খাদ্য সংরক্ষণ কাকে বলে
যে কোনো দেশেই খাদ্য সংরক্ষণ করা একটি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ। খাদ্য মূল্য বজায় রেখে ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটানো, দুর্যোগকালীন চাহিদা মেটানো, বিদেশে রপ্তানি করা ইত্যাদি কারণে খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মজুত করাকেই খাদ্য সংরক্ষণ বলে। অর্থাৎ, যথাযথ খাদ্যমূল্য বজায় রেখে প্রায় অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করাকেই খাদ্য সংরক্ষণ বলে।
খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
কিছু পচনশীল খাদ্য সংরক্ষণ না করলে অতি দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়। আবার, অপচনশীল খাদ্যও বেশ কিছুদিন পর খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়। তখন তা আর কোনো কাজে আসে না। এতে অর্থনৈতিক ও পুষ্টিগত ক্ষতি হয়। তাই খাদ্যসামগ্রী আহারযোগ্য রাখতে হলে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা উচিত। খাদ্য সংরক্ষণের গুরুতব বিশবস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রায়ই আলোচিত হয়। বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করলে-
১। জীবাণুর আক্রমণ হতে খাদ্যকে রক্ষা করা যায়।
২। খাদ্যের পুষ্টিমূল্য বজায় রাখা যায়।
৩। দুর্যোগ অবস্থায় খাদ্য সরবরাহ ঠিক রাখা যায়।
৪। বাড়তি খাদ্য রপ্তানি করে অর্থনৈতিক উন্নতি করা যায় ইত্যাদি।
খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি
যেসব প্রক্রিয়া বা কৌশল অবলম্বন করে খাদ্যকে বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করা হয় সেসব প্রক্রিয়াকে খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি বলে। বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলো হলো-
১। তাপ প্রয়োগ
২। শুষ্ককরণ বা রোদে শুকানো
৩। রেফ্রিজারেশন
৪। বরফে জমানো বা ফ্রিজিং
৫। সংরক্ষক দ্রব্য প্রয়োগ
৬। চিনি ও লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ
১। তাপ প্রয়োগ
তাপ প্রয়োগ করে পাস্তুরাইজেশন, স্ফুটন ইত্যাদি পদ্ধতিতে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা যায়। এ প্রক্রিয়ায় ১০০ সেন্ট্রিগ্রেডের ঊর্ধে ব তাপ প ্রয়োগ করে অণুজীবের ক্রিয়া ধ্বংস করা হয়। দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদি অতি পচনশীল খাদ্য ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
২। রোদে শুকানো বা শুষ্ককরণ
প্রাচীনকাল থেকেই সূর্যের তাপে খাদ্যদ্রব্য শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি প ্রচলিত। রোদের তাপে খাদ্যশস্য ও ফলমূলের জলীয় অংশ বাষ্পীভূত করে শুকিয়ে বোতলে, বোয়ামে বা কৌটাতে ভালো করে ঠেসে ভরে বাতাস বের করে সংরক্ষণ করা হয়। মাছ ও মাংসের ক্ষেত্রে ২০-২৫ দিন কড়া রোদে শুকানোর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে রোদে দেয়া দরকার হতে পারে।
৩। রেফ্রিজারেশন
এ পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেটরের মধ্যে কাঁচা শাক-সবজি, ফল, রান ণা করা খাদ্য, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য কিছুদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়।
৪। বরফে জমানো বা ফ্রিজিং
এ পদ্ধতিতে খাদ্যদ্রব্য বাড়িতে ব্যবহৃত ফ্রিজে বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এভাবে টাটকা শাক- সবজি, ফল, ফলের রস, মাছ, মাংস, রান্না করা বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আইসক্রিম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায়।
৫। সংরক্ষক দ্রব্য প্রয়োগ
খাদ্য সংরক্ষক রাসায়নিক পদার্থ বা Preservative প্রয়োগ করে খাদ্যকে পচন থেকে রক্ষা করা যায়। রাসায়নিক সংরক্ষক পদার্থ প্রয়োগের ফলে খাদ্যে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। আমাদের অতি পরিচিত কয়েকটি Prservative হলো- সিরকা বা ভিনেগার, সোডিয়াম, সোডিয়াম বেনজয়েট ইত্যাদি। আচার, চাটনি, সস প্রভৃতিতে ভিনেগার ব্যবহৃত হয়। ফলের রস সংরক্ষণের জন্য সোডিয়াম বেনজয়েট ব্যবহার করা হয়।
৬। চিনি ও লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ
চিনি ও লবণের দ্রবণে খাদ্য সংরক্ষণ একটি বহুল ব্যবহৃত সংরক্ষণ পদ্ধতি। জ্যাম, জেলি, মারমালেড, আপেল, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি ফল টুকরা করে চিনির ঘন দ্রবণে বায়ুনিরোধী করে বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়। লবণের দ্রবণ বা ব্রাইন-এও খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়। যেমন- নোনা ইলিশ মাছ।
সতর্কতা
খাদ্যের স্বাভাবিক বর্ণ পরিবর্তন ঘটলে, খাদ্য ফুলে উঠলে, খাদ্যের উপরিভাগে সাদা অথবা কালো আস্তরণ পড়লে, খাদ্যে পিচ্ছিল ভাব হলে, খাদ্য ঘোলা হয়ে গেলে বুঝতে হবে খাদ্যে পচনক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া পঁচা ও টক গন্ধ তৈরি হলেও এধরনের খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না। এতে শরীরিক ক্ষতি হবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions