Home » » ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক হ্যাক থেকে বাঁচার টিপস

ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক হ্যাক থেকে বাঁচার টিপস

 wifi

ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক হ্যাক থেকে বাঁচার টিপস

ইন্টারনেট ছাড়া দৈনন্দিন জীবন যেন কল্পনাই করা যায় না। বাড়ি, অফিস, দোকান কিংবা ক্যাফে – সব জায়গায় এখন ওয়াইফাই সংযোগ বিদ্যমান। কিন্তু প্রযুক্তির এই আশীর্বাদ যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে, তেমনি হ্যাকারদের জন্য খুলে দিয়েছে এক নতুন দ্বার। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ক্রমেই বাড়ছে, এবং ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানবো কিভাবে ওয়াইফাই হ্যাকিং হয়, এবং কীভাবে আপনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নেটওয়ার্ককে হ্যাকারদের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারেন।

ওয়াইফাই হ্যাকিং কী? 

ওয়াইফাই হ্যাকিং বলতে বোঝায়, অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা এবং তা ব্যবহার করা কিংবা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা। হ্যাকাররা বিভিন্ন ধরনের টুলস ও কৌশল ব্যবহার করে একটি দুর্বল সুরক্ষিত নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে।

বাংলাদেশে ওয়াইফাই হ্যাকিংয়ের বর্তমান চিত্র: 

বাংলাদেশে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং সাইবার সিকিউরিটির সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে অনেকেই এখনো সঠিকভাবে নিজের ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সুরক্ষিত রাখতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ব্যক্তিগত হোম নেটওয়ার্কে ডিফল্ট পাসওয়ার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে, বা রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেট করা হচ্ছে না – যা হ্যাকারদের জন্য সহজ প্রবেশদ্বার খুলে দেয়।

ওয়াইফাই হ্যাকিংয়ের সাধারণ পদ্ধতিসমূহ: 

১. ব্রুট ফোর্স অ্যাটাক: পাসওয়ার্ড অনুমান করে প্রবেশ করার কৌশল। 

২. প্যাকেট স্নিফিং: নেটওয়ার্কে আদানপ্রদান হওয়া ডেটা গোপনে সংগ্রহ করা। 

৩. ফিশিং: ভুয়া ওয়াইফাই হটস্পট তৈরি করে ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলা। 

৪. DNS স্পুফিং: ব্যবহারকারীর ওয়েব ট্রাফিক অন্যদিকে রিডাইরেক্ট করা। 

৫. রাউটার কনফিগারেশন দুর্বলতা কাজে লাগানো।


ওয়াইফাই হ্যাক থেকে বাঁচার সেরা টিপস:

১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: পাসওয়ার্ড হলো আপনার নেটওয়ার্কের প্রথম সুরক্ষা স্তর। পাসওয়ার্ড হতে হবে কমপক্ষে ১২ অক্ষরের, যাতে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন থাকে। কখনোই আপনার নাম, ফোন নম্বর বা জন্মতারিখের মতো সহজে অনুমানযোগ্য তথ্য ব্যবহার করবেন না।

২. WPA3 এনক্রিপশন ব্যবহার করুন: বর্তমানে সবচেয়ে নিরাপদ ওয়াইফাই এনক্রিপশন প্রযুক্তি হলো WPA3। যদি আপনার রাউটার WPA3 সাপোর্ট করে, তবে সেটি সক্রিয় করুন। WPA2 এখনো প্রচলিত থাকলেও, WPA3 তার চেয়ে উন্নত ও নিরাপদ। WPA বা WEP ব্যবহার একেবারেই পরিহার করুন।

৩. রাউটারের ডিফল্ট লগইন তথ্য পরিবর্তন করুন: প্রায় সব রাউটারে ডিফল্ট ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড থাকে যেমন admin/admin অথবা admin/password। এগুলো পরিবর্তন না করলে যে কেউ রাউটারে প্রবেশ করে সেটিংস পরিবর্তন করতে পারে।

৪. রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেট রাখুন: রাউটার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়মিতভাবে সিকিউরিটি ফিক্স সহ ফার্মওয়্যার আপডেট দেয়। তাই আপনার রাউটার আপডেট রয়েছে কিনা তা নিয়মিত চেক করুন এবং প্রয়োজনে ম্যানুয়ালি আপডেট দিন।

৫. SSID হাইড করুন (ওয়াইফাই নাম গোপন রাখুন): যদিও এটি একমাত্র সুরক্ষা নয়, তবুও SSID হাইড করলে হ্যাকারদের নজরে পড়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমে যায়। এই ফিচারটি রাউটারের সেটিংসে গিয়ে সহজেই বন্ধ করা যায়।

৬. MAC অ্যাড্রেস ফিল্টারিং চালু করুন: MAC অ্যাড্রেস ফিল্টারিং হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে আপনি নির্দিষ্ট ডিভাইস ছাড়া অন্য কোন ডিভাইসকে আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে দেবেন না। এটি কার্যকর একটি নিরাপত্তা স্তর যোগ করে।

৭. গেস্ট নেটওয়ার্ক চালু করুন: বন্ধু বা অতিথিরা আপনার বাসায় এসে যখন ইন্টারনেট চায়, তখন মূল নেটওয়ার্কে তাদের যুক্ত না করে আলাদা গেস্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। এতে মূল নেটওয়ার্ক নিরাপদ থাকবে।

৮. রাউটারের রিমোট অ্যাক্সেস বন্ধ করুন: অনেক রাউটার রিমোট অ্যাক্সেস ফিচার চালু করে রাখে, যার ফলে আপনি দূর থেকে লগইন করতে পারেন। এই ফিচারটি হ্যাকারদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। তাই এটি নিষ্ক্রিয় রাখাই ভালো।

৯. ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন: রাউটারে বিল্ট-ইন ফায়ারওয়াল ফিচার থাকে। এটি সক্রিয় করলে অযাচিত অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়। এছাড়াও আপনি আপনার কম্পিউটারেও ফায়ারওয়াল ব্যবহার করতে পারেন।

১০. VPN ব্যবহার করুন: VPN ব্যবহার করলে আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক এনক্রিপ্ট হয়ে যায়, ফলে হ্যাকারদের জন্য আপনার তথ্য চুরি করা কঠিন হয়ে পড়ে।

১১. রাউটারটি নিরাপদ স্থানে রাখুন: শারীরিক নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ। রাউটার এমন জায়গায় রাখুন যেখানে বাইরের কেউ সহজে পৌঁছাতে না পারে।

১২. নিয়মিত ডিভাইস চেক করুন: রাউটারের অ্যাডমিন প্যানেলে গিয়ে Connected Devices অপশনে ক্লিক করে দেখে নিন কোন কোন ডিভাইস বর্তমানে আপনার নেটওয়ার্কে যুক্ত। অপরিচিত কিছু দেখলে সেটি ব্লক করুন।

১৩. রিয়েল-টাইম মনিটরিং অ্যাপ ব্যবহার করুন: অনেক রাউটার ব্র্যান্ড নিজস্ব অ্যাপ সরবরাহ করে যার মাধ্যমে আপনি রিয়েল-টাইমে ডিভাইস যুক্ত হওয়া, ব্লক করা এবং নেটওয়ার্ক ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যেমন TP-Link এর Tether App, ASUS Router App ইত্যাদি।

১৪. অটো কানেক্ট অপশন বন্ধ করুন: অনেক সময় মোবাইলে অটো কানেক্ট চালু থাকার কারণে এটি সহজেই ভুয়া নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে। অটো কানেক্ট অপশন বন্ধ রাখা নিরাপদ।

১৫. Two-Factor Authentication (2FA) চালু করুন: যদি আপনার রাউটার বা সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে 2FA অপশন থাকে, তাহলে তা চালু করুন। এতে হ্যাকারদের প্রবেশ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ টিপস:

  • ISP (ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী) নির্বাচন করার সময় তাদের সিকিউরিটি সাপোর্ট সম্পর্কে খোঁজ নিন। কিছু ISP রাউটার কনফিগারেশন সঠিকভাবে করে দেয়।

  • বাংলালিংক, গ্রামীণফোন বা বিটিসিএল-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অনেক ক্ষেত্রেই সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে – তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

  • পাবলিক প্লেসে ওয়াইফাই ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, এবং করতে হলে অবশ্যই VPN ব্যবহার করুন।

প্রযুক্তি ব্যবহার করুন সচেতনতার সাথে: 

প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই। সঠিকভাবে ওয়াইফাই ব্যবহার না করলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারদের হাতে পড়ে যেতে পারে, যার ফলাফল হতে পারে আর্থিক ক্ষতি, পরিচয় চুরি কিংবা সামাজিক বিব্রতকর পরিস্থিতি।

ওয়াইফাই হ্যাকিং এখন শুধু আন্তর্জাতিক কোনো সমস্যা নয়, বরং বাংলাদেশেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাইবার হুমকি হয়ে উঠেছে। তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সহজেই এই হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব। উপরোক্ত টিপসগুলো আপনি যদি সতর্কতার সাথে অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক অনেকটাই নিরাপদ থাকবে। মনে রাখবেন, নিরাপত্তা কোনো এককালীন কাজ নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সচেতন থাকুন, প্রযুক্তি নিরাপদ রাখুন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *