অনুপার্জিত আয় কি?
জমির দাম বাড়লে মালিকের অতিরিক্ত আয় হয়। কিন্তু সেই অতিরিক্ত আয়ের জন্য মালিককে কোন বাড়তি পরিশ্রম বা বিনিয়োগ করতে হয় না। কাজেই শ্রম বা অর্থ বিনিয়োগ না করে কেবল দাম বৃদ্ধির কারণে জমির মালিক যে বাড়তি অর্থ হাতে পায়, তাকে অনুপার্জিত আয় বলে। কোন হাইওয়ে (যেমন – বিশ্বরোড বা এশিয়ান হাইওয়ে নামে একটি অবহেলিত গ্রাম বা জনপদ দিয়ে নির্মিত হলো সেখানে জমির চাহিদা বেড়ে যায় এবং তার দাম বাড়ে। অথবা ধরা যাক, বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণের ফলে কোন বিশেষ অঞ্চলের জমির দাম হঠাৎ বেড়ে | গেল। এর ফলে জমির মালিকরা আশাতীত আয় লাভ করতে পারে। আবার ঢাকার মূল | এলাকায় জমি আগেও যা ছিল, এখনও তাই আছে। কিন্তু লোকসংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় জমির দাম হু হু করে বেড়ে গেল। ঢাকার জমির মালিকদের অকল্পনীয় আয় পাওয়ার সুযোগ এসে গেল। কিন্তু সেই বাড়তি আয় পাওয়ার জন্য মালিককে কোন পরিশ্রম করতে হয়নি বা অর্থ ব্যয় করতে হয় নি। এভাবে জমির মালিকরা বিনা পরিশ্রমে বা বাড়তি কোন ব্যয় না করে | যে বর্ধিত আয় পায়, সেই আয়কে অনুপার্জিত আয় বলে। সুতরাং শ্রম বা অর্থ বিনিয়োগ করে উপাদানের মালিক যখন অর্থ উপার্জন করে, সেই আয়কে উপার্জিত আয় বলে। অপরপক্ষে | বিনা পরিশ্রমে বিনা ত্যাগের বিনিময়ে যে অর্থ উপাদানের মালিক পায়, তাকে অনুপার্জিত আয় বলে।
অনুপার্জিত আয় সৃষ্টির কারণ
অনুপাজিত আয় সৃষ্টির কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. যখন নগরীর আয়তন প্রসারিত হয়, শিল্প কলকারখানা স্থাপিত হয়, নতুন রাস্তাঘাট তৈরি হয়, বিল্ডিং গড়ে উঠে ; তখন চাষাবাদের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়। এমতাবস্থায় জমির দাম বাড়ে। দাম বৃদ্ধির ফলে জমির মালিক অনুপার্জিত অর্থ পেয়ে থাকে।
২. জনসংখ্যা বাড়লে একই জমির উপর সেই জনসংখ্যার চাপ বাড়ে। জমির যোগান সীমিত, অথচ জমির চাহিদা ক্রমাগত বাড়লে জমির দাম বেড়ে যায়। তখন জমির বাড়তি দাম, মালিকের কাছে অনুপার্জিত হিসাবে হাতে আসে।
অনুপার্জিত আয়ের উপর কর আরোপের যুক্তি
জমির চাহিদা তথা দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে জমির মালিক যে খাজনা পায়, তার জন্য জমির মালিকের কোন শ্রম ব্যয় করতে হয় না। জমির মালিক বসে থেকে এ বাড়তি খাজনা (অর্থ) পায়। কাজেই তা অনুপার্জিত আয়। সেই অনুপার্জিত আয়ের উপর সরকার কর আরোপ করলে জমির যোগান তাতে কমবে না। কর আরোপের উপযুক্ত ক্ষেত্র হলো এ অনুপার্জিত আয়। কারণ অনুপার্জিত আয়ের উপর সরকার কর আরোপ করলে জমির যোগান কমবে না, কর আরোপের দ্বারা সমাজের উপর কোন বাড়তি ভারও পড়বে না, অথচ সরকারী কোষাগারে রাজস্ব আসবে যথেষ্ট।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions