চলচ্চিত্র আবিষ্কারের ইতিহাস
চলচ্চিত্র (১৮৯৩)
-টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
১৮৩৩ সালে বিজ্ঞানী হার কতকগুলি স্থির ছবিকে পর পর সাজিয়ে তাড়াতাড়ি চালিত করে ছবিগুলোকে জীবন্ত করে তোলার জন্য একটি খেলনা বানালেন। নাম দিলেন Zeotrohe বা জীবন চক্র।
১৮৬০ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী সেলার্স ক্যামেরায় একটি ঘটনার পর | প্রতিটি মুহূর্তের পর পর ছবি তুলে একটি চাকার গায়ে সেই ফটোগুলিকে পর পর বসিয়ে একটি যন্ত্র বানালেন। ১৮৬১ সালে পেটেন্ট নিয়ে যন্ত্রটির নাম দিলেন কিনেম্যাটোস্কোপ। এই যন্ত্রে একটি ঘটনার স্থির ছবিগুলিকে সচল মনে হত।
১৮৭৭ সালে বিজ্ঞানী মায়ব্রিজ ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্যাণ্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা লেল্যাণ্ড সাহেবের ঘোড়া ছুটিয়ে যাবার ছবিকে সচল করে তুললেন। এজন্য তিনি খোলা মাঠে চব্বিশটি ক্যামেরা এনে এক প্রান্তে সারি দিয়ে বসালেন। ক্যামেরার শার্টারগুলির সঙ্গে সরু সুতো বেঁধে সুতোর অপর প্রান্তগুলি মাঠের অপর দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে খুঁটির সঙ্গে টান টান করে বেঁধে দিলেন। এবার লেল্যাণ্ডের ঘোড়া ছুটতেই সুতোগুলো ছিড়ে গেল এবং তার ফলে শার্টারগুলো খুলেই বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে বিভিন্ন অবস্থান অনুযায়ী ছবি তোলা গেল।
এই সব প্রচেষ্টা দেখে বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের মাথায় প্রথম চলচ্চিত্র তৈরীর চিন্তা আসে। তিনি তখন ফোনোগ্রাফ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁর মনে হল ফনোগ্রাফের মত সিলিণ্ডারের গায়ে ছোট ছোট অনেকগুলি ফটো লাগিয়ে হাতল দিয়ে সিলিণ্ডারটিকে যদি ঘোরালে এবং তারপর শক্তিশালী লেন্সে চোখ রাখলে সেই ছবিগুলিকে সচল বলে মনে হওয়া সম্ভব। এই ভাবনা থেকে তিনি তৎকালীন সময়ে মার্কিন বিজ্ঞানী জর্জ ইস্টম্যানের আবিষ্কৃত সেলুলয়েডের ফিল্মে দৃশ্য বস্তুর বিভিন্ন অবস্থানের ছবি তুলে একটি রোলারে সেই ফিল্মগুলিকে গুটিয়ে রাখলেন। এবার একটি বাক্সের মধ্যে ঐ রোলারটি রেখে রোলারটির সঙ্গে লাগানো একটি হাতল বাক্সের বাইরে বের করে রাখলেন। যাতে রোলারটিকে ঘোরানো যায়। এবার বাক্সের ভেতর ঐ রোলারের সঙ্গে আর একটি ফাঁকা রোলার যুক্ত করে দিলেন, যাতে হাতল ঘোরালেই ছবি লাগানো রোলার থেকে ছবি খুলে অন্য রোলারটিতে জড়িয়ে যায়। এবার তিনি বাক্সের সামনে দুটো ছিদ্র করে সেখানে লাগিয়ে দিলেন শক্তিশালী লেন্স। এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হল কিনেটোগ্রাফ। কিন্তু এই যন্ত্রে মাত্র দুজনেরই এক সঙ্গে দেখা সম্ভব হত।
প্রদর্শনের জন্যও তিনি ১৮৯৩ সালে একটি যন্ত্র বানিয়েছিলেন। যন্ত্রটির নাম ছিলো কিনেটোস্কোপ। এই যন্ত্রে সেলুলয়েডের লম্বা ফিল্মে পর পর তোলা কতকগুলি ছবি পাঠানো হত। জোরালো আলো দিয়ে সেই ফিল্ম আলোকিত করা হত এবং বড় লেন্সের মাধ্যমে সেই ছবি পর্দার ওপর ফেলা হত। কিন্তু এই ফিল্মের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র পঞ্চাশ ফুট। তেরো সেকেণ্ডে শেষ হয়ে যেত ছবি। এডিসনের এই পদ্ধতিকে ভিত্তি করে টমাস আরমার্ট প্রথম বাক্সের বদলে সরাসরি পর্দার ওপর নির্বাক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন তারপর পরবর্তীযুগ হল সবাক চলচ্চিত্রের যুগ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions