কাগজ আবিষ্কার করেন কে
কাই লুন (Cai Lun) / টি সাই লুঁ (Ts'ai Lun)
কাগজ উদ্ভাবক হলেন কাই লুন তবে তিনি টি সাই লুঁ নামে পরিচিত।
আদিম যুগে মানুষ পাথরে খোদাই করে, নরম মাটির ফলকে, গাছের ছাল, তালপাতা এমনকি পশুর চামড়ার ওপর ছবি এঁকে ও লিখে মনের ভাব প্রকাশ করেছে।
৬০০ বছরেরও আগে মিশরে প্যাপিরাস গাছের কচি ছাল পিটিয়ে কাগজের মত একটি জিনিস তৈরি করে তাতে লেখা হয়েছিল। এই প্যাপিরাস থেকে পেপার শব্দটি এসেছে।
কাগজ তৈরি করতে প্রথমে শিখেছিল চীনদেশের লোকেরা। ১০৫ খ্রীঃ টি-সাই-লুঁ নামক এক চীনদেশের লোক তিসি শনের তন্তু থেকে মণ্ড তৈরি করে তার থেকে পাতলা চাদরের মত কাগজ তৈরি করেন। ঘাস, বাঁশ প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকেও মণ্ড তৈরি করে কাগজ তৈরি করা হতো। অস্টম শতাব্দীতে চীনাদের প্রচেষ্টায় প্রথম কাগজ শিল্প গড়ে ওঠে সমরখন্দে।
প্রথমদিকে ছেঁড়া কাপড় থেকে হাতে কাগজ তৈরি করা হতো। ছেঁড়া পরিস্কার কাপড়কে ভিজিয়ে তাকে থেতো করে দেওয়া হতো। ফলে কাপড় ছিড়ে টুকরো হয়ে আশ বেরিয়ে আসত, তাতে জল মিশিয়ে পাতলা মন্ডের মত করা হতো। এই মন্ডকে চালনিতে ছেকে তারপর বেলন দিয়ে বেলে কাগজ তৈরি করতো।
পরবর্তীকালে ১৮৬৫ সালের পর থেকে বৈজ্ঞানিক ট্রিলঘম্যান আবিষ্কৃত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাগজ তৈরি হতে থাকে। এভাবে তৈরির জন্য লাগে সেলুলোজ। এই সেলুলোজ পাওয়া যায় পাইন ও ফার গাছের কাঠ, বাঁশ, সাবাই ঘাস প্রভৃতি থেকে। কাগজ তৈরির জন্য কাঠ বা বাশের ছোট ছোট টুকরোকে সালফিউরাস অ্যাসিড ও চুন মিশিয়ে ঘূর্ণায়মান যাতাকলে বের করে নিয়ে তৈরি হয় নরম মন্ড, সাদা পরিস্কার কাগজ তৈরির জন্য সেলুলোজ থেকে লিগনিনকে আলাদা করতে হয়। তাই মন্ডের মধ্যে কস্টিক সোডা মেশানো হয় ফলে লিগনিন দ্রবীভুত হয় ও মন্ড নরম হয় এবং তাপ ও চাপ দিলেই লিগনিন আলাদা হয়ে যায়। লিগনিন মুক্ত সেলুলোজ মন্ডকে জলে ধুয়ে পরিস্কার করে তারপর গাঢ় করে ক্লোরিন গ্যাসের সাহায্যে পরিস্কার সাদা রঙের করা হয়।
কাগজকে শক্ত ও মসৃণ করার জন্য বিটার যন্ত্রে ফেলে সেলুলোজ মন্ডকে সাইজিং করে নিতে হয়। সাইজিং করার সময় ক্যালসিয়াম সালফেট, বেরিয়াম সালফেট প্রভৃতি দেওয়া হয়। সাইজিং হয়ে গেলে মন্ডকে কাগজের আকার দেওয়ার জন্য ফোর ড্রাইনার যন্ত্রে দেওয়া হয়। যন্ত্র থেকে বের হওয়া কাগজ প্রথমে ভিজে থাকে। তাকে শুকিয়ে মসৃণ করে মাপ অনুযায়ী কেটে বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions