ভারত সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ এশিয়া অংশে ভারতের অবস্থান। এটি ৮°৪' উত্তর অক্ষরেখা থেকে ৩৭°৬' উত্তর অক্ষরেখা এবং ৬৮°৭' পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ৯৭°২৫' পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। এর উত্তরে হিমালয় পর্বত, চীন, নেপাল ও ভুটান, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর ও শ্রীলংকা, পূর্বে মিয়ানমার, বঙ্গোপসাগর ও পূর্বাংশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশ, এবং পশ্চিমে পাকিস্তান ও আরব সাগর অবস্থিত। ভারতের উপকূল রেখার দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার এবং স্থল সীমারেখার দৈর্ঘ্য ১৫,২০০ কিলোমিটার। দেশটি ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এর রাজধানী নয়াদিল্লী। ২৯টি অঙ্গরাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য নিয়ে ভারত গঠিত (চিত্র ২.৩.১)। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এদেশের আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গকিলোমিটার। এটি পূর্ব-পশ্চিমে ২,৯৩৩ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৩,২১৪ কিলোমিটার বিস্তৃত। ভারতের নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কৃষ্ণা, কাবেরী, নর্মদা ইত্যাদি। ভারতের সংবিধানে ২২টি ভাষা স্বীকৃত রয়েছে। বিগত কয়েক দশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। সেইসাথে বেড়েছে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা।
জনসংখ্যা ও শিক্ষা : ভারতের জনসংখ্যা ১৩২৮.৯ মিলিয়ন এবং বৃদ্ধির হার ১.৫% (পিআরবি, ২০১৬)। গড় ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪১ জন। ভারতের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ এবং সবচেয়ে কম অরুণাচল প্রদেশে। এদেশে ২০১৫ সালে শিক্ষার হার ছিল (১৫+ বছর) ৭২% (ইউনেস্কো)।
ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু : ভারত একটি বিশালাকার দেশ। এর ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্রময়। গঠন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভূ-প্রকৃতিকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। যথা- বৃহত্তর পার্বত্য অঞ্চল, ইন্দো-গঙ্গা সমভূমি অঞ্চল, মরু অঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সামুদ্রিক জলবেষ্টিত উপদ্বীপ অঞ্চল। দেশটির উত্তর-পশ্চিম হতে পূর্ব পর্যন্ত হিমালয় পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। কাশ্মীর থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত হিমালয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৪০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২৪০ থেকে ৩২০ কিলোমিটার। ভারতের বিভিন্ন মালভূমির মধ্যে দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অন্যতম। এদেশের মরু অঞ্চলটি পাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণে এবং আরাবলস্নী পর্বতের পশ্চিম দিকে সমগ্র রাজস্থান জুড়ে বিস্তৃত। ভূ-প্রকৃতির ন্যায় ভারতের জলবায়ুও বৈচিত্র্যময়। দেশটিতে যেমন বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চল রয়েছে, তেমনি বৃষ্টিহীন শুষ্ক অঞ্চল আছে। তবে সামগ্রিকভাবে ভারত ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত। এদেশের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা যায়।
যথা-
১. গ্রীষ্মকাল (মার্চ- মে);
২. বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর);
৩. শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং
৪. শীতকাল (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)।
খনিজ সম্পদ ও শিল্প : ভারত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটিতে ধাতব এবং অধাতব উভয় প্রকার খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম কয়লা, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, গ্যাস, খনিজ তেল, ক্রোমিয়াম, চুনাপাথর, ডলোমাইট, জিপসাম, কেওলিন, ফ্লুরাইড, পাথর, অভ্র, গ্রাফাইট, ম্যাগনেসাইট, ইউরেনিয়াম, টাইটেরিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি। অন্যদিকে, ভারতে শিল্প বিকাশের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং শক্তিসম্পদ থাকায় শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটছে। প্রধান শিল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে কার্পাস, পাট, চা, বস্ত্র, সার, সিমেন্ট, কাঁচ, লৌহ-ইস্পাত, মোটরগাড়ি, কৃষি যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ঔষধ, সমরাস্ত্র, জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি। দেশটির বিভিন্ন অংশে এসব শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে অধিকাংশ শিল্প-কারখানা ৬টি বিশেষ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।
এগুলো হলো-
১. হুগলি-হলদিয়া শিল্পাঞ্চল;
২. ছোট নাগপুর শিল্পাঞ্চল;
৩. রানীগঞ্জ-আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল;
৪. মুম্বাই-পুনে শিল্পাঞ্চল;
৫. আমেদাবাদ-ভাদোদরা শিল্পাঞ্চল এবং
৬. ব্যাঙ্গালোর-কোয়েম্বাটুর-মাদুরী শিল্পাঞ্চল।
কৃষি : ভারত কৃষিতে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে। দেশটির মোট আয়তনের প্রায় ৬০.৫% কৃষিজমি। এর মধ্যে আবাদী জমি ৫২.৮ শতাংশ, স্থায়ী ফসল ৪.২শতাংশ এবং স্থায়ী চারণভূমি ৩.৫শতাংশ (সিআইএ, ২০১৭)। কৃষিতে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা কৃষির অগ্রগতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। উৎপাদিত কৃষি পণ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো ধান, গম, পাট, চা, কফি, ইক্ষু, মটরশুটি, ডাল, আলু, তৈলবীজ, পেয়াজ, তুলা, শাকসবজি প্রভৃতি। প্রাণিসম্পদের মধ্যে রয়েছে গরু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি। এছাড়া দেশটি মৎস্য সম্পদেও সমৃদ্ধ।
পরিবহন যোগাযোগ : ভারত পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি সাধন করেছে। সড়কপথ, রেলপথ ও বিমানপথ অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। সড়কপথগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্রান্ড-ট্রাঙ্ক সড়ক, কলকাতা-মুম্বাই সড়ক, আগ্রা-মুম্বাই সড়ক, বারানসি-কন্যাকুমারী সড়ক। ভারত রেল যোগাযোগে বেশ উন্নতি করেছে। ১৮৫৩ সালে প্রথম রেলপথ চালু হয় মুম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত। বর্তমানে ৩ ধরনের রেলপথ রয়েছে। যথা-ব্রডগেজ, মিটারগেজ এবং ন্যারোগেজ। এছাড়া সমুদ্রবন্দরসমূহের মধ্যে অন্যতম মুম্বাই, কলকাতা, মাদ্রাজ, বিশাখাপতনম, কোচিন ইত্যাদি। বিশালায়তনের এদেশে পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ কঠিন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions