Home » » বাংলাদেশে Google Pay ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!

বাংলাদেশে Google Pay ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!

g-pay

বাংলাদেশে Google Pay ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!

২০২৫ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে গুগল ওয়ালেট, যা সাধারণভাবে গুগল পে নামে পরিচিত। এই সেবাটি প্রথমে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং এতে অংশ নিয়েছে Mastercard, Visa এবং Google। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় একটি বড় রকমের অগ্রগতি।

গুগল ওয়ালেট চালুর ফলে এখন সিটি ব্যাংকের Mastercard বা Visa কার্ডধারীরা তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কার্ড সংযুক্ত করে যেকোনো NFC-সক্ষম পস টার্মিনালে ফোনটি ট্যাপ করে লেনদেন করতে পারবেন। এর ফলে নগদ অর্থ বহন না করে আরও নিরাপদ ও সহজ উপায়ে কেনাকাটা সম্ভব হবে।

গুগল পে কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ

গুগল পে মূলত একটি ডিজিটাল ওয়ালেট যা NFC প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে। এটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি একটি সুবিধাজনক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যা তাদের ফোনকে একটি ভার্চুয়াল কার্ডে রূপান্তরিত করে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস রয়েছে, তবে সেগুলোর বেশিরভাগই QR কোড বা অ্যাপ-নির্ভর। গুগল পে-এর সংযোজন লেনদেন ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, নিরাপদ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে তুলবে।

গুগল পে ব্যবহারের উপায়

ধাপ ১: অ্যাপ ইন্সটল ও NFC চালু করা

  • আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে Google Wallet অ্যাপটি ইনস্টল বা আপডেট করুন।

  • ফোনের সেটিংসে গিয়ে NFC অপশনটি চালু করুন।

ধাপ ২: কার্ড সংযুক্ত করা

  • সিটি ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা মোবাইল অ্যাপে লগইন করুন।

  • আপনার Mastercard বা Visa কার্ড Google Wallet অ্যাপে যুক্ত করুন।

  • ব্যাংকের পক্ষ থেকে আসা ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে কার্ড সংযুক্তকরণ সম্পন্ন করুন।

ধাপ ৩: পেমেন্ট করা

  • দোকানে বা POS মেশিনে ফোনটি ট্যাপ করুন।

  • লেনদেন সম্পন্ন হলে ফোনে নোটিফিকেশন আসবে এবং POS রসিদ দেবে।

ধাপ ৪: লেনদেনের হিসাব রাখা

  • Google Wallet অ্যাপে আপনার প্রতিটি লেনদেনের বিবরণ থাকবে।

  • অ্যাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও থাকবে যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস আনলক বা PIN।

সুবিধাসমূহ

নিরাপত্তা

গুগল পে ব্যবহার করে লেনদেন করলে কার্ডের তথ্য সরাসরি বিক্রেতার কাছে যায় না। এর পরিবর্তে একটি নিরাপদ টোকেন ব্যবহৃত হয়, যা লেনদেনের সময় তৈরি হয় এবং একবারই ব্যবহৃত হয়। এতে করে তথ্য চুরি বা জালিয়াতির ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

গতি ও সুবিধা

অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারী এখন তাদের ফোনে কার্ড যুক্ত করে যেকোনো দোকানে তাড়াতাড়ি এবং সহজে লেনদেন করতে পারবেন। এতে সময় বাঁচে এবং টাকার খুচরার ঝামেলা থাকে না।

আন্তর্জাতিক ব্যবহার

গুগল পে এখন এমন একটি প্রযুক্তি যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিদেশেও কার্যকর। আপনি বিদেশ সফরে গেলে যদি POS টার্মিনাল NFC সমর্থন করে, তবে একই উপায়ে পেমেন্ট করতে পারবেন।

অন্যান্য মোবাইল পেমেন্টের সঙ্গে তুলনা

গুগল পে বনাম বিকাশ

  • গুগল পে-তে NFC প্রযুক্তির মাধ্যমে ফোন ট্যাপ করে লেনদেন করা যায়, যেখানে বিকাশে QR কোড স্ক্যান বা নম্বর টাইপ করতে হয়।

  • গুগল পে-তে ব্যাংক কার্ড সংযুক্ত থাকে, বিকাশে থাকে মোবাইল একাউন্ট।

গুগল পে বনাম নগদ

  • নগদ USSD ও অ্যাপনির্ভর, যেখানে গুগল পে সরাসরি POS মেশিনে ফোন ট্যাপ করেই লেনদেন করতে সক্ষম।

বর্তমান সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সীমাবদ্ধতা

  • বর্তমানে শুধুমাত্র সিটি ব্যাংকের Mastercard ও Visa কার্ডধারীদের জন্য উন্মুক্ত।

  • শুধু অ্যান্ড্রয়েড ও NFC-সক্ষম ফোনেই এই সুবিধা ব্যবহার করা যাচ্ছে।

  • দেশের অধিকাংশ POS টার্মিনাল এখনো NFC সমর্থিত নয়।

ভবিষ্যৎ

  • ধীরে ধীরে অন্যান্য ব্যাংককেও এই সেবার আওতায় আনা হবে।

  • দেশের বিভিন্ন দোকান ও সুপারশপগুলোতে NFC সমর্থিত POS টার্মিনাল বসানো হবে।

  • ব্যবহারকারীর অভ্যস্ততা বাড়ানোর জন্য সচেতনতা বাড়ানো হবে।

উপসংহার

গুগল পে-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত সংযোজন নয়, বরং আর্থিক খাতে একটি বড় অগ্রগতি। নগদবিহীন অর্থনীতির দিকে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যতে আরও ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এই সেবার সাথে যুক্ত হলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও সহজ, আধুনিক ও নিরাপদ হয়ে উঠবে।

আপনি যদি সিটি ব্যাংকের গ্রাহক হন এবং আপনার ফোনটি NFC-সক্ষম হয়, তাহলে এখনই Google Wallet অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং উপভোগ করুন আধুনিক, নিরাপদ ও দ্রুত লেনদেনের সুবিধা।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*