Home » » কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে যেভাবে গতি বাড়াবেন!

কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে যেভাবে গতি বাড়াবেন!

computer

কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে যেভাবে গতি বাড়াবেন!

অফিসের কাজ হোক বা ঘরে অনলাইনে পড়াশোনা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও এডিটিং, গেম খেলা – সব ক্ষেত্রেই কম্পিউটার অপরিহার্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই একটা সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হন, আর তা হলো – কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া।

স্লো হয়ে যাওয়া কম্পিউটার যেমন কাজের গতিতে বাধা সৃষ্টি করে, তেমনি বিরক্তির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তবে চিন্তার কিছু নেই। কিছু সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজেই আপনার কম্পিউটারের গতি অনেকাংশে বাড়াতে পারবেন।


১. কম্পিউটার স্লো হওয়ার সাধারণ কারণ

কম্পিউটার স্লো হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ আলোচনা করা হলো:

১.১ র‍্যাম (RAM) কম থাকা

একটি কম্পিউটার যদি কম র‍্যাম সমৃদ্ধ হয়, তবে অনেক অ্যাপ বা প্রোগ্রাম একসাথে চালালে গতি হ্রাস পায়। বিশেষ করে আজকাল অনেক সফটওয়্যার র‍্যাম হাংরি হয়ে থাকে।

১.২ হার্ডড্রাইভে জায়গা না থাকা

পুরো হার্ডড্রাইভ প্রায় পূর্ণ হয়ে গেলে সিস্টেম প্রয়োজনীয় টেম্পরারি ফাইল ও ক্যাশ রাখতে পারে না। এর ফলে গতি কমে যায়।

১.৩ অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোগ্রাম

অনেক সময় কম্পিউটারে এমন কিছু সফটওয়্যার ইনস্টল থাকে যেগুলো ব্যবহার করা হয় না কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে, এতে গতি হ্রাস পায়।

১.৪ ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হওয়া

কম্পিউটারে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থাকলে তা সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করে, ফলে কম্পিউটার স্লো হয়ে পড়ে।

১.৫ পুরনো অপারেটিং সিস্টেম বা আপডেটের অভাব

অনেক সময় পুরনো ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম অথবা ড্রাইভার ব্যবহার করায় কম্পিউটার স্লো হয়ে যেতে পারে।

১.৬ সিস্টেমে জমে থাকা জাঙ্ক ফাইল

অপসারিত সফটওয়্যারের অবশিষ্ট ফাইল, টেম্প ফাইল, ক্যাশ ও লগ ফাইল কম্পিউটারে জমা হতে থাকে, যা গতি কমাতে সাহায্য করে।


২. হার্ডওয়্যার ভিত্তিক সমাধান

২.১ র‍্যাম বাড়ানো

যদি আপনার কম্পিউটারে ৪ বা ৮ জিবি র‍্যাম থাকে, তাহলে আপনি ১৬ জিবিতে আপগ্রেড করলে কার্যকর ফলাফল পাবেন। র‍্যাম বাড়ানোর ফলে মাল্টিটাস্কিং অনেক দ্রুত হয়।

২.২ SSD ইনস্টল করা

HDD (হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ) তুলনায় SSD (সলিড স্টেট ড্রাইভ) অনেক দ্রুত। যদি আপনার কম্পিউটারে এখনো HDD থাকে, তাহলে SSD ব্যবহার শুরু করুন। শুধু অপারেটিং সিস্টেম SSD-তে রাখলেও গতি অনেক বাড়বে।

২.৩ প্রসেসর (CPU) আপগ্রেড

প্রয়োজনে আপনি কম্পিউটারের CPU আপগ্রেড করতে পারেন। বিশেষ করে যদি আপনি হেভি সফটওয়্যার বা গেম ব্যবহার করেন, তাহলে একটি শক্তিশালী প্রসেসর প্রয়োজন।

২.৪ কুলিং সিস্টেম ঠিক রাখা

অতিরিক্ত তাপও কম্পিউটারকে স্লো করে দিতে পারে। তাই ফ্যান বা কুলিং সিস্টেম ঠিকঠাক রাখুন।


৩. সফটওয়্যারভিত্তিক সমাধান

৩.১ স্টার্টআপ প্রোগ্রাম অপসারণ

স্টার্টআপে অনেক সফটওয়্যার চালু হয়ে যায়, যা কম্পিউটার অন হতে দেরি করায়।
উইন্ডোজে:

  • Ctrl + Shift + Esc চাপুন

  • Task Manager খুলে Startup ট্যাবে যান

  • অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামগুলো Disable করুন

৩.২ অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আনইনস্টল করুন

Control Panel থেকে বা Windows Settings > Apps এ গিয়ে এমন অ্যাপ গুলো আনইনস্টল করুন যেগুলো ব্যবহার করছেন না।

৩.৩ ডিস্ক ক্লিনআপ করুন

ডিস্ক ক্লিনআপ ব্যবহারে অপ্রয়োজনীয় জাঙ্ক ফাইল দূর হয়:

  • Start > Disk Cleanup লিখে সার্চ করুন

  • কাঙ্ক্ষিত ড্রাইভ সিলেক্ট করে Cleanup করুন

৩.৪ রেজিস্ট্রি ক্লিন করুন

CCleaner এর মতো টুল ব্যবহার করে উইন্ডোজের রেজিস্ট্রি ফাইল পরিষ্কার করতে পারেন। তবে সচেতনভাবে ব্যবহার করা জরুরি।

৩.৫ ভাইরাস স্ক্যান করুন

একটি শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস যেমন Kaspersky, BitDefender বা Windows Defender ব্যবহার করে স্ক্যান করুন এবং ম্যালওয়্যার দূর করুন।

৩.৬ অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন

Windows Update নিয়মিত করুন। এতে নিরাপত্তা ছাড়াও পারফর্মেন্স ইমপ্রুভমেন্ট আসে।


৪. ব্রাউজার ও ইন্টারনেট পারফর্মেন্স অপ্টিমাইজেশন

৪.১ ব্রাউজার এক্সটেনশন অপসারণ

অনেক ব্রাউজারে এক্সটেনশন ইনস্টল করা থাকে যা মেমোরি খরচ করে। অপ্রয়োজনীয় এক্সটেনশন রিমুভ করুন।

৪.২ ক্যাশ ও কুকিজ পরিষ্কার করুন

প্রতিনিয়ত ক্যাশ পরিষ্কার করলে ব্রাউজারের গতি বাড়ে।

৪.৩ লাইট ব্রাউজার ব্যবহার

Chrome বা Firefox এর বদলে Brave, Opera Mini বা Microsoft Edge ব্যবহার করতে পারেন যারা মেমোরি কম খরচ করে।


৫. উইন্ডোজ ইউজারদের জন্য অতিরিক্ত টিপস

৫.১ ভিজুয়াল এফেক্ট বন্ধ করুন

  • Control Panel > System > Advanced System Settings

  • Performance > Settings > “Adjust for best performance” অপশন দিন

৫.২ পাওয়ার সেটিংস পরিবর্তন

Control Panel > Power Options > High Performance সিলেক্ট করুন

৫.৩ টেম্প ফাইল মুছে ফেলুন

Run কমান্ডে গিয়ে %temp% লিখে Enter চাপুন > সব ফাইল সিলেক্ট করে Delete দিন


৬. ম্যাক ইউজারদের জন্য টিপস

৬.১ অ্যাপল মেনু > অ্যাকটিভিটি মনিটর চেক করুন

যে অ্যাপ বেশি CPU বা RAM খাচ্ছে তা বন্ধ করুন

৬.২ SMC এবং PRAM রিসেট করুন

Mac-এ অনেক সময় গতি কমে গেলে SMC (System Management Controller) এবং PRAM রিসেট করা কার্যকর হয়

৬.৩ স্টার্টআপ আইটেম কমান

System Preferences > Users & Groups > Login Items এ গিয়ে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার রিমুভ করুন


৭. লিনাক্স ইউজারদের জন্য টিপস

৭.১ লাইটওয়েট ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট ব্যবহার করুন

Gnome এর বদলে XFCE, LXDE, অথবা MATE ব্যবহার করুন

৭.২ টার্মিনাল ক্লিনআপ কমান্ড ব্যবহার করুন

sudo apt-get autoremove sudo apt-get clean sudo apt-get autoclean

৭.৩ Cron Jobs রিভিউ করুন

বারবার অটোমেটেড টাস্ক রান করা হলে লিনাক্স স্লো হতে পারে, তাই অপ্রয়োজনীয় Cron Job বন্ধ করুন।


৮. অতিরিক্ত টিপস

৮.১ থার্ড পার্টি টুল ব্যবহার করুন

  • CCleaner (উইন্ডোজ)

  • CleanMyMac X (ম্যাক)

  • BleachBit (উইন্ডোজ ও লিনাক্স)

৮.২ ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করে লোকাল স্পেস ফাঁকা করুন

Google Drive, OneDrive বা Dropbox ব্যবহার করে বড় ফাইল ক্লাউডে রেখে দিন

৮.৩ নিয়মিত রিস্টার্ট করুন

অনেক সময় অনেকক্ষণ কম্পিউটার চালু থাকলে তা ধীরগতির হয়। মাঝে মাঝে রিস্টার্ট দিলে RAM ও Cache ফ্রেশ হয়।


৯. যদি কিছুতেই গতি না বাড়ে?

সব কিছু করার পরেও যদি গতি না বাড়ে, তাহলে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:

  • হার্ডওয়্যার পুরনো হলে নতুন কম্পিউটার কেনা বিবেচনা করুন

  • SSD ইনস্টল বাধ্যতামূলক করুন

  • অপারেটিং সিস্টেম ক্লিন ইনস্টল দিন

  • বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন


কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে খুব সহজেই এই সমস্যা সমাধান করা যায়। উপরে বর্ণিত প্রতিটি ধাপ আপনি অনুসরণ করলে আপনার কম্পিউটারের গতি আগের তুলনায় অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখবেন, শুধু গতি বাড়ানো নয়, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কম্পিউটার যতটা সম্ভব দ্রুত এবং কার্যকর রাখতে চাইলে উপরের গাইডটি অনুসরণ করুন এবং কম্পিউটারকে তার সেরা পারফরম্যান্সে নিয়ে যান।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*