Home » » কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যা জাতীয় ঋণ কাঠামো (credit structure)-এর স্থায়িত্ব রক্ষা করে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ বৃদ্ধি করে। অন্যভাবে বলা যায়, যে ব্যাংকের উপর একটি দেশের মুদ্রা ও ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে, তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। দেশের প্রধান ব্যাংকই হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে দেশের সকল ব্যাংকিং ও মূদ্রা বাজার গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি দেশের সার্বিক প্রয়োজনে নোট ও মুদ্রা প্রচলন করে, ঋণ নিয়ন্ত্রণকরে, মূদ্রা বাজার গঠন ও পরিচালনা করে, এবং দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার নেতৃত্বদানসহ সরকারের ব্যাংক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। দ্রব্যমূল্যের স্থিরতা বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সার্বিক জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত, পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংজ্ঞা সম্পর্কে প্রখ্যাত ব্যাংক বিশারদগণ কি বলেছেন তা জেনে নিই।

অধ্যাপক আর. সি কেন্ট এর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা জনকল্যাণের প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের প্রচলিত মূদ্রার/অর্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

অধ্যাপক এম. এইচ. ডী কক-এর মতে, যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যে ব্যাংকের নোট ইস্যুর ক্ষেত্রে একক বা আংশিক একচেটিয়া অধিকার রয়েছে, সেটিই হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি আরো বলেন, এটি মুনাফার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে জনসাধারণের স্বার্থবৃদ্ধি এবং দেশের সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে। অধ্যাপক কিসচ এবং এলকিনের মতে, যে ব্যাংকের অপরিহার্য দায়িত্ব হলো দেশের মূদ্রা-মান স্থিতিশীল রাখা, তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। অধ্যাপক আর. এস. সেয়ার্স-এর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের একটি প্রতিষ্টান, যা সরকারের পক্ষে অধিকাংশ আর্থিক কার্যাবলী সম্পাদন করে এবং উক্ত কার্যাবলী সম্পাদনকালে এবং বিভিন্ন পন্থায় দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাবলীর উপর প্রভাব বিস্তার মাধ্যমে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করে।

এ সংজ্ঞাগুলো বিশেস্নষণ করে আমরা বলতে পারি যে-
ক) কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণে;
খ) এটি দেশের আর্থিক ও ব্যাংকিং কাঠামোর শীর্ষে অবস্থান করে এবং নেতৃত্ব প্রদান করে;
গ) এটি সকল ব্যাংকের মুরুববী। দেশের অর্থ ও মূদ্রা, ঋণ এবং ব্যাংক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক;
ঘ) দেশের নোট ও মূদ্রা প্রচলনের একক অধিকার সংরক্ষণ করে।
ঙ) দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও মূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কাজটি এ ব্যাংকের উপর অর্পিত;
চ) মুনাফা অর্জন এর উদ্দেশ্য নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণই এর মূল উদ্দেশ্য। পরিশেষে বলা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের প্রধান সরকারী ব্যাংক। এটি দেশের মূদ্রা ও ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মূদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখার মাধ্যমে সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করে। অর্থবাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এ ব্যাংকের উপরই থাকে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো ‘বাংলাদেশ ব্যাংক'। ঢাকার মতিঝিলে এ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ১৬৫৬ সালে সুইডেনে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোড়াপত্তন হয়েছিল। রিকস্ ব্যাংক অব সুইডেন পৃথিবীর প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আধুনিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃতি ও আওতা (Nature and Scope of Central Bank in Modern Economy)
আধুনিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃতি নিয়ে প্রায়ই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আসল ভূমিকা কি, সে সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু চিরা-চরিত ধারণার জন্য এই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রধানত: দুটি কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার জ্ঞান থাকা উচিত।

প্রথমত: উন্নত দেশগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত: বাস্তব প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে আসেত্ম আসেত্ম বেড়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের মত সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে সচরাচর একটি ঔপনিবেশিক জোয়াল হতে মুক্তির পর পরই দেশের অর্থনীতিতে ছক-কাটা ধরনের একটি নতুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুড়ে দেওয়া হয়। ফলে এসব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাহ্যিক সাংগঠনিক উপকরণ ও ক্ষমতাবলী অন্য সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মত করে দেওয়া হলেও এগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতীত ঐতিহ্য কিংবা অভিজ্ঞতা দুটিরই অভাব থাকে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে ভুল বুঝার অবকাশ রয়েছে।

দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশ এখন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিসরে জাতীয় পুনর্গঠনে ব্যস্ত। কাজেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলীতে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামোর সঠিক প্রতিফলন ঘটানো একান্তভাবে জরুরি। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী সরকারী অর্থনৈতিক নীতিমালার একটি দিক মাত্র।

বেসরকারী পুঁজিবাদের উজ্জ্বল দিনগুলিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকগুলিই বেসরকারী মালিকানায় ছিল। ফলে তাদের কাজ কারবারে অনেক সময় বেসরকারী স্বার্থ প্রাধান্য পেত। তবে বর্তমান যুগে সব জায়গাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত সরকারী নিয়ন্ত্রণে থেকে জাতীয় স্বার্থকে সবচেয়ে উর্ধ্বে স্থান দেয় এবং কখনই লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সাধারণ স্বীকৃত বৈশিষ্ট্য হল এই যে, একটি রাষ্ট্রের নগদ অর্থ-সঞ্চয় এ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হওয়া উচিত। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা রাখতে হয়। এ ব্যবস্থা জরুরী প্রয়োজন মিটাতে সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণদানের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য (Objectives of Central Bank)

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। বলতে পারেন, সরকারই এ ব্যাংকের মালিক। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রাখার মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য উদ্দেশ্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. মূদ্রা প্রচলনঃ দেশের অভ্যন্তরে চাহিদার আলোকে লেনদেনের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ধাতব মূদ্রা ও কাগজী নোট প্রচলন করার উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্ভব। লক্ষ্য করলে দেখবেন, কারেন্সী নোটের (টাকার) উপরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর রয়েছে। তার মানে, বাংলাদেশ ব্যাংক কারেন্সী নোট ইস্যু করে কিন্তু এক টাকার নোট ইস্যু করে সরকার।

২. ঋণ নিয়ন্ত্রণঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থ বাজার স্থিতিশীল রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

৩. মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষাঃ অর্থের যোগান ও সুদের হার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্তর স্থিতিশীলতা রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

৪. অর্থ গঠন ও পরিচালনাঃ দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলীকে গতিশীল করার জন্য দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও শৃঙ্খলাপূর্ণ অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত ও পরিচালিত হয়।

৫. ব্যাংক ব্যবস্থার সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণঃ সুষ্ঠু ব্যাংক ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় হাতিয়ার। একটি সুসংহত এবং শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৬. সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করাঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের তহবিল সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন নিষ্পত্তি করে। অর্থাৎ সরকারের অর্থ আদায়, পরিশোধ ও সংরক্ষণে এটি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

৭. ব্যাংকের ব্যাংক হিসেবে দায়িত্ব পালনঃ তালিকাভুক্ত ব্যাংকের ব্যাংকিং সংক্রান্ত লেনদেন নিষ্পত্তির দায়িত্ব পালন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য। অন্যান্য ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতিপয় শর্ত মেনে এ দায়িত্ব পালন করে।

৮. নিকাশ ঘরের দায়িত্ব পালনঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘরের মাধ্যমে দেশের আন্তঃ ব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করে। ফলে আন্তঃব্যাংকিং ক্ষেত্রে চেক, ড্রাফট, বিনিময় বিল, সিকিউরিটি, ঋণপত্র ইত্যাদির বিনিময় সংক্রান্ত নিষ্পত্তি সহজ হয়।

৯. মূলধন গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদান করে মূলধনের যোগান দিয়ে থাকে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে। এ ছাড়া ব্যাংকের ঋণ যাতে অর্থনীতিতে মূলধন হিসেবে ভূমিকা রাখে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া কেন্দী্রয় ব্যাংকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

১০. মূদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণঃ একেক দেশের মুদ্রার মান একেক রকম। আন্তর্জাতিক লেনদেনর জন্য দু’টি ভিন্ন মুদ্রার মধ্যে একটি বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য মূদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

১১. বৈদেশিক বাণিজ্যের বিকাশঃ বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর একটি উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যে এটি বৈদেশিক মূদ্রা সংরক্ষণ, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট পরিস্থিতি দেশের অনুকূলে আনার চেষ্টা করে।

১২. বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগঃ পৃথিবীর অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রধান উদ্দেশ্য। আন্তর্জাতিক আর্থিক সম্পর্কের ভিত্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

১৩. সরকারকে উপদেশ প্রদানঃ বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য। এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক এবং প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

পরিশেষে বলা যায়, যে দেশের অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ঋণ ও বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য। জানা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য। এবার আসুন কিভাবে এ উদ্দেশ্য অর্জন করে তা নিয়ে আলোচনা করি।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অর্থ বাজারের সংগঠক, অভিভাবক, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। তাই এর মর্যাদা, গুরম্নত্ব এবং কার্যাবলীর প্রকৃতি আলাদা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে সকল কার্যাবলী সম্পাদন করে তা নিচে আলোচনা করা হলো:

ক) সাধারণ কার্যাবলীঃ

১. নোট ইস্যুঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজই হলো দেশের জন্য প্রয়োজনের আলোকে মুদ্রা প্রচলন করা। দেশের জনগণের চাহিদা, ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে তাল মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কাজ করে থাকে।

২. মূদ্রার মান সংরক্ষণঃ বৈদেশিক বিনিময় হার নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মূদ্রার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটায়।

৩. স্বর্ণমান সংরক্ষণঃ মুদ্রা সরবরাহ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ বা স্বর্ণমানের অন্য একটি মুদ্রা রিজার্ভ হিসেবে রাখে। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরবরাহকৃত অর্থের বিপরীতে ৩০% স্বর্ণ বা রৌপ্য বা বৈদেশিক মূদ্রা রিজার্ভ রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য এ নিয়ম রক্ষা করা বাধ্যতামূলক।

৪. মূদ্রা বাজার পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শক্তিশালী মূদ্রা বাজার গঠন, পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

৫. ঋণ নিয়ন্ত্রণঃ দেশের শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ঋণের প্রয়োজন। এ ঋণের পরিমাণ বেশি হলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং মূদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ সৃষ্টির কার্যক্রম ও ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এতে দেশের অভ্যন্তরে মূদ্রা ও মূল্যমান স্থিতিশীল থাকে।

৬. বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশী মূদ্রার সাথে দেশীয় মূদ্রার বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় মূদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করে।

৭. বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা কৌশল ব্যবহার করে বৈদেশিক মূদ্রার আদান-প্রদান এবং আমদানিরপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য বিরাজ করে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটে।

খ) সরকারের ব্যাংক হিসেবে কার্যাবলীঃ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক। এটি সরকারের ব্যাংকার, প্রতিনিধি এবং উপদেষ্টা হিসেবে কার্য সম্পন্ন করে থাকে। সরকারের ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী নিচে আলোচনা করা হলো:

১. সরকারের তহবিল ও সম্পদ সংরক্ষণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে সরকারের যাবতীয় তহবিল সংগ্রহ, সংরক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করে।

২. আর্থিক লেনদেন সম্পাদনঃ সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে-বিদেশে সকল আর্থিক লেনদেন সম্পাদন করে। এর মাধ্যমেই বৈদেশিক মূদ্রা ক্রয়-বিক্রয় হয় এবং সরকারি প্রাপ্তি ও পরিশোধসমূহ নিষ্পত্তি হয়।

৩. অর্থ গ্রহণ ও স্থানান্তরঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের সকল খাতের পাওনা ও রাজস্ব সংগ্রহ করে এবং সরকারের নির্দেশে উক্ত অর্থ এক খাত থেকে অন্য খাতে এবং একস্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তর করে।

৪. ঋণদান ও তত্ত্বাবধানঃ সরকারের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ প্রদান করে। এছাড়া সরকারের ট্রেজারি বিল, ফান্ড, সিকিউরিটি বিক্রি করে অর্থ ও ঋণ গ্রহণ করে এবং ঋণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে।

৫. সরকারের হিসাব সংরক্ষণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় অর্থ ও সম্পদের সুষ্ঠু হিসাব সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে। সে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকারের ট্রেজারি বলা হয়।

৬. বাহক ও আর্থিক সংস্থার সাথে সম্পর্কঃ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আর্থিক সংস্থা যেমন- বিশ্বব্যাংক আই.এম.এফ., এডিবি, আই.ডি.বি. ইত্যাদির সাথে যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখে।

৭. বৈদেশিক মূদ্রা ও বিনিময় নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে দেশীয় অর্থনীতি উন্নয়ন, বিকাশ ও সমৃদ্ধির জন্য বৈদেশিক মূদ্রা ক্রয়-বিক্রয় এবং বৈদেশিক বিনিময় দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করে।

৮. সরকারের উপদেষ্টা ও প্রতিনিধিঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে। সরকারের ব্যাংক, প্রতিনিধি এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে। সরকারের পক্ষে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ, চুক্তিসম্পাদন ও লেনদেন সম্পাদন করে।

৯. সরকারের আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের আর্থিক নীতিমালা প্রণয়নে সকল প্রকার তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করে। তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।


গ) অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংক হিসেবে কার্যাবলীঃ

অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংক হিসেবেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরম্নত্বপূর্ণ কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। যা নিমেণ আলোচনা করা হলোঃ

১. ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে নতুন নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর শাখা বিস্তার, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. ব্যাংক তালিকাভুক্তিকরণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরম্নত্বপূর্ণ কাজ হলো ব্যাংক তালিকাভুক্তি করা। এজন্য তালিকাভুক্তির পূর্বে এবং পরে পালনীয় শর্তাবলী কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে দেয় এবং তা সঠিকরূপে পালিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে। শর্ত পূরণ না করলে কোন ব্যাংক তালিকাভুক্ত করা হয় না।

৩. তালিকাভুক্ত ব্যাংকের ব্যাংকঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তালিকাভুক্ত সকল সদস্যব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রদত্ত নীতিমালা ও নির্দেশাবলী মেনে চলতে হয়।

৪. ঋণের শেষ আশ্রয়স্থলঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনে তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহকে ঋণদান করে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ যখন বিকল্প কোন উৎস থেকেই ঋণ পায় না তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ দিয়ে সাহায্য করে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয়।

৫. ঋণ তদারকঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কিরূপে ঋণমঞ্জুর করছে এবং তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণে সহায়ক হবে কিনা ইত্যাদি তদারকী করে।

৬. তহবিল সংরক্ষণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংক থেকে তাদের আমানতের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে ‘রিজার্ভ' তহবিল’ হিসেবে সংরক্ষণ করে থাকে। ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এই হার প্রয়োজনে বাড়ানোকমানো হয়।

৭. নিকাশ ঘর হিসেবে কাজঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন ও দেনাপাওনার নিষ্পত্তির ব্যাপারে নিকাশঘর হিসেবে কাজ করে থাকে। নিকাশ ঘর ছাড়া আন্তঃব্যাংক লেনদেন সম্পন্ন হয় না।

৮. হিসাব নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের হিসাবপত্র সংরক্ষণ পদ্ধতি স্থির করে দেয়। অপর দিকে, গৃহীত সকল নীতিমালা ও নির্দেশাবলীর আলোকে সকল হিসাবপত্র সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা তা নিরীক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে।

৯. উপদেষ্টা ও প্রতিনিধিত্বঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপদেশ, পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা এবং সহযোগিতা প্রদান করে।

ঘ) উন্নয়নমূলক কার্যাবলীঃ


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা--র সাথে জড়িত থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উন্নয়নমূলক কাজগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো:

১. ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, শাখা খোলা ও পরিচালনার মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতের বাস্তব উন্নয়ন করে।

২. উৎপাদন খাতের উন্নয়নঃ দেশের উৎপাদনশীল খাত, যেমন কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পরিবহন ইত্যাদির উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাহায্য সহযোগিতা করে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষায়িত ব্যাংক সৃষ্টি, প্রতিষ্ঠা এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে উৎসাহ প্রদান করে থাকে।

৩. বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়নঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নীতিপদ্ধতি নির্ধারণ করে। এতে দেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হয়।

৪. অর্থনেতিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তাঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করে। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে সংগতি রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দায়িত্ব সম্পন্ন করে থাকে।

৫. কর্মসংস্থানঃ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে থাকে।

ঙ) অন্যান্য কার্যাবলীঃ

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিচে এগুলো বর্ণনা করা হলো:

১. তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহ থেকে এবং বহির্বিশ্ব থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনের আলোকে তা সর্বত্র সরবরাহ করে।

২. গবেষণা পরিচালনাঃ দেশের অর্থ ও মূদ্রা বাজার উন্নয়ন, ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সরকারের আর্থিক নীতিমালা নির্ধারণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন গবেষণা কার্য পরিচালনা করে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পৃথক শাখা রয়েছে।

৩. আর্থিক রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্তের আলোকে এবং পরিচালিত গবেষণার আলোকে বিভিন্ন আর্থিক রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশ করে থাকে। এতে দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমস্ত চিত্র ফুটে উঠে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পৃথক শাখা রয়েছে।

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম সম্পাদন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ ও মুদ্রা বাজারের প্রাণ।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->