শবে বরাতের আমল
শবে বরাতের আমল সমূহ:
'বরাত' শব্দের অর্থ মুক্তি এবং শব'-এর অর্থ রাত । অতএব ‘শবে বরাত-এর অর্থ মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তা'আলা অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য মানুষকে আহ্বান জানান এবং তাঁর নিকট চাইলে তিনি এসব থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, তাই এ রাতকে শবে বরাত বা মুক্তির রাত বলা হয়। শাবান মাসের ১৫ই রাত অর্থাৎ ১৪ই শাবান দিবাগত রাতই হল এই শবে বরাত ।
হাদীছ শরীফের আলোকে এবং ফেকাহর কিতাবে বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী শবে বরাত উপলক্ষে ৬টি আমলের কথা প্রমাণিত :
১। ১৪ই শাবান দিবাগত রাতে জাগরণ করে নফল ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার ও তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকা। এ রাতে যে কোন নফল নামায পড়ুন, যে কোন সূরা দিয়ে পড়তে পারেন- কোন নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে পড়া জরূরী নয়। যত রাকআত ইচ্ছা পড়তে পারেন । আরও মনে রাখবেন নফল নামায ঘরে পড়াই উত্তম। একান্ত যদি ঘরে নামায পড়ার পরিবেশ না থাকে তাহলে মসজিদে পড়তে পারেন। বর্তমানে শবে বরাত ও শবে কুদর উপলক্ষ্যে ইবাদত করার জন্য মসজিদে ভীড় করার একটা রছম হয়ে গিয়েছে। এর ভিত্তিতে কোন কোন মুফতী শবে বরাত ও শবে কদরে ইবাদত করার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়াকে মাকরূহ ও বিদআত বলে ফতুয়া দিয়েছেন। তাই যথাসম্ভব ঘরেই ইবাদত করা উত্তম হবে।
২। এ রাতে বেশী বেশী দুআ করা। কেননা আল্লাহ তা'আলা সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে এসে মানুষকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য, রিযিক চাওয়ার জন্য, রোগ-শোক, বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি ও বিভিন্ন মাকছুদ চাওয়ার জন্য আহ্বান করতে থাকেন, তদুপরি আর এক হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী এই রাতে মানুষের সারা বৎসরের হায়াত মওত ও রিযিক দৌলত ইত্যাদি লেখা হয়ে থাকে। অতএব এ রাতে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী করে দুআ করা চাই।
৩। হাদীছ শরীফে আছে, এই রাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গিয়েছিলেন এবং মৃত মুসলমানদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করেছিলেন। তাই এই রাতে কবর যিয়ারতে যাওয়া যায়। তবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে একাকী গিয়েছিলেন- কাউকে সাথে নিয় আড়ম্বর সহকারে যাননি। তাই এ রাতে দলবল নিয়ে সমারোহ না করে আড়ম্বরের সাথে না করে নীরবে কবর যিয়ারতেও যাওয়া যায়। |
৪। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত মুসলমানদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করেছিলেন। এটা ঈছালে ছওয়াবের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ রাতে মৃতদের জন্য দুআ করা ছাড়াও অন্যান্য পদ্ধতিতেও ঈছালে ছওয়াব করার অবকাশ রয়েছে। যেমন কিছু দান-খয়রাত করে বা কিছু নফল ইবাদতবন্দেগী করে তার ছওয়াব মৃতদেরকে বখশে দেয়া। এরূপ করাও উত্তম হবে।
৫। পরের দিন অর্থাৎ, ১৫ই শাবান নফল রোযা রাখা উত্তম।
৬। শবে বরাতে (১৪ই শাবান দিবাগত রাতে) গোসল করাও মোস্তাহাব।
* উপরোল্লেখিত ৬টি বিষয় ব্যতীত শবে বরাত উপলক্ষ্যে আর বিশেষ কোন আমল কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। শবে বরাত উপলক্ষ্যে হালুয়া রুটি তৈরী করা, মোমবাতি জ্বালানো, আতশবাজী ও পটকা ফোটানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ, আর এগুলো যদি রছম বা রীতি হিসেবে নিয়মিত করা হয় তাহলে বিদআত ও গোনাহের কাজ বলে বিবেচিত হবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions