ডিএনএ কাকে বলে
ডিএনএ (DNA)- এটি হলো সকল জীবের আদি বস্ত্ত যার অবস্থান সর্ব প্রকার জীব কোষের নিউক্লিয়াসের ক্রোমোসোমে। ১৯৫৩ সালে জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক বিজ্ঞানীদ্বয় ডিএনএ অণুর গঠন আবিষ্কার করেন। ১৯৬২ সালে তাঁরা এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ডিএনএ হলো দ্বিসূত্রকবিশিষ্ট পলিনিউকিলয়োটাইডের সর্পিলাকার গঠন। প্রতিটি একককে নিউকিলয়োটাইড বলে। এর একটি সূত্র অন্যটির পরিপূরক। ডিএনএ অণুর আকৃতি অনেকটা প্যাঁচানো সিঁড়ির ন্যায়। এতে পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা, নাইট্রোজেনঘটিত বেস বা ক্ষারক (যেমন- অ্যাডিনিন, গুয়ানিন, থাইমিন, সাইটোসিন) এবং ফসফেট থাকে। নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারকগুলো দুই প্রকার।
যথা-
• পিউরিন- দ্বি-কার্বন রিংযুক্ত অ্যাডিনিন ও গুয়ানিন।
• পাইরিমিডিন- এক-কার্বন রিংযুক্তথাইমিন, সাইটোসিন ও ইউরাসিল।
ডিএনএ টেস্ট: এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট নমুনার ডিএনএ নকশার সাথে অন্য কোনো নমুনার ডিএনএ নকশার তুলনা করে নমুনা দুটির মধ্যে মিল বা অমিল নির্ণয় করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে ডিএনএ এর জিন সিকুয়েন্স অর্থাৎ নিউকি লক অ্যাসিডের ক্রম মিলানো হয়। একজন শিশু পিতার অর্ধেক এবং মাতার অর্ধেক DNA নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাই DNA পরীক্ষা করে পিতা-মাতার পরিচয় জানা যায়। কারণ DNA বংশগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বহন করে।
ফিঙ্গার প্রিন্টিং: ডিএনএ টেস্টের বিজ্ঞান ভিত্তিক এক ব্যবহারিক পদ্ধতিকে বলা হয় ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং। এছাড়া ডিএনএ টাইপিং, ডিএনএ টেস্টিং, ইত্যাদি নামও প্রচলিত রয়েছে।
ডিএনএ টেস্ট প্রক্রিয়া: ডিএনএ টেস্ট সুসম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক উপাদান হচ্ছে জৈবিক নমুনা। বিভিন্ন ধরনের জৈবিক নমুনার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো ব্যক্তির হাড়, দাঁত, রক্ত, লালা, বীর্য বা টিস্যু, উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পাতা, মূল এর অগ্রভাগ, ইত্যাদি। কারণ এ সকল জৈবিক নমুনা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা সহজ। অপরাধস্থল কিংবা অপরাধের শিকার এমন ব্যক্তির কাছ থেকে জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ নকশা তৈরি করা হয়। আবার সন্দেহভাজন ব্যক্তি থেকে জৈবিক নমুনা নিয়ে ডিএনএ নকশা তৈরি করা হয়। এ দু’ব্যক্তির জৈবিক নমুনা থেকে করা ডিএনএ নকশার মধ্যে তুলনা করে অপরাধী চিহ্নিত করা হয় অথবা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায়। একইভাবে উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও কোনো নির্দিষ্ট উদ্ভিদ প্রজাতি বা কোনো নির্দিষ্ট উদ্ভিদ গোত্রকে শনাক্ত করা যায়। এর মাধ্যমে পিতা-মাতা অথবা নির্দিষ্ট উদ্ভিদের ডিএনএ এর সাথে সন্তান সন্তুতি বা কাঙ্ক্ষিত উদ্ভিদের ডিএনএ এর সাথে ৯৯.৯% মিলে গেলে ঐ পিতা-মাতাকে বা নির্দিষ্ট উদ্ভিদটি প্রকৃত পিতা-মাতা বা পূর্ব পুরুষ বলে গণ্য হবে।
এ পদ্ধতিতে প্রথমে নমুনা থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ডিএনএ আলাদা করা হয়। পরে একাধিক রেস্ট্রিকশন এনজাইম (এ জাতীয় এনজাইম ডিএনএ এর নির্দিষ্ট সিকুয়েন্সে কর্তন করে) দিয়ে নমুনা ডিএনএকে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। এক বিশেষ পদ্ধতি ইলেকট্রোফোরেসিস (Electrophoresis) এগারোজ বা পলিএক্রিলামইড জেল এ ডিএনএ টুকরাগুলো তাদের দৈর্ঘ্য অনুসারে বিভিন্ন ব্যান্ড আকারে আলাদা করা হয়। এক ধরনের বিশেষ নাইট্রোসেলুলোজ কাগজে রেডিও অ্যাকটিভ আইসোটোপ ডিএনএ প্রোবের সাথে হাইব্রিডাইজ করে এক্স-রে ফিল্মের উপর রেখে অটোরেডিওগ্রাফ পদ্ধতিতে দৃশ্যমান ব্যান্ডের সারিগুলো নির্ণয় করা হয় এবং অপরাধস্থল থেকে প্রাপ্ত নমুনার সাথে সন্দেহভাজন নমুনার মিল ও অমিল চিহ্নিত করে তুলনা করা হয়। এ পদ্ধতিকে ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিং বলা হয়। বর্তমানে পলিমারেজ চেইন বিক্রিয়া (Polymerase Chain Reaction) বা পিসিআর (PCR) পদ্ধতিতে আরও নিপুণভাবে অল্প নমুনা ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে শনাক্তকরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজনীয়তা: যখন কোনো সন্তানের পিতৃতব ও মাতৃতব নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় অথবা যখন কোনো নির্দিষ্ট উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তখনই ডিএনএ টেস্টের দরকার হয়। আবার অনেক সময় কেউ যদি কোনো সন্তানকে তার নিজের সন্তান দাবি করে তখনও ডিএনএ টেস্ট দ্বারা এ ধরনের বিবাদ বর্তমানে নিষ্পত্তি করা যায়। আবার অনেক সময় বিমান দূর্ঘটনায় অনেক আরোহী মারা যায়, লঞ্চ দূর্ঘটনায়ও অনেক লোক মারা যায়। এ সকল দূর্ঘটনার ক্ষেত্রেও ডিএনএ টেস্ট দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট লোককে চিহ্নিত করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে ডিএনএ প্রযুক্তির গুরুত্ব এবং এর ব্যবহার চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি, মৎস্য প্রাণিসম্পদ এবং ঔষধ শিল্পে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। এতদিন প্রচলিত সাক্ষ্য প্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীর উপর নির্ভর করে বিচার করা হতো। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশেব সুবিচার পাওয়ার এক নতুন অধ্যায় ডিএনএ টেস্ট। এর মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট উদ্ভিদ প্রজাতি বা কোনো নির্দিষ্ট উদ্ভিদ গোত্রকে অল্প সময়ে সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions