পর্যায় সারণি কাকে বলে
পর্যায় সারণি কাকে বলে
বিভিন্ন মৌলের মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মিল এবং এ সকল ধর্মের ক্রম পরিবর্তন দেখানোর জন্য বিজ্ঞানীগণ সকল মৌলকে সারি ও কলামের মাধ্যমে একটি বিশেষ সারণীতে সাজিয়েছেন। এই সারণীকে পর্যায় সারণী বলা হয়।
রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ সর্বপ্রথম পর্যায় সারণীর ধারণা প্রদান করেন। এজন্য তাকে পর্যায় সারণীর জনক বলা হয়।
পর্যায় সারণীর আধুনিক সূত্র হলো- মৌল সমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলী তাদের পারমাণবিক সংখ্যানুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
আধুনিক পর্যায় সারণীর বৈশিষ্ট্য:
১। পর্যায় সারণীতে ৭টি পর্যায় ও ৮টি গ্রুপ বিদ্যমান।
২। প্রতিটি পর্যায় বামদিকে গ্রুপ I থেকে আরম্ভ করে ডানদিকে গ্রুপ 0 পর্যন্ত বিস্তৃত।
৩। প্রথম পর্যায়ে ২টি মৌল, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮টি করে, চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ে ১৮টি করে মৌল আছে। ষষ্ঠ পর্যায়ে আছে ৩২ মৌল। সপ্তম পর্যায়ে এখনও অসম্পূর্ণ।
মৌলসমূহের ধর্ম তাদের শ্রেণীর উপর নির্ভর করে। একই শ্রেণীভুক্ত মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে যথেষ্ট মিল থাকে। ধর্মগুলো বিভিন্ন অনুক্রমে উপর থেকে নিচের দিকে পরিবর্তিত হয়।
কোন শ্রেণীতে একটি মৌলের পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন সংখ্যা তার শ্রেণীসংখ্যার সমান হয়।
মৌলসমূহের পর্যায়ক্রমিক ধর্ম:
১। একই পর্যায়ে যতই ডানদিকে যাওয়া যায় অর্থাৎ পারমাণবিক সংখ্যা যতই বাড়ে পরমাণুর আকার ততই কমতে থাকে, মৌলের যোজনী ততই বৃদ্ধি পায়; মৌলের ধাতব ধর্ম ততই হ্রাস পায়।
২। একই পর্যায়ে যতই ডানদিকে যাওয়া যায় মৌলের তড়িৎ ধণাত্বক ধর্ম ততই হ্রাস পায় এবং অম্ল ধর্ম বৃদ্ধি পায়।
৩। একই গ্রুপে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের গলনাংক ও স্ফুটনাংক ততই বৃদ্ধি পায়। গ্রুপ IA এর ক্ষেত্রে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের ক্রিয়াশীলতা ততই বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে গ্রুপ VIIA এর ক্ষেত্রে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের ক্রিয়াশীলতা ততই হ্রাস পায়।
♦ ক্ষার ধাতু : যে সকল ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার উৎপন্ন করে তাদের ক্ষার ধাতু বলে। পর্যায় সারণীর IA গ্রুপের মৌলগুলো হল ক্ষার ধাতু। এগুলো হলো: লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম।
♦ মৃৎকার ধাতু: ভুত্বকের মৃত্তিকায় প্রাপ্ত যে সকল ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষারক গঠন করে তাদের মৃৎক্ষার বলে। পর্যায় সারণীর IIA গ্রুপের মৌলগুলো হলো মৃৎক্ষার ধাতু। মৃৎক্ষার ধাতুগুলো হলো: ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
♦ মুদ্রা ধাতু: মুদ্রা তৈরিতে যে সকল ধাতু ব্যবহার করা হয় তাদেরকে মুদ্রা ধাতু বলে। পর্যায় সারণীর IB গ্রুপের মৌলগুলো হলো মুদ্রাধাতু। মুদ্রা ধাতুগুলো হলো কপার, সিলভার, গোল্ড।
♦ নিষ্ক্রিয় গ্যাস: যেসব মৌল রাসায়নিকভাবে ক্রিয়াক্ষম নয়, তাদের নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে। এরা কোন মৌলের সাথে সংযুক্ত হতে চায় না। এমনকি নিজেরা নিজেদের সাথেও নয়।
পর্যায় সারণির ডানদিকে শূণ্যগ্রুপে অবস্থিত ৬টি গ্যাসীয় মৌল হলো নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এদের পরমাণুর বহিঃস্থ শেলে ইলেকট্রনের অস্টক পূর্ণ থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়। নিষ্ক্রিয় গ্যাস হলো- হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, রেডন, ও জেনন।
এ গ্যাসগুলোর মধ্যে রেডন হলো তেজস্ক্রিয় গ্যাস। রেডিয়াম মৌলের তেজস্ক্রিয় বিভাজন হতে রেডন উৎপন্ন হয়। গ্যাস হিসেবে রেডন সবচেয়ে ভারী।
হিলিয়ামের চেয়ে কেবল হাইড্রোজেন হালকা। তবে হাইড্রোজেন দাহ্য বলে বিমানে হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হিলিয়াম ব্যবহৃত হয়।
হিলিয়ামের চেয়ে কেবল হাইড্রোজেন হালকা। তবে হাইড্রোজেন দাহ্য বলে বিমানে হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হিলিয়াম ব্যবহৃত হয়।
হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন, রেডন এই ছয়টি মৌলের শেষ কক্ষপথ ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ, অর্থাৎ হিলিয়াম ব্যতীত প্রত্যেকটি মৌলের শেষ কক্ষপথে আটটি ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ, অর্থাৎ হিলিয়াম ব্যতীত প্রত্যেকটি মৌলের শেষ কক্ষপথে আটটি ইলেকট্রন রয়েছে। হিলিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা দুই, তাই এর একটি মাত্র কক্ষপথ দুটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions