সাধু ভাষা কাকে বলে
অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাহিত্যের ভাষা মুখের ভাষা থেকে কিছুটা পৃথক হয়ে থাকে। সাহিত্যের ভাষা উন্নত চিন্তা, কল্পনা ও অনুভূতিকে প্রকাশ করে বলে তা অপেক্ষাকৃত মার্জিত, পরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। অন্যদিকে আমরা মুখের ভাষা দৈনন্দিন জীবনে পথে, ঘাটে, হাটে, বাজারে, সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করি বলে তা অপেক্ষাকৃত স্বত:স্ফূর্ত ও জীবনস্পর্শী। লিখিত ও মুখের ভাষারূপের এ পার্থক্য সব ভাষাতেই রয়েছে। বাংলা ভাষাও এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কিন্তু বাংলা লিখিত ভাষায় এক সময় দুটি ভাষারীতি গড়ে উঠেছিল। এ রীতি দুটি হলো: সাধুরীতি ও চলিতরীতি।
সাধুরীতি: আদিমাত্রায় তৎসম শব্দবহুল, সংস্কৃত ব্যাকরণের সন্ধি-সমাস আশ্রয়ী। এ ভাষারীতিতে ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের দীর্ঘ রূপ ব্যবহৃত হয়। মূলত সাহিত্যের ভাষাকে আশ্রয় করেই সাধুরীতি গড়ে উঠেছিল।
সুতরাং বলা যায়, যে ভাষা তৎসম শব্দবহুল, সংস্কৃত
ব্যাকরণের সন্ধি-সমাস আশ্রয়ী এবং ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের দীর্ঘ রূপ ব্যবহৃত হয় ও সাহিত্যের ভাষাকে আশ্রয় করে গড়ে উঠে তাকে সাধুভাষা বলে।
খ্রিস্টান মিশনারি ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের (১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়) লেখকেরা যখন বাংলায় ধর্মগ্রন্থ ও পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে উদ্যোগী হন, তখন তাঁদের সামনে সাহিত্যিক গদ্যের কোন আদর্শ ছিল না। তাঁরা সংস্কৃত গদ্যের আদর্শে বাংলা সাধু ভাষার মূল কাঠামোটি রচনা করেন। যাঁদের হাতে বাংলা সাধু গদ্যের প্রাথমিক রূপটি বিশেষভাবে গড়ে উঠেছিল তাঁদের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর পর রামমোহন রায় সাধু গদ্যের আরো যুক্তিনির্ভর কাঠামো নির্মাণ করেন। রামমোহন রায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সাধু ভাষা কথাটি তাঁর ‘বেদান্ত গ্রন্থে’’ ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে সাধু ভাষা বিকশিত হয়ে সৃজনশীল ও মননধর্মী সাহিত্যের মাধ্যম হয়ে ওঠে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions