জুলের তাপীয় ক্রিয়ার সূত্র
কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য থাকলে এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই তড়িৎ প্রবাহের কিছু তড়িৎশক্তি পরিবাহীর রোধকে অতিক্রম করার কাজে ব্যয়িত হয়। এই ব্যয়িত শক্তিই পরিবাহীতে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে পরিবাহী উত্তপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়া বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ যদি বৈদ্যুতিক কেট্লিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়, তাহলে কেট্লির কয়েল উত্তপ্ত হয়। ফলে তাপ উৎপন্ন হয় এবং কেট্লির পানি ধীরে ধীরে গরম হতে থাকে। এছাড়া বৈদ্যুতিক হিটার, বৈদ্যুতিক বাতি, ইস্ত্রি ইত্যাদি হচ্ছে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়ার ব্যবহারিক রূপ। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী জেম্স প্রেসকট জুল এই প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন। একে জুলের তাপীয় ক্রিয়া বলা হয়।
তড়িৎ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ উৎপন্নের কারণ ইলেকট্রন মতবাদের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। পরিবাহীতে কিছু সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। পরিবাহীতে দুই বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হলে মুক্ত ইলেকট্রনসমূহ আন্তঃআণবিক স্থানের মধ্য দিয়ে নিমণ বিভব বিন্দু হতে উচ্চ বিভব বিশিষ্ট বিন্দুর দিকে চলতে থাকে। ফলে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। মুক্ত ইলেকট্রনগুলো চলার সময় পরিবাহীর পরমাণুর সাথে ধাক্কা খায়। এর ফলে ইলেকট্রনের গতিশক্তি পরমাণুতে সঞ্চালিত হয় এবং পরমাণুর গতিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই অতিরিক্ত গতিশক্তি তাপে রূপান্তরিত হয় এবং পরিবাহীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই কারণে তড়িৎ প্রবাহের ফলে বর্তনীতে তাপ উৎপন্ন হয়।
জুলের তাপীয় ক্রিয়ার সূত্র সমূহ:
পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ তড়িৎ প্রবাহমাত্রা, রোধ এবং প্রবাহকালের উপর নির্ভর করে। বিজ্ঞানী জুল বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল হতে তড়িৎপ্রবাহ ও এর ফলে উদ্ভুত তাপের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য তিনটি সূত্রের প্রবর্তন করেন। এই সূত্রগুলোকে জুলের সূত্র বলা হয়। নিম্নে সূত্রগুলো বিবৃত করা হলো:
প্রথম সূত্র:
তড়িৎ প্রবাহের সূত্র: পরিবাহীর রোধ (R) এবং প্রবাহকাল (t) স্থির থাকলে তড়িৎ প্রবাহরে ফলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H), তড়িৎ প্রবাহ (I) এর বর্গের সমানুপাতিক হবে।
অর্থাৎ HæI2
; যখন R ও t ধ্রুবক।
সূত্রানুসারে, কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীতে নির্দিষ্ট সময় ধরে তড়িৎ প্রবাহ চালালে যে তাপ উৎপন্ন হয়, ঐ একই সময় ধরে যদি দ্বিগুণ প্রবাহ চালানো হয় তাহলে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ চারগুণ হবে। এভাবে প্রবাহ তিনগুণ করলে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ হবে নয়গুণ।
যদি কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে I1, I2, I3,........ প্রবাহ চালনা করলে যদি উৎপন্ন তাপের পরিমাণ
যথাক্রমে H1, H2, H3,........ হয়, তাহলে সূত্রানুসারে,
দ্বিতীয় সূত্র:
রোধের সূত্র: তড়িৎ প্রবাহ (I) এবং প্রবাহকাল (t) স্থির থাকলে তড়িৎ প্রবাহের ফলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H), রোধের (R) সমানুপাতিক হবে।অর্থাৎ HæR; যখন I ও t ধ্রুবক।
সূত্রানুসারে, নির্দিষ্ট সময় ধরে ভিন্ন ভিন্ন রোধের পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যদি একই পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করা হয়, তাহলে রোধ ও উদ্ভূত তাপের পরিমাণ সমান হবে। অর্থাৎ রোধ দ্বিগুণ হলে উদ্ভূত তাপের পরিমাণও দ্বিগুণ হবে।
যদি একই সময় ধরে একই পরিমাণ প্রবাহ R1, R2, R3,........ রোধের পরিবাহীর মধ্য দিয়ে চালনা করলে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ যথাক্রমে H1, H2, H3,........ হয়, তাহলে সূত্রানুসারে,
তৃতীয় সূত্র:
সময়ের সূত্র: তড়িৎ প্রবাহ (I) এবং পরিবাহীর রোধ (R) স্থির থাকলে তড়িৎ প্রবাহের ফলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H), প্রবাহকালের (t) সমানুপাতিক হবে।
অর্থাৎ H æ t; যখন I ও R ধ্রুবক।
সূত্রানুসারে, কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীর মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ প ্রবাহ বিভিন্ন সময় ধরে চালনা করা হলো। যদি প্রবাহকাল দ্বিগুণ হয়, তাহলে উদ্ভূত তাপের পরিমাণও দ্বিগুণ হবে। আবার প্রবাহকাল অর্ধেক হলে উদ্ভূত তাপও অর্ধেক হবে।
কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীর মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ প্রবাহ t1, t2, t3,........ সময় ধরে চালালে যদি উদ ভূত তাপের পরিমাণ যথাক্রমে H1, H2, H3,........ হয়, তাহলে সূত্রানুসারে,
জুলের তিনটি সূত্রকে নিমণরূপভাবে লেখা যায়,
H æ I2Rt
বা, H = K I2Rt .... ..... ..... .....(২.৩)
এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। প্রবাহ I কে অ্যাম্পিয়ার, রোধ R কে ওহ্ম, সময় t কে সেকেন্ড এবং তাপ H কে জুলে প্রকাশ করলে K এর মান পাওয়া যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions