ইথিক্যাল হ্যাকিং টুলস কী এবং কেন প্রয়োজন?
ইথিক্যাল হ্যাকিং টুলস হলো সেইসব বিশেষ সফটওয়্যার ও ফ্রেমওয়ার্ক যা ব্যবহার করে ইথিক্যাল হ্যাকাররা নেটওয়ার্ক, সার্ভার বা অ্যাপ্লিকেশনের নিরাপত্তা পরীক্ষা করেন। এগুলো মূলত দুর্বলতা চিহ্নিত করা, এক্সপ্লয়েটেশন টেস্ট করা, এবং সাইবার আক্রমণের অনুকরণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইথিক্যাল হ্যাকিং টুলের গুরুত্ব
-
সিস্টেমের ভলনারেবিলিটি খুঁজে বের করা
-
ম্যালওয়্যার বা র্যানসমওয়্যার আক্রমণ প্রতিরোধ করা
-
নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
-
ডেটা লিক প্রতিরোধ করা
-
কোম্পানির সিকিউরিটি অডিট সম্পূর্ণ করা
কেন সঠিক টুল জানা জরুরি?
কারণ সঠিক টুল ছাড়া এথিক্যাল হ্যাকিং অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রতিটি টুলের নিজস্ব কাজ রয়েছে। যেমন কেউ নেটওয়ার্ক স্ক্যানিংয়ে দক্ষ, আবার কেউ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের দুর্বলতা বের করতে ব্যবহৃত হয়। তাই এথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে আপনার জানা দরকার Top 10 Ethical Hacking Tools You Should Know About।
এবার আমরা একে একে টুলগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
1. Nmap (Network Mapper)
Nmap হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক স্ক্যানিং টুল। এটি এথিক্যাল হ্যাকারদের জন্য অপরিহার্য।
বৈশিষ্ট্য
-
ওপেন সোর্স এবং ফ্রি
-
দ্রুত নেটওয়ার্ক স্ক্যান করতে পারে
-
হোস্ট এবং সার্ভিস ডিটেকশন করতে সক্ষম
ব্যবহার
Nmap দিয়ে হ্যাকাররা নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের সকল সক্রিয় হোস্ট চিহ্নিত করতে পারেন। এছাড়া কোন কোন পোর্ট খোলা আছে, কোন সার্ভিস চলছে—এসব তথ্যও পাওয়া যায়।
গুরুত্ব
এই তথ্যগুলো নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি টেস্টিংয়ে অত্যন্ত কার্যকর। একটি সিস্টেমে কোন পোর্ট খোলা আছে তা জানলেই সম্ভাব্য আক্রমণের জায়গা চিহ্নিত করা যায়।
2. Wireshark
Wireshark হলো একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রোটোকল অ্যানালাইজার।
বৈশিষ্ট্য
-
ওপেন সোর্স সফটওয়্যার
-
রিয়েল-টাইম নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বিশ্লেষণ
-
শতাধিক প্রোটোকল ডিকোড করতে সক্ষম
ব্যবহার
এটি ব্যবহার করে এথিক্যাল হ্যাকাররা ডেটা প্যাকেট ক্যাপচার ও অ্যানালাইসিস করতে পারেন। যেমন, কোনো নেটওয়ার্কে অস্বাভাবিক ডেটা ট্রাফিক চলছে কিনা তা সহজেই বোঝা যায়।
গুরুত্ব
নেটওয়ার্কে ডেটা লিক বা ম্যালওয়্যার কার্যকলাপ সনাক্ত করার ক্ষেত্রে Wireshark অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
3. Metasploit Framework
Metasploit হলো সবচেয়ে পরিচিত পেনিট্রেশন টেস্টিং টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
ওপেন সোর্স হলেও প্রিমিয়াম সংস্করণও আছে
-
এক্সপ্লয়েটেশন টেস্টিংয়ের জন্য সেরা টুল
-
প্রচুর প্রি-বিল্ট এক্সপ্লয়েট ডাটাবেস
ব্যবহার
Metasploit দিয়ে এথিক্যাল হ্যাকাররা সিস্টেমের দুর্বলতা ব্যবহার করে আক্রমণের অনুকরণ করতে পারেন। এটি দিয়ে এক্সপ্লয়েটেশন পরীক্ষা করে প্রকৃত হ্যাকারদের আক্রমণ কৌশল বোঝা যায়।
গুরুত্ব
প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিরাপত্তা অডিটের সময় Metasploit ব্যবহার করে থাকে।
4. Aircrack-ng
Aircrack-ng মূলত ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক হ্যাকিং টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
ওপেন সোর্স
-
ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড ক্র্যাকিং সাপোর্ট
-
WPA, WPA2, WEP এনক্রিপশন ভাঙতে সক্ষম
ব্যবহার
এটি ব্যবহার করে হ্যাকাররা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে পারেন। দুর্বল পাসওয়ার্ড হলে এটি সহজেই ভেঙে ফেলে।
গুরুত্ব
ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে Aircrack-ng অপরিহার্য টুল।
5. John the Ripper
John the Ripper হলো জনপ্রিয় পাসওয়ার্ড ক্র্যাকিং টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
ওপেন সোর্স
-
বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন সাপোর্ট করে
-
উচ্চগতির পাসওয়ার্ড রিকভারি সক্ষমতা
ব্যবহার
এটি দিয়ে এথিক্যাল হ্যাকাররা দুর্বল পাসওয়ার্ড চিহ্নিত করতে পারেন। এটি সাধারণত ডিকশনারি আক্রমণ ও ব্রুট ফোর্স আক্রমণ ব্যবহার করে।
গুরুত্ব
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড নীতি কতটা শক্তিশালী, তা যাচাই করার জন্য এই টুল অপরিহার্য।
6. Burp Suite
Burp Suite হলো ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন পেনিট্রেশন টেস্টিং টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
ফ্রি ও প্রফেশনাল সংস্করণ রয়েছে
-
ওয়েব ট্রাফিক ইন্টারসেপ্ট ও অ্যানালাইসিস
-
ভলনারেবিলিটি স্ক্যানিং সাপোর্ট
ব্যবহার
Burp Suite ব্যবহার করে এথিক্যাল হ্যাকাররা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের দুর্বলতা খুঁজে বের করেন। যেমন SQL ইনজেকশন, XSS ইত্যাদি সনাক্ত করতে পারে।
গুরুত্ব
যেসব প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ চালায়, তাদের সিকিউরিটি অডিটে Burp Suite অপরিহার্য।
7. Hydra
Hydra হলো পাসওয়ার্ড ব্রুট ফোর্স টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
দ্রুততম পাসওয়ার্ড ক্র্যাকিং টুলগুলোর একটি
-
SSH, FTP, Telnet সহ বিভিন্ন প্রোটোকল সাপোর্ট
-
ওপেন সোর্স
ব্যবহার
Hydra দিয়ে এথিক্যাল হ্যাকাররা দুর্বল লগইন ক্রেডেনশিয়াল চিহ্নিত করতে পারেন। এটি বহুল ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড অডিটিং টুল।
গুরুত্ব
প্রতিষ্ঠানের লগইন সিস্টেম কতটা সুরক্ষিত তা পরীক্ষা করার জন্য Hydra ব্যবহৃত হয়।
8. Nessus
Nessus হলো ভলনারেবিলিটি স্ক্যানার টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
বাণিজ্যিক টুল হলেও বহুল ব্যবহৃত
-
দুর্বলতা সনাক্তকরণে উচ্চ সফলতা
-
নিয়মিত আপডেটেড ডাটাবেস
ব্যবহার
Nessus দিয়ে এথিক্যাল হ্যাকাররা সার্ভার, নেটওয়ার্ক ও অ্যাপ্লিকেশনের দুর্বলতা খুঁজে বের করেন।
গুরুত্ব
প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়মিত সিকিউরিটি অডিটে Nessus ব্যবহার করে থাকে।
9. SQLmap
SQLmap হলো একটি শক্তিশালী অটোমেটেড SQL ইনজেকশন টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
ওপেন সোর্স
-
বিভিন্ন ধরনের ডাটাবেস সাপোর্ট করে
-
ডাটাবেস এক্সট্রাকশন সম্ভব
ব্যবহার
এটি দিয়ে ওয়েবসাইট বা অ্যাপে SQL ইনজেকশন দুর্বলতা খুঁজে বের করা যায়।
গুরুত্ব
যেসব ওয়েবসাইট ডাটাবেস-ভিত্তিক, তাদের জন্য SQLmap অপরিহার্য সিকিউরিটি টুল।
10. Maltego
Maltego হলো একটি অসাধারণ ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (OSINT) টুল।
বৈশিষ্ট্য
-
গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস
-
ডেটা রিলেশন ভিজ্যুয়ালাইজেশন
-
সামাজিক মাধ্যম ও ডোমেইন বিশ্লেষণ
ব্যবহার
Maltego ব্যবহার করে এথিক্যাল হ্যাকাররা ডোমেইন, ইমেইল, ফোন নম্বর ও সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেন।
গুরুত্ব
সাইবার তদন্ত ও ডিজিটাল ফরেনসিক্সে Maltego খুবই কার্যকর।
0মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions