Home » » সোনার তরী কবিতা

সোনার তরী কবিতা

ভূমিকা:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতাটি ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের নামকবিতা। এই কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এর অধিকাংশ পঙ্ক্তি ৮+৫ মাত্রা পূর্ণপর্বে বিন্যস্ত। সুদীর্ঘ কাল ধরে এই কবিতাটি অনেক আলোচনা ও ব্যাখ্যায় নতুন নতুন তাৎপর্যে অভিষিক্ত। এই কবিতাটিতে কবির জীবনদর্শন অপূর্ব মহিমায় প্রকাশিত হয়েছে। মহাকালের স্রোতে জীবন-যৌবন ভেসে যায়, কিন্তু মানুষের সৃষ্ট কর্ম বেঁচে থাকে অনন্তকাল।

সোনার তরী কবিতা

সোনার তরী

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা ।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা-
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধারে-
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।
যত চাও তত লও তরণী-’পরে।
আর আছে? -আর নাই, দিয়েছি ভরে
এতকাল নদীকুলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলই দিলাম তুলে
থরে বিথরে-
এখন আমারে লহো করুণা করে।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধারে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘে ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।
(শিলাইদহ। বোট। ফাল্গুন ১২৯৮)




সারসংক্ষেপ
বাংলা কবিতার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ একটি চিরায়ত আবেদনবাহী কবিতা। এ কবিতায় চারপাশের প্রবল স্রোতের মধ্যে জেগে থাকা দ্বীপের মতো একটি ধানখেতে নিঃসঙ্গ এক কৃষক তার উৎপন্ন ধানের সম্ভার নিয়ে অপেক্ষমাণ। পাশের খরস্রোতা নদী আকাশের ঘন মেঘ আর ভারী বর্ষণে হিংস্র হয়ে উঠেছে। চারদিকের ‘বাঁকাজল’ অনন্ত কালস্রোতের প্রতীক হিসেবে কৃষকের মনে ঘনঘোর সৃষ্টি করেছে। খরস্রোতা নদীতে তখন ভরাপাল সোনার নৌকা নিয়ে বেয়ে আসা এক মাঝিকে দেখা যায়। চিমিত্মত কৃষক মাঝিকে সকাতরে অনুরোধ করে নৌকা কূলে ভিড়িয়ে তার উৎপাদিত সোনার ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য। মাঝি সোনার ধান মহাকালের নৌকায় তুলে নিয়ে চলে গেলেও নৌকা ছোট বলে তাতে স্থান হয় না কৃষকের। আশাহত কৃষক শূন্য নদীর তীরে নিঃসঙ্গ অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে আসন্ন ও অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক্ষায় পড়ে রইলেন। কবির উপলব্ধি হয়- মহাকালের স্রোতে মানুষের জীবন-যৌবন নিষ্ঠুরভাবে ভেসে গেলেও এই পৃথিবীতে মানুষেরই সৃষ্ট সোনার ফসল, তথা তাঁর দর্শন, কর্মযজ্ঞ বেঁচে থাকে চিরকাল।

 

নির্বাচিত শব্দের অর্থ ও টীকা
আমি একলা- কৃষক কিংবা শিল্পস্রষ্টা কবির নিঃসঙ্গ অবস্থা।
আমার সোনার ধান- কৃষকের শ্রেষ্ঠ ফসল। ব্যঞ্জনার্থে শিল্পস্রষ্টা কবির সৃষ্টিসম্ভার।
আর আছে আর নাই, দিয়েছি ভরে- ছোট জমিতে উৎপন্ন ফসলের সবটাই অর্থাৎ কবির সমগ্র সৃষ্টি তুলে দেওয়া হয়েছে মহাকালের স্রোতে ভেসে আসা সোনার তরী-রূপী চিরায়ত শিল্পলোকে।
এখন আমারে লহো করুণা করে-ফসল বা সৃষ্টিসম্ভার তুলে দেওয়া হয়েছে নৌকায়। এখন ফসল বা সৃষ্টির স্রষ্টা স্থান পেতে চায় ওই মহাকালের নৌকায়।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?- নির্বিকার মাঝির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কৃষক বা কবির চেষ্টা। ‘বিদেশ’ এখানে চিরায়ত শিল্পলোকের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কোনো দিকে নাহি চায়- মহাকালের প্রতীক এই মাঝি নিরাসক্ত বলেই তার সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিপাত নেই।
ক্ষুরধারা- ক্ষুরের মতো ধারালো যে প্রবাহ বা স্রোত।
খরপরশা- ধারালো বর্শা।
গরজে- গর্জন করে।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে- ক্ষুরের মতো ধারালো জলস্রোতে গান গাইতে গাইতে যে মাঝি পারের দিকে এগিয়ে আসছে, রবীন্দ্র-ভাবনায় সে নির্মোহ মহাকালের প্রতীক।
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা-ধানক্ষেতটি ছোট দ্বীপের আঙ্গিকে চিত্রিত। তার পাশে ঘূর্ণায়মান স্রোতের উদ্দামতা। নদীর ‘বাঁকা’ জলস্রোতে বেষ্টিত ছোট ক্ষেতটুকুর আশু বিলীয়মান হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে এ অংশে। ‘বাঁকা জল’ এখানে অনন্ত কালস্রোতের প্রতীক।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোট সে তরী- সোনার তরীতে মহৎ সৃষ্টিরই স্থান সংকুলান হয় কেবল।
ব্যক্তিসত্তা ও তার শারীরিক অসিত্মতবকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার।
তরুছায়ামসীমাখা- ওপারের মেঘে ঢাকা গ্রামটি যেন গাছের ছায়ার কালো রঙে মাখানো।
থরে বিথরে- স্তরে স্তরে, সুবিন্যস্ত করে।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে- এই আগস্ত্তক মাঝি কৃষক বা শিল্পস্রষ্টা কবির হয়ত চেনা। কেননা, চেনা মনে হলেও কৃষক বা শিল্পস্রষ্টা কবির সংশয় থেকেই যায়।
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে- চিরায়ত শিল্পলোকে ঠাঁই পাওয়ার জন্যই কৃষকরূপী কবির ব্যাকুল অনুনয় এখানে প্রকাশিত।
ভারা ভারা- ‘ভারা’ অর্থ ধান রাখার পাত্র, এরকম পাত্রের সমষ্টি বোঝাতে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে।
ভরসা- আশা, নির্ভরশীলতা।
শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি- নিঃসঙ্গ অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে আসন্ন ও অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক্ষার ইঙ্গিত। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : ‘‘মহাকাল আমার সর্বস্ব লইয়া যায় বটে, কিন্তু আমাকে ফেলিয়া যায় বিস্মৃতি ও অবহেলার মধ্যে। ...সোনার তরীর নেয়ে আমার সোনার ধান লইয়া যায় খেয়াপারে, কিন্তু আমাকে লয় না।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->