ডিজিটাল বাংলাদেশ অনুচ্ছেদ
আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিদিন নতুন নতুন তত্ত্ব, তথ্য ও সত্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে। মানুষের জীবন এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে মূলত একটি উন্নত, বিজ্ঞানমনস্ক সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে বোঝায়। প্রকৃত পক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন জনগণের রাষ্ট্র; যার মুখ্য চালিকাশক্তি হবে ডিজিটাল প্রযুক্তি।
বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫০ বছরে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উন্নত দেশ হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর জীবনধারা গড়ে তুলে পুরো জাতির জন্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এটি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প।
ডিজিট শব্দটির অর্থ সংখ্যা বা অংক। অংক বা ডিজিট ব্যবহার করে সংখ্যা পদ্ধতি প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ কোন সংখ্যা পদ্ধতি লিখে প্রকাশ করার জন্য যে সমস্ত সাংকেতিক চিহ্ন বা মৌলিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অঙ্ক বা ডিজিট (Digit) বলে। যেমন- বাইনারি সংখ্যাকে প্রকাশ করার জন্য দুইটি অংক ০ এবং ১ ব্যবহার করা হয়। অংক বা ডিজিটের সংখ্যা হল মোট ১০ টি। যথা-০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯ ইত্যাদি। কম্পিউটারের অভ্যমত্মরীণ ডাটা প্রক্রিয়াকরণ বা ডাটা সংরক্ষণের কাজ করা হয় বিভিন্ন প্রকার ডিজিটাল সংকেতের মাধ্যমে। ডিজিটাল সংকেত বলতে অনেকগুলো ডিজিটের সমন্বয়ে গঠিত সংখ্যা বা রাশিমালাকে বুঝায়। ডিজিটাল সংকেতকে বাইনারী ০ এবং ১ দ্বারা বিভিন্ন ভাবে ভোল্টেজের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
শুধুমাত্র ‘‘কম্পিউটার প্রস্তত দেশ’’ হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র মোচন এসব অঙ্গীকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাসত্মবায়ন করা। এজন্য দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেয়া অতিব প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে তার (ক্যাবল) বা তারবিহীন পদ্ধতিতে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় যুক্ত করতে হবে। দেশের সব অঞ্চলের ডিজিটাল পদ্ধতিতে পারদর্শী জনগণকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়াও জনগণের সাথে সরকারের সংযুক্তি, জনগণের নিজস্ব সংযুক্তি, সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, সিভিল সার্ভিস ,মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে এবং এবং দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য করতে হবে ।
আমাদের দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার অন্যান্য দেশের তুলনায় একটু দেরিতে শুর হয়েছে। তাই আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে অন্যান্য দেশের তুলনায় যথেষ্ট পিছিয়ে আছি। তবে আশার বাণী হলো কোন দেশ বা জাতির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকলে সব সময় তাদের পিছিয়ে থাকতে হয় না। সঠিকভাবে এর প্রয়োগ করতে পারলেই এগিয়ে যাওয়া যায়। তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাত্ত্বক গুরুত্ব দিতে হবে।
অবশ্য বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকারিভাবে সারা দেশে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে টেলিফোন বা মোবাইলফোনের ব্যবহারকারী। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারিভাবে চালু হয়েছে ই-সেবা, ই-পর্চা সেবা, ই-পূর্জি সেবা ইত্যাদি। আবার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য গ্রামাঞ্চলের জনগণের কাছে সেবা পৌঁছানোর জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু হয়েছে ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টার, পোস্ট অফিসগুলোকে ই-সেন্টারে রূপান্তরিত করে মোবাইল মানি অর্ডারের সুযোগ, শিক্ষা ব্যবস্থায় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল জানা, এমনকি অনলাইনের মাধ্যমে চাকুরির জন্য আবেদন করা ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবলের জন্য প্রয়োজন যথার্থ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও এখাতে সরকারিভাবে অর্থায়ন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। ই-গভর্ন্যান্স এর মাধ্যমে দেশের সরকারিসহ অন্যান্য কার্যক্রমের স্বচছতা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন প্রজনমকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।
0মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions