সুষম খাদ্য তালিকা
পরিবারের সদস্যদের জন্য সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যরক্ষা ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাদ্য পরিকল্পনা করাকে মেনু বলে। অর্থাৎ, একটি পরিকল্পিত খাদ্য তালিকাই মেনু যা মূলত খাদ্য গ্রহণকারীর প্রয়োজন যথাযথভাবে পূরণে সক্ষম। পরিবারের সদস্যদের সুষম খাদ্য পরিবেশনের লক্ষ্যে মেনু পরিকল্পনা করা হয়।
মেনু পরিকল্পনার বিবেচ্য বিষয়
১। বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক শ্রমের ধরন ও মাত্রা, পেশা, ইত্যাদি ভেদে চাহিদা ও রুচি ভিন্ন হয়। মেনু পরিকল্পনার সময় এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
২। মেনু পরিকল্পনায় আবহাওয়া ও ঋতুর প্রভাব থাকে। মেনুতে সহজলভ্য মৌসুমী খাদ্যদ্রব্য অন্তর্ভুক্ত করে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের বৈচিত্র্য আনা যায়। এছাড়া, গ্রীষ্মকালে সহজপাচ্য, অধিক তরলযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, শীতকালে তাপ প্রদানকারী সেণহজাতীয় খাদ্যের সন্নিবেশ ঘটানো ইত্যাদি বিষয়গুলো লক্ষণীয়।
৩। মেনুতে দেহ গঠনকারী খাদ্য, যেমন- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল ইত্যাদি; শক্তি ও তাপ প্রদানকারী খাদ্য, যেমন- ভাত, রুটি, আলু, চিনি, গুড়, তেল, ঘি, মাখন ইত্যাদি এবং রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য, যেমন- শাকসবজি ফল-মূল ইত্যাদি এবং পর্যাপ্ত পানি বা তরল আছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪। খাদ্য গ্রহণকারীর খাদ্যাভ্যাস ও রুচির প্রতি নজর দিতে হবে।
৫। সর্বপরি, খাদ্য গ্রহণকারীর জন্য মেনুর খাদ্যদ্রব্য সুষম খাদ্য হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
সুষম খাদ্য পিরামিড
আমরা জানলাম যে, একটি সুষম খাদ্য তালিকায় বা একটি আদর্শ মেনুতে শর্করা জাতীয় খাদ্য, আমিষ জাতীয় খাদ্য, সেণহ পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ লবণ, পানি বা তরল সব খাদ্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। খাদ্য নির্বাচন এমন হতে হবে যাতে এসব খাদ্য হতে প্রয়োজনীয় রাফেজ বা আঁশ পাওয়া যায়। সুষম খাদ্যের তালিকা লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এখানে প্রধানত চার ধরনের খাবার থাকে-শর্করা বা শক্তিদায়ক খাদ্য, শাক সবজি, ফলমূল বা রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য, আমিষ বা দেহ গঠনকারী খাদ্য এবং সেণহ জাতীয় খাদ্য। পরিমাণের দিক থেকে সুষম খাদ্যে সর্বাধিক পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাদ্য থাকে। এরপর শাক-সবজি ও ফলমূল। পরিমাণে তৃতীয় অবস্থানে থাকে আমিষ জাতীয় খাদ্য এবং সবচেয়ে কম পরিমাণে সেণহ পদার্থ থাকে। শর্করাকে নিচে রেখে পরিমাণগতভাবে পর্যায়ক্রমে উপরের দিকে সাজালে একে সুষম খাদ্য পিরামিড বলে।
সাধারণভাবে সবার জন্য খাদ্য নির্বাচনের সময় ক্যালরি প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে নিমেণাক্ত অনুপাতে খাদ্য পরিকল্পনা করা উচিত ১। প্রোটিন বা আমিষ : মোট ক্যালরির ১৫%। ২। শর্করা জাতীয় খাদ্য (চিনি জাতীয় খাদ্য ব্যতীত) : মোট ক্যালরির ৫০-৬০% ৩। সেণহ পদার্থ : (ক) সম্পৃক্ত সেণহ মোট ক্যালরির ৭% ও (খ) অসম্পৃক্ত সেণহ ২০%।
মৌলিক খাদ্য শ্রেণি
পুষ্টিবিজ্ঞানীগণ আমাদের প্রতিদিনের আহার্য খাদ্যসমূহকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তাদের মতে, সুষম খাদ্য পেতে হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই চার শ্রেণির খাদ্য হতে খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। এগুলো হলো-
১। মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, বাদাম ইত্যাদি (আমিষ জাতীয় খাদ্য)
২। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য, যেমন-পনির, দই, দুধ, ফিরনি ইত্যাদি।
৩। ফলমূল ও শাক-সবজি
৪। শস্য ও শস্যদানা জাতীয় খাদ্য, যেমন - ভাত, রুটি, ভু্ট্টা, যব, মুড়ি, চিড়া, (শর্করা জাতীয় খাদ্য)
নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস
সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস অত্যন্তজরুরী। শরীরের ক্ষতি সাধন করে এমন খাদ্যাভ্যাস পরিহার করে শরীরকে সতেজ রাখে তেমন খাদ্যাভ্যাস মেনে চলাকে নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস বলা যায়। নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে কয়েকটি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হলো-
১। সকালের চায়ের সাথে অবশ্যই হালকা খাবার গ্রহণ করা উচিত।
২। সকালের নাস্তায় রুটি, মাখন, ১টি ডিম ও ১টি কলা খেলে দৈনিক পুষ্টি চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ গ্রহণ করা সম্ভব।
৩। আমাদের দেশে যেহেতু দুপুরের খাদ্য একটি প্রধান খাদ্য, তাই এসময় সুষম খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে খাদ্য বাছাই করা উচিত।
৪। অনেক সময় চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার সময় ও পরিমাণ ঠিক থাকে না। তাই, দুপুরের খাবারে কোনো ঘাটতি থাকলে বিকালের ভারী নাস্তা দিয়ে পূরণ করতে হবে।
৫। রাতের খাবার রাত ৮ টার মধ্যে গ্রহণ করা উচিত। এসময় সহজপাচ্য ও কম আমিষযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো। রাতের খাবারে শাক ও টক জাতীয় খাদ্য পরিহার করে ঘুমানোর আগে দুধ বা দুধ জাতীয় তরল গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
৬। এদেশের আবহাওয়ায় মাংসের বদলে মাছই শ্রেয়তর প্রোটিনের উৎস।
৭। ভারী খাবার শেষে টক দই অথবা ফল খাওয়া যেতে পারে।
৮। গরমের সময় সারাদিনে প্রচুর তরল, পানি, ফলমূল, শাকসবজি খাওয়া উচিত।
৯। উচ্চতাপে তেলে ভাজা ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড মুখোরোচক ও সুস্বাদু হলেও এগুলো শরীরের জন্য ভালো নয়। ফাস্ট ফুডে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ, উচ্চ মাত্রার প্রাণিজ চর্বি ও চিনি একে অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। বার্গার, চিপস, কেক, পেস্ট্রি, কোলা, লেমন, পিজ্জা, প্যাটিস ইত্যাদিতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে না এবং এসব আমাদের দাঁত ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। ফাস্ট ফুড গ্রহণ স্থূলতাসহ নানা রকম জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
১০।পানিবাহিত রোগ, ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস, ইত্যাদি হতে রক্ষা পেতে হলে খোলা বা উন্মুক্ত স্থানে, রাস্তা ঘাটে প্রস্তুত খাবার খাওয়া হতে বিরত থাকা উচিত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions