Home » » খাজনা কি?

খাজনা কি?

খাজনা কি?

খাজনার সংজ্ঞা খাজনার সংজ্ঞাকে তিনটি আঙ্গিকে বিবেচনা করা হলো :

ক) সাধারণ অর্থে খাজনা বলতে কোন বাড়ী, জমি, দোকান, গাড়ী এসব নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার বাবদ চুক্তিভিত্তিক অর্থ প্রদান বুঝানো হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে খাজনা শব্দের ব্যবহার ভিন্ন রকম। অর্থনীতিতে খাজনা বলতে ‘অর্থনৈতিক’ খাজনা বুঝানো হয়। বিশুদ্ধ খাজনা বা অর্থনৈতিক খাজনা হলো একটি উৎপাদনশীল উপকরণের জন্য প্রদত্ত দাম, যেখানে সেই উপকরণের যোগান সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক।


উপকরণের সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক যোগান কথাটির অর্থ কি? 

উপকরণের দাম বা উপকরণের প্রয়োজন (চাহিদা) এর পরিবর্তন ঘটলেও যে উপকরণের পরিমাণের কোন পরিবর্তন সম্ভব হয় না, সেই উপকরণের যোগানকে সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক বলা হয়। জমির মোট যোগান কোন রকমেই যদি বাড়ানো সম্ভব না হয়, তবে জমির যোগানকে | সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক (বা শূন্য স্থিতিস্থাপক) বলা হবে। জমির সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপকতা বা চাহিদার তুলনায় জমির যোগানের স্বল্পতার কারণেই মূলতঃ ডেভিড রিকার্ডো খাজনাকে জমির সাথে সম্পৃক্ত করেছেন।


খ) খাজনাকে অনেক সময় উদ্বৃত্ত হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই খাজনার সংজ্ঞা এভাবেও দেয়া যায় : 

উৎপাদন ক্ষেত্রে নিযুক্ত কোন উপাদানের ন্যূনতম যোগান দাম (Minimum supply price) অপেক্ষা উপাদানের মালিক অতিরিক্ত আয় পেলে সেই অতিরিক্ত উপার্জিত অর্থকে খাজনা বলে।


কেন জমি থেকে প্রাপ্ত আয়ের সবটাই অর্থনৈতিক খাজনা হিসাবে বিবেচ্য? 

যদি অর্থনৈতিক শক্তির উপর কোন উপাদানের যোগান নির্ভর না করে, অথচ সেই উপাদান বাবদ অর্থ উপাদানের মালিক পায়, তবে সেই প্রাপ্তিকে বাড়তি প্রাপ্তি বা উদ্বৃত্ত বলা হয়। এরূপ উদ্বৃত্ত অর্থ উপকরণের মালিক যা পায়, তাকে অর্থনৈতিক খাজনা হিসাবে নির্দেশ করা হয়। সমাজের দিক থেকে জমির আয়ের সবটাই খাজনা। সামগ্রিক দিক থেকে, জমির যোগান-দাম শূন্য। কারণ দাম যাই হউক না কেন, সমাজের নিকট জমির যোগান কম-বেশি হয় না। সমগ্র সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে জমি থেকে প্রাপ্ত আয়ের সবটা হলো উদ্বৃত্ত। আর উদ্বৃত্ত যেহেতু খাজনা, তাই জমি থেকে প্রাপ্ত আয় সবটাই অর্থনৈতিক খাজনা। 


গ) খাজনা হলো উপাদানের প্রাপ্তব্য আয় বা উপার্জন, যা সুযোগ ব্যয়ের অতিরিক্ত হিসাবে পাওয়া যায় এবং যার উৎপত্তি ঘটে উপাদানের সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপকতার অভাবে। উপকরণের স্থানান্তর ব্যয়কে সুযোগ ব্যয় বলা হয়, অর্থাৎ জমিকে বর্তমান প্রয়োগ ক্ষেত্রে রাখার জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে, তাই হলো সুযোগ ব্যয়। এ প্রেক্ষিতে বিকল্প সর্বোত্তম ব্যবহার থেকে যে আয় হত তার চাইতে বাড়তি আয় যা জমি থেকে পাওয়া যায়, তাকে অর্থনৈতিক খাজনা বলা যায়। খাজনা হলো উপাদানের প্রাপ্তব্য আয় বা উপার্জন, যা সুযোগ ব্যয়ের অতিরিক্ত – কিভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়? ধরা যাক্, এক একর জমির মূল্য আট লক্ষ টাকা, যখন সেই জমি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। এখন সেখানে এপার্টমেন্ট তৈরির অনুমতি দেওয়া হল। সেই জমির মূল্য এখন একর প্রতি আঠার লক্ষ টাকা দাঁড়ায়। জমিতে এপার্টমেন্ট তৈরি না করে জমির মালিক যদি বিকল্প হিসাবে কৃষিকাজে ব্যবহার করতাে, তবে তার উপার্জন হত আট লক্ষ টাকা। সুতরাং সেই জমির তখন সুযোগ ব্যয় ছিল আট লক্ষ টাকা। কিন্তু এপার্টমেন্ট তৈরি করলে তার বাড়তি আয় আসবে দশ লক্ষ টাকা। এ অবস্থায় সেই বাড়তি প্রাপ্তি দশ লক্ষ টাকা হলো অর্থনৈতিক খাজনা।


খাজনা কেন দেয়া হয়? 

খাজনার কেন উৎপত্তি হয় বা কেন খাজনা দেয়া হয়, এ বিষয়টির উপর আলোকপাত প্রয়োজন। নিম্নে খাজনা প্রদানের (বা খাজনা উদ্ভবের) কারণ উল্লেখ করা হল:


 ১। খাজনার কেন উৎপত্তি হয় এ বিষয়ে প্রথমে বলা যায় যে, কোন উপাদানের যোগান সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক হলে খাজনা দেখা দিতে পারে। তবে যোগান অপেক্ষা চাহিদা কম থাকলে খাজনা দেখা দিবে না। কাজেই উপাদানের যোগান স্থির থাকার কারণে এবং একই সঙ্গে চাহিদার তুলনায় যোগানের স্বল্পতা থাকার কারণে খাজনা দিতে হয়। 


২। রিকার্ডোর বক্তব্য অনুসারে জমির উর্বরতার মধ্যে পার্থক্য থাকে বলে খাজনা প্রদান করা হয়। নিকৃষ্ট জমি অপেক্ষা উর্বরতার দিক থেকে উৎকৃষ্ট জমি বাড়তি উপার্জন করতে পারে। তাই উৎকৃষ্ট জমি ব্যবহারকারীরা মালিকের নিকট খাজনা প্রদান করে। 


৩। যদি সব জমি সমান উর্বর ও সমান সুবিধাজনক হয়ও তবুও খাজনার উৎপত্তি হতে পারে। কারণ মোট চাহিদার তুলনায় মোট জমির যোগান যদি কম থাকে, তবে জমি ব্যবহারকারীদেরকে খাজনা প্রদান করতে হয়। উপাদানের যোগান সম্পূর্ণ স্থির (সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক) না থাকলেও চাহিদার তুলনায় উপাদানের যোগান কম হলে খাজনার উদ্ভব হতে পারে। 


৪। উপাদানের যোগান সীমিত অথচ উৎপাদনের জন্য তা অত্যাবশ্যক, এমন হলে সেই উপকরণের জন্য খাজনা প্রদান করতে হয়। কোন কোন উপাদান এমনই যে, তাকে ছাড়া উৎপাদন করা সম্ভব নয়। যেমন – ফসল যদি পেতে হয়, তবে জমি লাগবেই। আর সেই জমির যোগান যেহেতু সীমিত, অথচ প্রয়োজন যেহেতু অত্যধিক, তাই জমির মালিককে জমি ব্যবহারের জন্য দাম বা খাজনা দিতে হয়। জমির অবস্থানগত ভিন্নতার কারণে কাম্য জমি ব্যবহারকারীদেরকে খাজনা দিতে হয়। যেমন জমি ব্যবহারকারীর কাছে শহর বা বাজারের নিকটবর্তী জমি দূরবর্তী জমির চেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন। যাতায়াত ও পরিবহন সুবিধাসহ জমির খাজনা দূরবর্তী বা তুলনামূলক অসুবিধাসম্পন্ন জমির খাজনার তুলনায় বেশি হয়।


৫। জমির অবস্থানগত ভিন্নতার কারণে কাম্য জমি ব্যবহারকারীদেরকে খাজনা দিতে হয়। যেমন জমি ব্যবহারকারীর কাছে শহর বা বাজারের নিকটবর্তী জমি দূরবর্তী জমির চেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন। যাতায়াত ও পরিবহন সুবিধাসহ জমির খাজনা দূরবর্তী বা তুলনামূলক অসুবিধাসম্পন্ন জমির খাজনার তুলনায় বেশি হয়। 


৬। স্থানান্তর ব্যয় যা সুযোগ ব্যয়ের প্রেক্ষিতে খাজনা দিতে হয়। জমিকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন – কৃষিকাজ, পশুচারণ, গৃহ নির্মাণ, শিল্প কাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। জমির বিকল্প ব্যবহারের প্রেক্ষিতে সুযোগ ব্যয় নির্ধারিত হয়। ধরা যাক একখন্ড জমিতে যদি ধান চাষ করা হয়, তবে হয়ত অনুর্বরতার কারণে উৎপাদন ব্যয় উঠলেও উদ্বৃত্ত থাকল না। তখন সেই জমির মালিক যদি চিন্তা করে যে, পাট চাষ করে ধানের তুলনায় উদ্বৃত্ত অর্থ তার থাকবে, তবে পাট চাষে সে জমি ব্যবহার করবে। এমতাবস্থায় ধান চাষের পরিবর্তে পাট চাষ থেকে প্রাপ্ত উদ্বৃত্ত অর্থ খাজনা হিসাবে বিবেচিত হবে। 


৭। জমিতে ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি কার্যকর হয় বলে খাজনা প্রদান করতে হয়। একই জমিতে বাড়তি শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করলে প্রান্তিক উৎপাদন কমে। যখন শ্রম ও মূলধনের যৌথ একক নিয়োগ থেকে প্রাপ্ত প্রান্তিক উৎপাদন এবং উপাদানের একক ভিত্তিক খরচ সমান হয়, তখন উৎপাদনকারী বাড়তি শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করে না। প্রান্তিক উৎপাদনের তুলনায় যে সব এককের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উৎপাদন বা উদ্বৃত্ত পাওয়া। যায়, তা খাজনা হিসাবে বিবেচনাযোগ্য। ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি কার্যকর না হলে একই জমিতে বাড়তি শ্রম ও মূলধন কাজে লাগিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ি যত খুশি উৎপাদন করা যেত। তখন খাজনা উদ্ভবের কোন সুযোগ থাকে না।


মোট খাজনা ও নীট খাজনার সংজ্ঞা 

জমি ব্যবহারকারী কর্তৃক জমির মালিককে চুক্তি অনুসারে প্রদত্ত মোট অর্থকে (বা মোট বাড়তি ফসল প্রাপ্তিকে) মোট খাজনা বলা হয়। চুক্তিভিত্তিক খাজনা যা সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাকে মোট খাজনা হিসাবে বুঝানো হয়। চুক্তিভিত্তিক প্রাপ্ত খাজনা বা মোট খাজনার মধ্যে জমির বিশুদ্ধ খাজনা যেমন থাকে, তেমনি তার মধ্যে জমির মালিকের মূলধন নিয়োগবাবদ সুদ, প্রাপ্তিযোগ্য মজুরি, মালিক কর্তৃক সরকারকে প্রদত্ত কর অন্তর্ভুক্ত থাকে। এসবকে মোট খাজনা থেকে বিয়োগ করলে যা থাকে তাহলো নীট খাজনা বা বিশুদ্ধ অর্থনৈতিক খাজনা। সুতরাং বিশুদ্ধ অর্থনৈতিক খাজনা বা নীট খাজনা হলো উপাদান ব্যবহারজনিত প্রদত্ত অর্থ, যা সেই উপাদানের অস্থিতিস্থাপকতার জন্য দেওয়া হয় এবং নীট খাজনার মধ্যে সুদ, মজুরী, কর এসব বিষয় থাকে না।

 

মোট খাজনার উপাদানসমূহ মোট খাজনা ও নীট খাজনার পার্থক্য নির্দেশ:

মোট খাজনা একটি প্রসারিত ধারণা। মোট খাজনার মধ্যে থাকে নীট খাজনাসহ আর কিছু উপাদান। চলুন সেগুলোর উপর আলোকপাত করা যাক। জমির মালিককে যখন অর্থ প্রদান করা হয়, তখন জমির উপর নির্মিত ঘরবাড়ি বা নলকূপ বাবদ অর্থও তার মধ্যে থাকে। কিন্তু সেই ঘরবাড়ি, নলকূপ এসব সরাসরি জমি হিসাবে বিবেচ্য নয়। বরং তা স্থায়ী মূলধন হিসাবে গণ্য। জমি রক্ষণাবেক্ষণ বা উন্নয়নের জন্য মালিক তার মূলধন খাটাতে পারে। সেই মূলধনের জন্য যে সুদ পাওয়ার কথা ছিল, তা খাজনার ভিতর থেকে যায়। তাছাড়া জমি ভাড়া দিলেও মালিক নিজে অনেক সময় তত্ত্বাবধান করে, সময় ব্যয় করে এবং তার জন্য তাকে পরিশ্রমও করতে হয়। কাজেই সে বাবদ মালিক অর্থ প্রাপ্তি (যা মূলতঃ তার মজুরী) আশা করতে পারে। কিন্তু তা মোট খাজনা নামক প্রাপ্তির মধ্যেই থেকে যায়। আবার জমির উপর সরকার কর ধার্য করলে মালিক নিজে সেই কর প্রদান করে। কিন্তু জমি ব্যবহারকারীর নিকট থেকে মালিক যখন খাজনা পায়, তখন সে স্বাভাবিকভাবে আশা করে যে, তার প্রদত্ত কর খাজনা প্রাপ্তির মাধ্যমে উঠে আসবে। সুতরাং মালিক কর্তৃক সরকারকে প্রদত্ত কর মোট খাজনার মধ্যে নিহিত থাকে। কাজেই সুদ, মজুরী ও কর বাবদ প্রাপ্তি ধরে নিয়ে যখন প্রসারিত দৃষ্টিতে খাজনা হিসাব করা হয়, তখন তাকে মোট খাজনা বলে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জমি (বা অনুরূপ কোন উপাদান) বাবদ প্রাপ্ত মোট খাজনা থেকে মালিক কর্তৃক প্রাপ্য সুদ, মজুরী এবং মালিক প্রদত্ত কর ইত্যাদি বাবদ হিসাবকৃত অর্থ বাদ দিলে যা থাকে তাই হলো (নীট) অর্থনৈতিক খাজনা। আর তাকে বিশুদ্ধ বা প্রকৃত খাজনাও বলে। নীট খাজনা, মোট খাজনারই একটি উপাদান বা অংশ। সুতরাং মোট খাজনার উপাদানগুলো হলো নীট খাজনা, মালিকের মূলধন নিয়োগ বাবদ সুদ, মালিকের পরিশ্রম বাবদ মজুরি ও মালিক কর্তৃক প্রদত্ত কর।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->