার করুন
✔ VPN ব্যবহার করলে ইন্টারনেট সংযোগ আরও সুরক্ষিত হয় এবং হ্যাকারদের আক্রমণের ঝুঁকি কমে।
✔ অফিসিয়াল বা সংবেদনশীল কাজে VPN ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
১০. ফায়ারওয়াল ও নিরাপত্তা সেটিংস চালু করুন
✔ বেশিরভাগ রাউটারের বিল্ট-ইন ফায়ারওয়াল অপশন থাকে, এটি চালু করুন।
✔ DNS ফিল্টারিং বা Parental Control অপশন ব্যবহার করলে সন্দেহজনক ওয়েবসাইট ব্লক করা যায়।
১১. অপ্রয়োজনীয় ডিভাইস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন
✔ আপনি যদি কোনো স্মার্ট ডিভাইস বা পুরোনো ডিভাইস ব্যবহার না করেন, তাহলে সেটিকে Wi-Fi নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করুন।
১২. দ্বৈত-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করুন
✔ কিছু উন্নত রাউটার 2FA সাপোর্ট করে, যেখানে লগইনের সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর যোগ করা যায়।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনার রাউটার ও নেটওয়ার্ক অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে, নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, ফার্মওয়্যার আপডেট এবং অচেনা ডিভাইস মনিটরিং খুবই কার্যকর উপায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions