যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর নাম কি
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর নাম ওয়াশিংটন ডিসি।
উত্তর আমেরিকা মহাদেশের বৃহৎ রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই ১৩টি ব্রিটিশ উপনিবেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং একত্রিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামে একটি প্রজাতন্ত্র গঠন করে। স্বাধীনতা ঘোষণার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আরো ৩৭টি রাজ্য এদেশের সাথে যুক্ত হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০টি রাজ্য এবং একটি স্বাধীন জেলা ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া নিয়ে গঠিত। এছাড়া শাসনাধীন অঞ্চলগুলো হলো পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী পোর্টোরিকো দ্বীপ, প্রশান্ত মহাসাগরের ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, পানামা খাল অঞ্চল, সামোয়া ও গুয়াম টেরিটরি। এদেশের পতাকায় ৫০টি তারকা রয়েছে যা ৫০টি রাজ্যের প্রতিনিধিতব করছে এবং ১৩টি সমান্তরাল রেখা (লাল ও সাদা রংয়ের) রয়েছে যা দেশটির প্রতিষ্ঠাকালীন ১৩টি উপনিবেশকে নির্দেশ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যেমন-সমতল রাজ্যসমূহ, নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যসমূহ, মধ্য আটলান্টিক রাজ্যসমূহ, দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যসমূহ, মধ্য-পশ্চিম রাজ্যসমূহ, পার্বত্য রাজ্যসমূহ, দক্ষিণ-পশ্চিম রাজ্যসমূহ এবং সর্ব দক্ষিণের রাজ্যসমূহ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। প্রসিদ্ধ স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, বোস্টন, শিকাগো, লস এন্সেলস, সানফ্রান্সিসকো প্রভৃতি।
অবস্থান, আয়তন ও জনসংখ্যা : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সীমান্তবর্তী কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যবর্তী অংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। এর আয়তন প্রায় ৯৮,৩৩,৫১৭ বর্গকিলোমিটার। এটি আয়তনে বিশেব তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এদেশের স্থল সীমানার দৈর্ঘ্য ১২,০৮৪ কিলোমিটার এবং উপকূল রেখার দৈর্ঘ্য ১৯,৯২৪ কিলোমিটার। আঞ্চলিক সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল এবং এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০০ নটিক্যাল মাইল। জনসংখ্যার দিক দিয়ে চীন ও ভারতের পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। এর বর্তমান জনসংখ্যা ৩২৩.৯ মিলিয়ন এবং বৃদ্ধির হার ০.৪% (পিআরবি, ২০১৬)। সারা বিশব থেকে আগত অধিবাসীরা এদেশের জনসংখ্যার মধ্যে বিশেষ বৈচিত্র্যতা তৈরি করেছে। অভিবাসীরাই এদেশের সাংস্কৃতিক ভূ-দৃশ্য সৃষ্টি করেছে।
ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। ভূ-প্রকৃতির তারতম্য অনুসারে দেশটিকে প্রধানত চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল, অ্যাপেলেশিয়ান উচ্চভূমি, মধ্যভাগের বিশাল সমভূমি এবং উপকূলের সমভূমি। পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশ স্থান জুড়ে বিস্তৃত। অ্যাপেলেশিয়ান উচ্চভূমিটি দেশটির পূর্বে অবস্থিত। এটি পূর্বে ভাঁজ পর্বত ছিল বলে মনে করা হয়। মধ্যভাগের সুবিশাল সমভূমিটি Great Plains Region নামে পরিচিত। উপকূলের সমভূমি কৃষিকাজের জন্য সমৃদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকার জলবায়ু দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ এলাকা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত। ভূ-প্রকৃতি, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে এখানকার জলবায়ুকে ৬টি বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা-১. নাতিশীতোষ্ণ সামুদ্রিক জলবায়ু, ২. শুষ্ক ও মরম্ন জলবায়ু, ৩. ভূ-মধ্যসাগরীয় জলবায়ু, ৪. ক্রান্তীয় মহাদেশীয় জলবায়ু, ৫. লরেন্সীয় জলবায়ু এবং ৬. গ্রীষ্মপ্রধান নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। দেশটিতে স্থানভেদে বার্ষিক ২৫ সে.মি থেকে ২০০ সে.মি এর অধিক বৃষ্টিপাত হয়।
খনিজ সম্পদ ও শিল্প : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ সম্পদসমূহের মধ্যে রয়েছে কয়লা, তামা, সীসা, মলিবডিনাম, ফসফেট, ইউরেনিয়াম, বক্সাইট, সোনা, রূপা, লোহা, তামা, পারদ, নিকেল, পটাশ, টাংস্টেন, দসত্মা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি। প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ রাজ্য টেক্সাস, লুইজিয়ানা, পশ্চিম ভার্জিনিয়া, কানসাস, ওকলাহামা, ক্যালিফোর্নিয়া। খনিজ তেলের জন্য বিখ্যাত অ্যাপেলেশিয়ান, ইলিয়ন ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইন্দিয়ানা, লিমা ইন্ডিয়ানা, উপসাগরীয় অঞ্চল, রকি পার্বত্য অঞ্চল এবং ক্যালিফোর্নিয়া। লৌহ-আকরিকে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে সুপিরিয়র হ্রদের পশ্চিমাঞ্চল, আলবামার বামিংর্হাম ও রেড কাউনেটন, নিউইয়র্কের অ্যাডড্রিনডাক, পেনসিলভেনিয়ার কর্ণওয়াল। বিভিন্ন প্রকার খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য শিল্প হলো- মোটরগাড়ি, লৌহ-ইস্পাত, পেট্রোলিয়াম, টেলিযোগাযোগ, রাসায়নিক যন্ত্রপাতি, ইলেক্ট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, মহাকাশ, বিমান, জাহাজ নির্মাণ, সমরাস্ত্র প্রভৃতি। এদেশের প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোকে ৭টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. দক্ষিণ নিউ ইংল্যান্ড;
২. মধ্য আটলান্টিক রাজ্যসমূহ;
৩. পিটসবার্গ-ইরি হ্রদ অঞ্চল;
৪. ডেট্রোয়েট অঞ্চল;
৫. মিসিগান হ্রদ অঞ্চল;
৬. দক্ষিণ আ্যপেলেশিয়ান অঞ্চল এবং
৭. পূর্ব টেক্সাস।
কৃষি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভূমির ৪৪.৫ শতাংশ কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে আবাদী জমি ১৬.৮ শতাংশ, স্থায়ী ফসল ০.৩ শতাংশ এবং স্থায়ী চারণভূমি ২৭.৪ শতাংশ (সিআইএ, ২০১৭)। প্রধান কৃষি ফসল গম ও ভুট্টা। গম উৎপাদনকারী রাজ্যসমূহের মধ্যে টেক্সাস, ইলিনয়, পেনসিলভেনিয়া, নিউইয়র্ক, ওহিও, মেরিল্যান্ড অন্যতম। বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত ভুট্টার প্রায় অর্ধেকই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। ফ্লোরিডা উপকূল, মিসিসিপির বদ্বীপ অঞ্চল ইক্ষু উৎপাদনে সমৃদ্ধ। অন্যান্য কৃষিভিত্তিক পণ্যের মধ্যে রয়েছে ধান, বার্লি, সয়াবিন, বাদাম, টমেটো, আঙ্গুর, আপেল, তামাক, তুলা, ফল, শাক-সবজি, গবাদি পশু, শুকর, মৎস্য ইত্যাদি।
পরিবহন ও যোগাযোগ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত। দেশটিতে প্রায় ৬০ লক্ষ কিলোমিটার সড়কপথ এবং ৫.৫ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। নিউইয়র্ক বিমানবন্দরটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বিমানবন্দর। পৃথিবীর ব্যসত্মতম বিমানবন্দর শিকাগোর ওহেয়ার বিমানবন্দর।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions