হাইগেনের নীতি
হাইগেনসে্র নীতি (Huygens’ Principles):
ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাইগেন্স (Christian Huygens) ১৬৭৮ সালে তরঙ্গমুখের সঞ্চালন বিষয়ে একটি জ্যামিতিক পদ্ধতির অবতারণা করেন। তার এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে আলেকের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যাতিচার, অপবর্তন ইত্যাদি খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা যায় এবং অনুভব করা যায়। অর্থাৎ আলোকীয় ঘটনাগুলো ব্যাখ্যার জন্য খুব উপযোগী।
হাইগেন্সের নীতিঃ
একটি তরঙ্গমুখের উপর অবস্থিত প্রতিটি বিন্দু এক একটি আন্দোলনের ক্ষুদ্র উৎস (গৌণ উৎস) এবং ঐ বিন্দুগুলো থেকে গৌণ তরঙ্গমালা নির্গত হয়ে একই বেগে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সব গৌণ তরঙ্গমালা সম্মুখ দিকে মোড়ক বিবেচনা করলে বা ঐ সব তরঙ্গমালার সম্মুখ দিক স্পর্শ করে একটি তল অঙ্কন করলে তরঙ্গ মুখের নতুন অবস্থান পাওয়া যায়। এটিই হাইগেন্সের নীতি।
ব্যাখ্যাঃ চিত্রে হাইগেন্সের নীতি দেখানো হলো।
হাইগেন্সের নীতি অনুসারে উৎস থেকে আলো আড় তরঙ্গ আকারে ইথার মাধ্যমের ভিতর দিয়ে চারিদিকে t সময় পর ছড়িয়ে পড়ে। আলোর বেগ c হয় তবে t` সময়ে S উৎস থেকে উৎপন্ন তরঙ্গ ct` দূরতব অতিক্রম করবে। সুতরাং S উৎস থেকে ct` এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি PQ গোলক অঙ্কণ করলে গোলকের উপর সমদশা সম্পন্ন বিন্দুর সঞ্চার পথকে তরঙ্গমুখ বলে। হাইগেন্সের নীতি অনুসারে তরঙ্গমুখের প্রতিটি বিন্দু R1, R2, R3, R4, R5, R6 এক একটি গৌণ উৎস হিসাবে কাজ করে এবং সেখান থেকে গোলীয় অনুতরঙ্গ চারিদিকে প্রসারিত হতে শুরু করে। এখন, t সময় পর গৌণ উৎস থেকে উৎপন্ন তরঙ্গ ct দূরতব অতিক্রম করবে। সুতরাং, R1, R2 , R3, R4, R5, R6 প্রতিটি গৌণ উৎস থেকে ct এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে এক একটি গোলক কল্পনা করলে R1, R2, R3, R4, R5, R6 বিন্দু থেকে অনুতরঙ্গগুলো t সময় পরে গোলকগুলোর উপরিতলে পৌঁছাবে। হাইগেন্সের নীতি অনুসারে ছোট ছোট গোলকগুলোর সামনের দিকের স্পর্শতল P1Q1 হবে t সময় পর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া তরঙ্গমুখ। মনে রাখতে হবে P1Q1 গোলীয় তরঙ্গমুখের কেন্দ্র S। আলোক উৎস অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে তরঙ্গমুখের দূরতব খুব বেশী না হলে তরঙ্গমুখ গোলীয় হয় এবং আলোক উৎস অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে তরঙ্গমুখের দূরতব খুব বেশী হলে তরঙ্গমুখকে সমতল ধরা হয়। হাইগেন্সের অঙ্কণ পদ্ধতি থেকে দেখা যায় যে, PQ তরঙ্গমুখের পিছনে P1Q1 তরঙ্গমুখের মত P2Q2 তরঙ্গমুখ পাওয়া যায়, যাকে পশ্চাদ্বর্তী তরঙ্গমুখ বলা যেতে পারে। হাইগেন্সের মতে পশ্চাদ্বর্তী তরঙ্গমুখের কোনো অস্তিত্ব নাই। তার এই বক্তব্যের তাত্ত্বিক এবং পরীক্ষণমূলক প্রমাণ পরে পাওয়া গেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions