কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে যা করবেন!
কম্পিউটার আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। অফিস, ব্যবসা, শিক্ষা কিংবা ঘরোয়া কাজ—সবক্ষেত্রেই এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি কম্পিউটার ধীরগতিতে কাজ করতে শুরু করলে বিরক্তি ও হতাশা তৈরি হতে পারে। এ সমস্যাটি প্রায় প্রত্যেক ব্যবহারকারীর কাছেই পরিচিত। তাই, আজকের এই বিস্তারিত গাইডে আমরা আলোচনা করবো "কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে যা করবেন"—এই বিষয়টি নিয়ে।
🖥️ অধ্যায় ১: কেন কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়?
১.১ অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও স্টার্টআপ প্রোগ্রাম
আপনার কম্পিউটারে যদি অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ইন্সটল থাকে, তা RAM এবং প্রসেসর ব্যবহার করে কম্পিউটারকে ধীর করে দিতে পারে। অনেক সময় স্টার্টআপ প্রোগ্রাম (Startup Programs) হিসেবে এই সফটওয়্যারগুলো চালু হয় এবং সিস্টেম চালু হওয়ার সময়ই গতি কমিয়ে দেয়।
১.২ হার্ড ড্রাইভ পূর্ণ হয়ে যাওয়া
SSD বা HDD যদি ৮০%-এর বেশি পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে। ফাইল খোঁজার বা ডেটা প্রসেস করার সময় অনেক দেরি হয়।
১.৩ ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজান্তে ইন্টারনেট থেকে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার ঢুকে কম্পিউটার স্লো করে দিতে পারে।
১.৪ হার্ডওয়্যার পুরনো হয়ে যাওয়া
পুরনো RAM, কম ক্ষমতার প্রসেসর বা হার্ড ডিস্ক থাকলে আধুনিক সফটওয়্যার চালাতে গতি কমে যায়।
১.৫ অপারেটিং সিস্টেম বা ড্রাইভার আপডেট না থাকা
Windows বা অন্যান্য OS-এর আপডেট না থাকলে এবং ড্রাইভার সঠিকভাবে ইন্সটল না থাকলে পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে।
🧰 অধ্যায় ২: সমাধান – কম্পিউটার দ্রুত করার কার্যকর কৌশল
২.১ অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আনইন্সটল করুন
Control Panel > Programs > Uninstall a program এ যান।
যেসব অ্যাপ আপনি ব্যবহার করেন না, সেগুলো মুছে ফেলুন।
২.২ স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ
Task Manager > Startup ট্যাবে যান।
যেসব অ্যাপ দরকার নেই, সেগুলোর স্টেটাস "Disabled" করুন।
২.৩ ডিস্ক ক্লিনআপ ও টেম্প ফাইল রিমুভ
Run > cleanmgr লিখে Disk Cleanup চালান।
Run > %temp% লিখে অস্থায়ী ফাইলগুলো মুছে ফেলুন।
২.৪ হার্ডডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট বা SSD অপ্টিমাইজ
HDD থাকলে Defragment and Optimize Drives ব্যবহার করুন।
SSD থাকলে শুধু Optimize চালান, Defrag নয়।
২.৫ এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন
Windows Defender, Kaspersky, Bitdefender বা Quick Heal দিয়ে ফুল স্ক্যান চালান।
নিয়মিত রিয়েল-টাইম প্রটেকশন চালু রাখুন।
২.৬ RAM আপগ্রেড করুন
৮GB বা তার বেশি RAM ব্যবহার করুন আধুনিক Windows 10/11 এর জন্য।
বাজেট থাকলে DDR4 বা DDR5 RAM ব্যবহার করুন।
২.৭ SSD ইনস্টল করুন
SSD ইনস্টল করলে Windows বুট টাইম এবং অ্যাপ ওপেনিং টাইম অনেক কমে যায়।
বাংলাদেশের মার্কেটে এখন ২৫০GB SSD মাত্র ২,০০০-৩,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
২.৮ ব্রাউজার অপ্টিমাইজ
অতিরিক্ত এক্সটেনশন মুছে ফেলুন।
ক্যাশে ও কুকিজ ক্লিয়ার করুন।
Chrome বা Edge-এর পরিবর্তে Brave বা Firefox ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
২.৯ Windows অপারেটিং সিস্টেম আপডেট
Settings > Update & Security > Windows Update থেকে সব আপডেট ইনস্টল করুন।
অপারেটিং সিস্টেমের Security Patch থাকলে তা দ্রুত ইনস্টল করুন।
২.১০ BIOS ও ড্রাইভার আপডেট
মাদারবোর্ড নির্মাতার ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ BIOS এবং ড্রাইভার ডাউনলোড করে ইন্সটল করুন।
অধ্যায় ৩: সফটওয়্যার টুলস যা আপনার গতি বাড়াবে
CCleaner
টেম্প ফাইল, রেজিস্ট্রি সমস্যা এবং ব্রাউজার ক্যাশে পরিষ্কারে উপযোগী।
Malwarebytes
ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার শনাক্ত এবং রিমুভ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ টুল।
Advanced SystemCare
সিস্টেম অপ্টিমাইজেশন, RAM ক্লিনআপ, জাঙ্ক ফাইল রিমুভ ইত্যাদির জন্য কার্যকর।
Glary Utilities
একটি অল-ইন-ওয়ান টুল যা ডিস্ক ক্লিনআপ, স্টার্টআপ ম্যানেজমেন্ট ও রেজিস্ট্রি ক্লিনার সহ বহু ফিচার দেয়।
🧑💻 অধ্যায় ৪: বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য স্পেশাল টিপস
৪.১ বিদ্যুৎ সমস্যা ও UPS
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে কম্পিউটার হ্যাং বা ডেটা দুর্নীতির শিকার হতে পারে।
একটি ভালো UPS ব্যবহার করুন।
৪.২ লোকাল কম্পিউটার সার্ভিসিং
প্রতি ৬ মাসে একবার লোকাল কম্পিউটার সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়ে হার্ডওয়্যার পরিষ্কার ও থার্মাল পেস্ট চেঞ্জ করানো উচিত।
৪.৩ লো বাজেট পিসি ইউজারদের জন্য
৪-৮GB RAM, ১২৮-২৫৬GB SSD এবং অন্তত Core i3 (৭ম জেনারেশন বা সমপর্যায়ের) প্রসেসর থাকলে Windows 10/11 ভালোভাবে চলবে।
৪.৪ Free সফটওয়্যার ব্যবহার
বাংলাদেশের অনেক ব্যবহারকারী পেইড সফটওয়্যারের ফ্রি বিকল্প খোঁজেন। এখানে কিছু নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প:
MS Office: LibreOffice
Photoshop: GIMP
Premiere Pro: DaVinci Resolve (Free Version)
🔐 অধ্যায় ৫: ভবিষ্যতে স্লো না হওয়ার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
নিয়মিত Disk Cleanup ও Temp ফাইল মুছুন।
প্রতি ১ মাসে একবার ফুল ভাইরাস স্ক্যান চালান।
নতুন সফটওয়্যার ইন্সটলের আগে রিভিউ পড়ুন।
ব্রাউজার এক্সটেনশন কন্ট্রোল করুন।
Windows Defender চালু রাখুন।
হার্ডওয়্যারের ওপর চাপ না পড়ে এমনভাবে ব্যবহার করুন। যেমন: একসাথে অনেকগুলো হেভি অ্যাপ চালানো এড়িয়ে চলুন।
কম্পিউটার ধীরগতির হলে হতাশ না হয়ে প্রথমে কারণ শনাক্ত করুন, এরপর ধাপে ধাপে সমাধান করুন। আমরা যেসব পদ্ধতি এখানে বলেছি, সেগুলো আপনার কম্পিউটারকে আগের চেয়ে অনেক গতি এনে দিতে পারে। বাংলাদেশের বাজার ও ব্যবহারকারীদের অভ্যাস অনুযায়ী সাজানো এই গাইড আপনাকে সাহায্য করবে একদম প্র্যাকটিক্যাল সমাধান দিতে।
সবশেষে বলবো, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সঠিক ব্যবহার পিসির জীবনকাল এবং পারফরম্যান্স অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে।
আপনার যদি নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা থাকে, যেমন: এক্সেল ওপেন করতে দেরি হয় বা গেমিংয়ে ল্যাগ করে, তাহলে সেই অনুযায়ী আলাদা টিপস লাগবে। চাইলে আপনি তা আমাদের জানাতে পারেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions