Home » » বিল গেটস এর জীবনী বাংলায়

বিল গেটস এর জীবনী বাংলায়

Bill Gates Biography

বিল গেটস এর জীবনী বাংলায়

উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস
১৯৭৫ সালে উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস [জনম অক্টোবর ২৮, ১৯৯৫] ও তাঁর বন্ধু পল এলেন মাইক্রোসফ্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ সালে আইবিএম কোম্পানি তাদের বানানো পার্সোনাল কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার জন্য মাইক্রোসফ্টকে দায়িতব দেয়। বিকশিত হয় এমএসডস (MSDOS-Microsoft Disk Operating System) এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ কম্পিউটার বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোসফ্টের অপারেটিং সিস্টেম সফ্টওয়্যার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
 
বিল গেটস এমন একজন ব্যক্তি, কম্পিউটার সফটওয়্যারে যার ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং কাজ বদলে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের জীবনধারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটার ছাড়া চলে না। আর এ কম্পিউটার ব্যবহারের পরিধি বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে গেটসের। মার্কিন মুলুকে বলা হয়ে থাকে এডিসন যেমন বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করে সারা দুনিয়া আলোকিত করেছেন, তেমনি বিল গেটস সফটওয়্যারের মাধ্যমে সভ্য জগতের আধুনিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

উইলিয়াম (বিল) হেনরি গেটস বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবং প্রধান সফটওয়্যার স্থপতি। বিশ্বের সব মানুষ ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িকভাবে কম্পিউটার বিষয়ক বিভিন্ন সেবা পেয়ে আসছে এ কোম্পানি থেকে। তিনি বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৬৫০ কোটি মার্কিন  ডলারের মালিক। বিশ্বের প্রায় শ’খানেক দেশে তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে। কর্মী সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার।

বিল গেটসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর। জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল।  সেখানে দুই বোনের সঙ্গে বেড়ে ওঠেন তিনি। তাঁর বাবা উইলিয়াম এইচ. গেটস (দ্বিতীয়) পেশায় একজন অ্যাটর্নি ছিলেন। প্রয়াত মা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট ছিলেন। এছাড়া ইউনাইটেড ওয়ে ইন্টারন্যাশনালেনর চেয়ারম্যান ছিলেন।

গেটস যথাসময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে বেসরকারি লেকসাইড স্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই সফটওয়্যারের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল তার। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। এক্ষেত্রে তিনি সবটুকু জ্ঞান অর্জন করেন নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায়। ছাত্রজীবনে গেটস পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী ছিলেন না। পরীক্ষার ফলাফলও ছিল সাদামাটা। তার সব মনোযোগ ছিল মূলত কম্পিউটারকে ঘিরে।

১৯৭৩ সালে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হন গেটস। যেখানে গণিত ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। মাইক্রোসফটের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ বলমারও একই বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি যে হলরুমে থাকতেন, তার নিচতলায় থাকতেন বিল গেটস। হার্ভার্ডে পড়াশোনা করার সময় প্রথম মাইক্রো কম্পিউটার এমআইটিএস অলটেয়ারের জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ BASIC এর একটি ভার্সন তৈরি করেন। এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেন বাল্যবন্ধু পল অ্যালেন।

বিল গেটস মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, কম্পিউটার একদিন প্রতিটা আধুনিক অফিসের ডেস্কটপে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠবে। এ বিশ্বাসে অটল থেকে তারা দুই বন্ধু মিলে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য সফটওয়্যারের উন্নয়ন ঘটাতে থাকেন। গেটসের এই সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং বাস্তবমুখো পদক্ষেপ মাইক্রোসফটের বিশাল সাফল্য এনে দেয় তাকে।

গেটসের নেতৃত্বে মাইক্রোসফটের মিশন অবিরাম এগিয়ে চলেছে। দিনকে দিন মাইক্রোসফট প্রযুক্তির উন্নতি ঘটছে। সহজতর হয়ে আসছে কম্পিউটারের ব্যবহার। নির্মাণ ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক ব্যয় হ্রাসের ধারা অব্যাহত থাকায় ক্রমশ দাম করে আসছে কম্পিউটারের। সেই সঙ্গে কম্পিউটার ব্যবহারের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় ব্যবহারকারীদের জন্যও উপভোগ্য হয়ে উঠছে যন্ত্রটি। বর্তমানে মাইক্রোসফটের বাণিজ্যিক বিস্তৃতি এত বিশাল, ২০০৫ সালে এর গবেষণা ও উন্নয়ণ কাজে প্রায় ৬২০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।

বিল গেটস ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান হচ্ছে জেনিফার ক্যাথেরিন (জন্ম ১৯৯৬), ররিজন গেটস (জন্ম ১৯৯৯) ও ফোয়েবি অ্যাডেলি গেটস (জন্ম ২০০২)।

বিল গেটসের জীবনে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি হচ্ছে ১৯৭৫ সালে বন্ধু অ্যালেনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট কোম্পানি। ১৯৭৯ সালে তিনি তার মাইক্রোসফট নিয়ে ওয়াশিংটন চলেন যান। ১৯৮১ সালের আগস্ট ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনের (আইবিএম) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। বাজারে আসে এমএস-ডস ১.০ ভার্সন।

১৯৮৩ সালে মাইক্রোসফট কম্পিউটার জগতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ রাখে। এপ্রিলে এ কোম্পানির মাধ্যমে সবাই ‘মাউস’ নামে বিশেষ যন্ত্রটির সঙ্গে পরিচিত হয়। নভেম্বরে বিশ্ববাসী পরিচিত হয় উইন্ডোজের সঙ্গে।

১৯৮৬ সালের ১৩ মার্চ মাইক্রোসফট স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে চলে আসে। ৩০ বছর পেরোতে না  পেরোতে বিল গেটস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সেরা ধনী বনে যান। ১৯৯০ সালে তার কোম্পানি আরেকটি বড় ধরণের কৃতিত্ব অর্জন করে। সে বছর ২২ মে এ কোম্পানি থেকে বাজারে আসে উইন্ডোজ ৩.০০ ভার্সন। ১৯৯২ সালের জুনে গেটস তার কৃতিত্বের জন্য অর্জন করেন ‘ন্যাশনাল মেডেল অভ টেকনোলজি’ অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৮ সালের ২৫ জুন মাইক্রোসফট কোম্পানি ‘উইন্ডোজ-৯৮’ বাজারজাত করে।

১৯৯৫ সালে বিল গেটস লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এ সময় ’দ্যা রোড অ্যাহেড’ বইটি প্রকাশিত হয়। ১৯৯৯ সালে ‘বিজনেস দ্য স্পিড অব থট’ বইটি প্রকাশিত হয়। ২০০০ সালে স্ত্রী মেলিন্ডার সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ২০০১ সালের ৩১ মে মাইক্রোসফট কোম্পানি অফিস এক্সপি বাজারজাত করে। একই বছর ২৫ অক্টোবর বাজারে আসে উইন্ডোজ এক্সপি। ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর ছোট আকৃতির কম্পিউটার বাজারজাত করতে থাকে মাইক্রোসফট। এতে বেশ সাফল্যও আসে। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মাইক্রোসফট শেয়ার হোল্ডারদের জন্যে প্রথম লভ্যাংশ ঘোষণা করে। একই বছরের ২৪ এপ্রিল তারা উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৩ বাজারজাত করে। ২১ অক্টোবর তারা বাজারে নিয়ে আসে অফিস সিস্টেম। এ কোম্পানি থেকে প্রতি বছরই বাজারে নতুন নতুন পণ্য ছাড়া হচ্ছে। পরবর্তীতে উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮, উইন্ডোজ ১০ বাজারজাত আসে। এছাড়া মাইক্রোসফট অফিস এক্সপি এর পর মাইক্রোসফট অফিস ২০০৭, মাইক্রোসফট অফিস ২০১০, মাইক্রোসফট অফিস ২০১৩, মাইক্রোসফট অফিস ২০১৬ এবং মাইক্রোসফট অফিস ২০১৯ বাজারে আসে।

মাইক্রোসফট প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের কাছে কম্পিউটার পৌঁছে দেয়া। তাদের মূল নীতিমালা হচ্ছে- সততা বজায় রাখা, ক্রেতা ও অংশীদারদের সন্তুষ্ট রাখা, সবাইকে সম্মান করা, প্রযুক্তিকে সহজতর করতে প্রয়োজনে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ, কর্মীদের কর্মোদ্যম বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, ব্যবসায়িক অংশীদার ও শেয়ারহোল্ডারসহ ক্রেতাদের উন্নত সেবা প্রদান করা।

মাইক্রোসফট কম্পিউটার জগতে উইন্ডোজ, অফিস, উইন্ডোজ সার্ভার সিস্টেম, ডেভলপার টুলস, বিজনেস সলিউশন, গেমস ও এক্স বক্স, এমএসএন, উইন্ডোজ মোবাইল এবং প্রোডাক্ট ক্যাটালগ সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া ডাউনলোডস, মাইক্রোসফট আপডেটস, সিকিউরিটি, কমিউনিটিজ, সাপোর্ট, লার্নিং টুলস, ইভেন্টস ও ওয়েবক্যাসটেস সুবিধা দিয়ে থাকে।

২০০৪ সালে মাইক্রোসফট বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে। এর কার্যক্রমের বর্ষপূর্তিতে ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর বিল গেটস সস্ত্রীক ঢাকায় আসেন।

এখানে ১৯৯৯ সালে তার প্রকাশিত বই বিজনেস অ্যাট দ্য স্পিড অব থট বর্তমানে ৬০টির বেশি দেশে পাওয়া যায়। অনুদিত হয়েছে ২৫টি ভাষায়। কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন কৌশলে ব্যবসায়িক সমস্যাগুলো সমাধানের উপায় বাতলানো হয়েছে বইটিতে। বইটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ইউএস টুডে, দ্য ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল, আমাজন ডটকম এসব ওয়েবসাইটে দীর্ঘদিন বেস্ট সেলারের তালিকায় ছিল। আগের বই ’দ্য রোড অ্যাহেড’ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমের বেস্ট সেলারের তালিকায় ছিল টানা সাত সপ্তাহ।

Contact form

Name

Email *

Message *