তন্তু কি
আধুনিক সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে বস্ত্র বা কাপড়। এটি মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম। বস্ত্র বা কাপড় তৈরি হয় সুতা থেকে। আর সুতা তৈরি হয় তন্তু থেকে। আঁশ জাতীয় বস্ত্তকে সাধারণ অর্থে তন্তু বলে। কিন্তু বস্ত্র শিল্পে যে সব আঁশ দিয়ে বয়ন বা বুননের কাজ করা সম্ভব কেবল সেগুলোকেই বয়ন তন্তু বা সংক্ষেপে তন্তু বলে। তন্তু থেকে সুতা, কাপড় ছাড়াও কার্পেট, ফিল্টার পেপার, তড়িৎ নিরোধকসহ হাজারো রকমের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তৈরি হয়।
তন্তু রাসায়নিক ভাবে এক ধরনের (Polymer) যা হাজার হাজার মনোমার (Monomer) অণু নিয়ে গঠিত। কার্পাস সুতা, রেশম, পশম ও লিনেন ইত্যাদি অতি প্রাচীনকাল থেকে বস্ত্র শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । এগুলো প্রকৃতি হতে সহজেই আহরণ করা যায়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মানুষ রাসায়নিক তন্তু পলিথিন, নাইলন, পলিএস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করছে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই তন্তুগুলো আমরা কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত করে ও প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে ব্যবহার করে থাকি। তাই উৎসের উপর ভিত্তি করে তন্তুকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১) প্রাকৃতিক তন্তু ও
২) কৃত্রিম তন্তু।
প্রাকৃতিক তন্তু
প্রাকৃতিক উৎস এবং খনিজ হতে যে সমসত্ম তন্তু পাওয়া যায় সেগুলোকে প্রাকৃতিক তন্তু বলা হয়। তুলা, পাট, উল, সিল্ক ও অ্যাসবেসটস ইত্যাদি হলো প্রাকৃতিক তন্তু। এই জাতীয় তন্তুর মধ্যে কার্পাস তুলা বা কটন সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রাকৃতিক তন্তু। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত বস্ত্রাদির অর্ধেকেরও বেশি চাহিদা মেটানো হয় প্রাকৃতিক তন্তু থেকে। প্রকৃতিক তন্তুকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
যথা-
১) উদ্ভিজ তন্তু
২) প্রাণিজ তন্তু এবং
৩) খনিজ তন্তু।
উদ্ভিজ তন্তু
প্রাণিজ তন্তু
খনিজ তন্তু
কৃত্রিম তন্তু
যে সব তন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয় সেগুলোকে কৃত্রিম তন্তু বা সিনথেটিক (Synthetic) তন্তু বলে। নাইলন, পলিস্টার, রেয়ন, ডেক্রন ইত্যাদি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি কৃত্রিম তন্তু। কৃত্রিমতন্তু দুই ধরনের হয়।
যথা-
১) সেলুলোজিক তন্তু এবং
২) নন-সেলুলোজিক তন্তু।
সেলুলোজিক তন্তু
সেলুলোজকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে যে তন্তু তৈরি করা হয় তাকে সেলুলোজিক তন্তু বলে। সেলুলোজিক তন্তুকে রিজেনারেটেড সেলুলোজও বলা হয়। সেলুলোজ এক ধরনের সূক্ষ্ণ আাঁশ জাতীয় পদার্থ যা উদ্ভিদ কোষের প্রাচীর তৈরি করে। রেয়ন এবং ভিসকাস রেয়ন হলো সেলুলোজিক তন্তু। এদের বস্ত্র তৈরিতে, রেয়ন গাড়ির টায়ারের লাইনিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রেয়ন (Rayon) প্রথম উৎপাদিত কৃত্রিম তন্তু।
নন-সেলুলোজিক তন্তু
জৈব যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে রসায়নবিদগণ যে সব তন্তু তৈরি করেছেন সেগুলোকে নন-সেলুলোজিক তন্তু বলে। নাইলন, পলিএস্টার, ডেক্রন, পলিপ্রপাইলিন ইত্যাদি নন-সেলুলোজিক তন্তু। নাইলন প্রথম উদ্ভাবিত সিনথেটিক তন্তু। এটি হালকা ও শক্ত। কার্পেট, দড়ি, টায়ার ইত্যাদি তৈরিতে নাইলন ব্যবহৃত হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions