পলিমার কাকে বলে
তুলা, রেশম, পশম, সিল্ক,উল, নাইলনের সুতা, পাট, কার্পেট, রাবার, পলিথিন, পিভিসি পাইপ, মেলামাইনের থালা-বাসন আমাদের খুবই পরিচিত। এগুলো বিভিন্ন রকমের পলিমার দিয়ে গঠিত যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সুন্দর করেছে। এসকল পদার্থের কোনটি প্রাকৃতিক পলিমার আবার কোনটি কৃত্রিম। এসকল পদার্থ আমাদের জীবনে নানাবিধ কাজে ব্যবহার করে থাকি। তুলা, রেশম, পশম, পাট এগুলো থেকে আমরা বস্ত্র উৎপাদন করে থাকি যা ছাড়া আমরা আমাদের জীবনকে কল্পনা করতে পারি না।
পলিমার (Polymer) শব্দটি গ্রিক শব্দ 'পলি' (poly) অর্থ বহু বা অনেক এবং 'মেরোস' (meros) অর্থ অংশ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। অর্থাৎ পলিমার বলতে একই ধরনের অনেকগুলো ছোট ছোট অংশ যুক্ত হয়ে যে উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট বৃহদাকার অণু তৈরি হয় তাকে বোঝায়। এক কথায় বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু পর পর যুক্ত হয়ে পলিমার অণু গঠন করে থাকে। যে ক্ষুদ্র অণু যুক্ত হয়ে পলিমার তৈরি হয় তাকে মনোমার (Monomer) বলা হয়।
পলিমার সাধারণত: দুই প্রকার। যথাক) প্রাকৃতিক পলিমার ও খ) কৃত্রিম পলিমার।
ক) প্রাকৃতিক পলিমার: সাধারণভাবে প্রাকৃতিক উৎস বিশেষ করে উদি ভদ ও প্রাণি থেকে যে সমস্ত পলিমার পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাকৃতিক পলিমার বলে। যেমন-প্রাকৃতিক রাবার, স্টার্চ, তুলা, রেশম, পশম, সিল্ক, উল, পাট ইত্যাদি।
খ) কৃত্রিম পলিমার: পরীক্ষাগারে বা শিল্প-কারখানায় কৃত্রিমভাবে প্রস্ত্তত করে যে সমস্ত পলিমার পাওয়া যায় তাদেরকে কৃত্রিম পলিমার বলে। যেমন-পলিইথিলিন, পলিভিনাইল কে লারাইড (PVC), পলিস্ট্যারিন, টেফলন, টেরিলিন,নাইলন ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক পলিমারগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাবার চাষ করে বাগান থেকে প্রাকৃতিক রাবার সংগ্রহ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন বিভিন্ন শস্য দানা বিশেষ করে চাল, গম,ভুট্টা, যব, গোল-আলু এ সব স্টার্চ গ্লুকোজের প্রাকৃতিক পলিমার। মাছ, মাংস, ডিম এসব প্রোটিন অ্যামিনো এসিডের পলিমার। সিল্ক এবং উলও অ্যামিনো এসিডের পলিমার।
পিভিসি (PVC) পাইপ ভিনাইল ক্লোরাইড মনোমার থেকে তৈরি করা হয়। বৈদ্যুতিক সুইচ বা বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড বাকেলাইট নামের পলিমার যা ফেনল ও ফরমালডিহাইড নামের দুটি মনোমার থেকে তৈরি করা হয়। মেলামাইনের থালা-বাসন মেলামাইন রেজিন নামের পলিমার থেকে প্রস্ত্তত করা হয় যা মেলামাইন ও ফরমালডিহাইড নামের দুটি মনোমার থেকে তৈরি। কৃত্রিম উপায়ে ইথিলিন মনোমার থেকে প্রস্ত্ততকৃত পলিথিন প্রধানত ঔষধ পত্রাদির প্যাকেট, পলিথিনের ব্যাগ, টেবিল ক্লথ, বাজারের ব্যাগ ইত্যাদি হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। আমরা যে সকল প্লাস্টিকের চেয়ার, টেবিল, বালতি, গামলা, প্লেট, গ্লাস, মগ, জগ, পানির ট্যাংক ব্যবহার করে থাকি এগুলোও কৃত্রিম পলিমার। প্লাস্টিক দ্রব্য সস্তা, হালকা, টিকসই ও সহজে ব্যবহার করা যায়। পলিথিনের ব্যবহার এতটাই ব্যাপক যে একে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। পলিথিন জাতীয় দ্রব্যগুলো প্রকৃতিতে ধ্বংশ না হয়ে বছরের পর বছর অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়। এ সব প্লাস্টিক দ্রব্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব দ্রব্যাদির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions