একক কাকে বলে
যে কোন ভৌত রাশির পরিমাপের জন্য তার একটি নিদিষ্ট পরিমাণকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয় এবং এই পরিমাণের সাপেক্ষে সমগ্র ভৌত রাশিটির পরিমাপ করা হয়। এ আদর্শ পরিমাণকে ঐ রাশিটির একক বলা হয়। মনে করা যাক একটি ট্রেনের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার। এখানে, মিটার হল দৈর্ঘ্যের একক এবং ট্রেনের দৈর্ঘ্য উক্ত একক দূরত্বের ১০০গুণ। বিভিন্ন ভৌত রাশি যেমন, ক্ষেত্রফল, আয়তন, ওজন, কোণ, সময়, বল, তাপ, শক্তি ইত্যাদি পরিমাপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন একক রয়েছে এবং পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতিতে এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। এ এককগুলো আবার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যে আদর্শ পরিমাপের সাথে তুলনা করে ভৌত রাশিকে পরিমাপ করা হয় তাকে পরিমাপের একক বলা হয়। মিটার, কিলোগ্রাম, সেকেন্ড, নিউটন, জুল ইত্যাদি পরিমাপের এককের উদাহরণ।
মৌলিক ও লব্ধ রাশি:
এই বিশ্ব প্রকৃতির যা কিছু পরিামাপ করা যায় তাকে রাশি বলা হয়। যেমন একটি লোহার বলের ভর পরিমাপের করা যায়। ভর একটি রাশি। আবার কাপড়ের দৈর্ঘ্য পরিামাপ করা যায় যেখানে দৈর্ঘ্য একটি রাশি। পানির তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়, তাহলে পানির তাপমাত্রাও একটি রাশি। বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে কত সময় লাগে সেই সময়ও একটি রাশি। এই ভৌত জগতে এরূপ বহু রাশি রয়েছে। এ সকল রাশির মধ্যে কয়েকটি রাশি রয়েছে যেগুলো পরিমাপ করার জন্য অন্য কোন রাশির উপর নির্ভর করার প্রয়োজন হয় না। এ রাশি গুলোকে মৌলিক রাশি বলা হয়। যেমন সময় মাপতে অন্য কোন রাশির উপর নির্ভর করতে হয় না। সুতরাং সময় একটি মৌলিক রাশি।
অপরদিকে, এমন অনেক রাশি আছে যেগুলো মাপার জন্য অন্য রাশির সাহায্যের দরকার হয়। যেমন বেগ পরিমাপের জন্য দূরতব এবং সময় এই রাশি দুটি জানার প্রয়োজন হয়। অত:পর দূরতবকে সময় দিয়ে ভাগ করে বেগের মান বের করতে হয়। এর থেকে বুঝা যায় যে, বেগ একটি লব্ধ বা যৌগিক রাশি।
জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিজ্ঞানীরা পরিমাপের ক্ষেত্রে এরূপ সাতটি রাশিকে মৌলিক রাশি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হল দৈর্ঘ্য, ভর, সময়,তাপমাত্রা, তড়িৎপ্রবাহ, দীপন ক্ষমতা এবং পদার্থের পরিমাণ। যে সকল রাশি মৌলিক রাশির উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ মৌলিক রাশি থেকে পাওয়া যায় , তাদেরকে লব্ধ রাশি বলা হয়। বেগ, ত্বরণ, কাজ, বল, তাপ, বিভব ইত্যাদি লব্ধ রাশির উদাহারণ। যে গুলো মৌলিক রাশি থেকে গঠিত হয়।
মৌলিক একক বা লব্ধ একক:
মৌলিক রাশিকে প্রকাশ করতে যে একক ব্যবহার করা হয় তাকে মৌলিক একক বলে। যেমন দৈর্ঘ্যের একক মিটার। মিটার অন্য কোন এককের উপর নির্ভর করে না। তাই মিটার একটি মৌলিক একক। মৌলিক একক ব্যবহার করে যে সকল একক পাওয়া যায় তাকে লব্ধ একক বলা হয়। যেমন বলের একক নিউটন যা মিটার, কিলোগ্রাম ও সেকেন্ডের এককের উপর নির্ভর করে।
এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি:
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য মাপ জোখের প্রথা উদ্ভাবন করেন। এ মাপ জোখের জন্য বিভিন্ন রাশির স্থানীয় মান বা এলাকা ভিত্তিক বহু একক প্রচলন ছিল। যেমন, কিছুদিন আগেও ভরের একক হিসেবে মন, সের এবং দূরত্বের একক হিসেবে মাইল ব্যবহার করা হত। দৈর্ঘ্যের জন্য গজ, ফুট, ইঞ্চি এখনও প্রচলিত রয়েছে।
বৈজ্ঞানিক তথ্যের আদান প্রদান ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের সুবিধার্থে সারা বিশেব মাপ জোখের একই রকম আদর্শের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ তাগিদ থেকে ১৯৬০ সাল থেকে সারা বিশেব বিভিন্ন রাশির একই রকম একক চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এককের এই পদ্ধতিকে এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বলা হয়, যা সংক্ষেপে এস. আই. ইউনিট (SI) হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক পদ্ধতি চালুর পূর্বে সারা বিশেব বৈজ্ঞানিক হিসাব নিকাশের ক্ষেত্রে এককের তিনটি পদ্ধতি চালু ছিল।
সেগুলো হল-
১. সি. জি. এস. (CGS) পদ্ধতি (Centimeter Gram Second system)
২. এম. কে. এস. (MKS) পদ্ধতি (Meter Kilogram Second system)
৩. এফ. পি. এস. (FPS) পদ্ধতি (Foot Pound Second system)
আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে এম. কে. এস পদ্ধতিকে আত্নীকরন করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি ভৌত রাশির জন্য কেবল মাত্র একটি একক নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সাতটি মৌলিক রাশির জন্য সাতটি একক ধরা হয়েছে। এছাড়া অন্য সকল একক এক বা একাধিক মৌলিক এককের গুণফল বা ভাগফল থেকে প্রতিপাদন করা হয়েছে। কাজের সুবিধার জন্য একক গুলোর গুণিতক বা উপগুণিতক ব্যবহার করা যায় এবং এককের সাথে সুবিধাজনক উপসর্গ যুক্ত করে তা পাওয় যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions