Home » » ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর জন্য যে কাজগুলো করতে হবে!

ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর জন্য যে কাজগুলো করতে হবে!

internet-speed

ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর জন্য যে কাজগুলো করতে হবে!

ইন্টারনেট ছাড়া জীবন কল্পনা করাই কঠিন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের ইন্টারনেট সংযোগটি খুব ধীরগতির হয়ে যায়, যার ফলে কাজের গতি কমে, ভিডিও দেখা যায় না, বা জরুরি Zoom মিটিং-এ বারবার ডিসকানেক্ট হয়ে যেতে হয়। এই সমস্যার পেছনে কারণ যেমন অনেক, তেমনি সমাধানও রয়েছে।


ইন্টারনেট স্পিড কম হওয়ার সাধারণ কারণসমূহ

১. রাউটারের ভুল অবস্থান
২. পুরোনো বা নিম্নমানের রাউটার ব্যবহার
৩. অনেক ডিভাইস একসাথে সংযুক্ত
৪. ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপস ডেটা ব্যবহার করছে
৫. দুর্বল ওয়াই-ফাই সংকেত
৬. কমপিউটারে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার
৭. আইএসপি (ISP) গতি সীমাবদ্ধ করে রাখছে
৮. ওয়াই-ফাই চ্যানেল কনজেশন
৯. DNS সমস্যার কারণে স্লো ব্রাউজিং
১০. অপটিমাইজ না করা ডিভাইস


১. রাউটারের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ

রাউটারের অবস্থান ইন্টারনেট স্পিডের উপর বড় প্রভাব ফেলে। রাউটার যদি ঘরের কোণায় বা ফ্লোরে পড়ে থাকে, তবে সিগন্যাল দুর্বল হয়। রাউটারকে ঘরের মাঝখানে, একটু উঁচু স্থানে এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে স্থাপন করুন।


২. পুরোনো রাউটার পরিবর্তন করা

অনেক সময় রাউটারটি অনেক পুরোনো হয়ে যায় এবং নতুন প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পারে না। সেক্ষেত্রে Wi-Fi 5 বা Wi-Fi 6 সমর্থিত রাউটার ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।


৩. ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বন্ধ রাখা

কম্পিউটার বা মোবাইলে এমন অনেক অ্যাপস থাকে যা ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা ব্যবহার করে, যেমনঃ ক্লাউড ব্যাকআপ, সফটওয়্যার আপডেট, গেমিং আপডেট ইত্যাদি। এই অ্যাপসগুলো বন্ধ রাখলে ইন্টারনেট গতি অনেকটাই বাড়ে।


৪. ব্যবহার না করা ডিভাইস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন

একই ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে যদি অনেক ডিভাইস যুক্ত থাকে, তাহলে প্রতিটি ডিভাইস ইন্টারনেট গতি ভাগ করে নেয়। ফলে প্রধান ডিভাইসের গতি কমে যায়। ব্যবহার না করা ডিভাইসগুলোর কানেকশন বন্ধ করে রাখুন।


৫. DNS সার্ভার পরিবর্তন

ইন্টারনেট ব্রাউজিং স্পিড বাড়ানোর জন্য ভালো DNS ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় ডিফল্ট DNS ধীরগতির হয়। Google DNS বা Cloudflare DNS ব্যবহার করলে ব্রাউজিং স্পিড উন্নত হতে পারে।


৬. ব্রাউজার অপ্টিমাইজেশন

আপনার ব্যবহৃত ওয়েব ব্রাউজারটি যদি অনেক ক্যাশ, কুকিজ ও এক্সটেনশন দ্বারা ভারী হয়ে থাকে, তাহলে পেজ লোডিং টাইম বাড়ে। নিয়মিত ক্যাশ ও কুকিজ ক্লিয়ার করা উচিত এবং অপ্রয়োজনীয় এক্সটেনশন রিমুভ করা বাঞ্ছনীয়।


৭. Wi-Fi চ্যানেল ও ব্যান্ড পরিবর্তন

একই এলাকায় অনেক রাউটার একই চ্যানেল ব্যবহার করলে ইন্টারফেয়ারেন্স হয়। রাউটারের সেটিংসে গিয়ে কম ব্যবহার হওয়া চ্যানেল নির্বাচন করুন। এছাড়াও, যদি রাউটার 5GHz এবং 2.4GHz উভয় ব্যান্ড সাপোর্ট করে, তবে 5GHz ব্যবহার করলে গতি বেশি পাওয়া যাবে, বিশেষ করে রাউটারের কাছাকাছি অবস্থানে।


৮. রাউটার রিস্টার্ট ও ফার্মওয়্যার আপডেট

রাউটার দীর্ঘদিন চালু থাকলে এর পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে। সপ্তাহে অন্তত একবার রিস্টার্ট করলে অনেক সময় গতি ফিরে আসে। এছাড়া রাউটারের ফার্মওয়্যার যদি পুরোনো হয়, তবে সেটি আপডেট করা অত্যন্ত প্রয়োজন।


৯. QoS (Quality of Service) ব্যবহার

QoS সেটিংস ব্যবহার করে আপনি নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন বা ডিভাইসকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি চাইলে ভিডিও স্ট্রিমিং বা গেমিং ডিভাইসকে অধিক ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ দিতে পারেন যাতে অন্য ডিভাইসের কারণে স্পিড কমে না যায়।


১০. ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস স্ক্যান করুন

কম্পিউটারে কোনো ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থাকলে তা ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা ব্যবহার করে থাকে, যার ফলে ইন্টারনেট গতি ব্যাহত হয়। ভালো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে নিয়মিত স্ক্যান করলে আপনি নিরাপদ থাকবেন এবং ইন্টারনেট স্পিডও ঠিক থাকবে।


১১. ওয়্যারড কানেকশন ব্যবহার

যদি সম্ভব হয়, তাহলে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে Ethernet (ল্যান) ক্যাবল ব্যবহার করুন। ওয়াই-ফাই এর তুলনায় ওয়্যারড সংযোগ অনেক দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য।


১২. Mesh Network বা Wi-Fi Extender ব্যবহার

বড় বাড়ি বা অফিসে Wi-Fi সংকেত দুর্বল হয়। এমন ক্ষেত্রে Wi-Fi রেঞ্জ এক্সটেন্ডার অথবা Mesh Router System ব্যবহার করলে পুরো স্থানে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল ইন্টারনেট পাওয়া যায়।


১৩. ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করুন

আপনার স্পিড সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য নির্ভরযোগ্য স্পিড টেস্ট ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করুন। যদি স্পিড অনেক কম থাকে তবে আপনার ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন।


১৪. অফ-পিক সময় ইন্টারনেট ব্যবহার

যখন সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে (সাধারণত সন্ধ্যার দিকে), তখন সার্ভারে চাপ বেশি পড়ে এবং স্পিড কমে যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ ডাউনলোড বা ভিডিও স্ট্রিমিং অফ-পিক সময়ে করলে ভালো অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।


১৫. ভালো মানের ইন্টারনেট প্যাকেজ নির্বাচন

সবশেষে যদি আপনি সবকিছু করেও স্পিডে সন্তুষ্ট না হন, তবে আপনার ইন্টারনেট প্যাকেজটি হয়তো আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নয়। সেক্ষেত্রে উচ্চ স্পিডের কোনো প্যাকেজে আপগ্রেড করুন বা ভালো ISP-তে পরিবর্তন করুন।


ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো একবারেই সম্ভব, তবে তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ও সচেতনতা দরকার। শুধু রাউটার পরিবর্তন করলেই হবে না, বরং রাউটারের অবস্থান, চ্যানেল নির্বাচন, DNS পরিবর্তন, ডিভাইস অপ্টিমাইজেশন এবং ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ—এই সবগুলো একত্রে প্রয়োগ করতে হবে।

আপনি যদি উপরের প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার ইন্টারনেট গতি অনেকাংশে উন্নত হবে এবং আপনি আগের তুলনায় অনেক দ্রুতগতির সংযোগ উপভোগ করতে পারবেন।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*