লেঞ্জের সূত্র
লেঞ্জের সূত্র (Lenz’s Law)
তাড়িতচৌম্বক আবেশের ক্ষেত্রে কুন্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ কোন দিকে হবে তা নির্ণয়ের জন্য বিজ্ঞানী লেঞ্জ একটি সূত্র প্রদান করেন। এটি লেঞ্জের সূত্র নামে পরিচিত।
সূত্রটি নিম্নরূপ:
যেকোনো তাড়িতচৌম্বক আবেশের বেলায় আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ এমন হবে যে, যে কারণে বা পরিবর্তনের ফলে প্রবাহের সৃষ্টি হয়, প্রবাহ সর্বদা সেই কারণকে বা পরিবর্তনকে বাধা দেয়।
ব্যাখ্যা: চিত্রে একটি চুম্বকের উত্তর মেরু এবং এর কাছাকাছি অবস্থিত একটি পরিবাহী কুন্ডলীর প্রস্থচ্ছেদ দেখানো হয়েছে। কুন্ডলীটির দিকে চুম্বকটি ঠেলে দিলে, কুন্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। লেঞ্জের সূত্র অনুসারে এ প্রবাহের অভিমুখ কী হবে দেখা যাক।
একটি তড়িদ্বাহী কুন্ডলী ‘চৌম্বক পাত’ হিসেবে ক্রিয়া করে। এর একটি পৃষ্ঠ উত্তর মেরুর মতো এবং অপরটি দক্ষিণ মেরুর মতো আচরণ করে। যে পাশ থেকে তাকালে প্রবাহ ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে মনে হয় সে পাশে উত্তর মেরু সৃষ্টি হয়। লেঞ্জের সূত্রানুসারে, কুন্ডলীটিকে এর দিকে অগ্রসরমান উত্তর মেরুর গতিকে বাধা দিতে হলে, এই মেরুর সম্মুখবর্তী কুন্ডলীর পৃষ্ঠে উত্তর মেরুর উদ্ভব হওয়া দরকার। কুন্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ (ক) নং চিত্রে প্রদর্শিত দিকে হলেই কেবল এটি সম্ভব। এরূপ হলে কুন্ডলীর সৃষ্ট উত্তর মেরু এবং চুম্বকের উত্তর মেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে। কাজেই এ স্থলে চুম্বক যে পাশে আছে সে পাশ থেকে কুন্ডলীর দিকে তাকালে, কুন্ডলীর তড়িৎ প্রবাহ বামাবর্তী অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে (anticlockwise) বলে মনে হবে। আবার, চুম্বকটিকে টেনে কুন্ডলী হতে দূরে নিতে থাকলে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ চুম্বকের সম্মুখবর্তী কুন্ডলীর পৃষ্ঠে দক্ষিণ মেরু উৎপন্ন করে এই টেনে নেয়াকে বাধা দিবে। কুন্ডলীর এ পৃষ্ঠে দক্ষিণ মেরু উৎপন্ন হলে, কুন্ডলীতে প্রবাহের অভিমুখ (খ) নং চিত্রে প্রদর্শিত অভিমুখের মতো হবে। অথাৎ, এ স্থলে প্রবাহ হবে ডানাবর্তী বা ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে (clockwise)। সুতরাং, লেঞ্জের সূত্র হতে আমরা আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি তথা তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ পাই।
এ সমীকরণটি গাণিতিকভাবে ফ্যারাডে এবং লেঞ্জের সূত্রগুলো প্রকাশ করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions