থার্মোমিটার আবিস্কারের কাহিনী!
এক পাত্র ঠাণ্ডা জল আগুনে বসালে অর্থাৎ তাপ প্রয়োগ করলে জলটি গরম হয়ে ওঠে এবং এক সময় ফুটতে শুরু করে। আগুনের তাপ এভাবে পাত্রটির মাধ্যমে জলে সঞ্চালিত হয়ে জলের উষ্ণতাকে বাড়িয়ে তোলে। এই উষ্ণতাকে মানুষ পরিমাপ করতে চাইতো। কিন্তু স্পর্শ দিয়ে তা অনুভব করা সম্ভব নয়, তারজন্য দরকার তাপমান যন্ত্র।। | তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য তাপমান যন্ত্রের কথা ১৫৯২ সালে প্রথম মাথায় আসে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর। কিন্তু শেষপর্যন্ত তার আবিষ্কৃত থার্মোমিটারটি কেমনভাবে তৈরী হয়েছিল তা আমরা জানি না। প্রথম যে থার্মোমিটার যন্ত্রের কথা জানা যায় তা আবিষ্কার করেছিলেন সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগে ইটালী দেশের বিজ্ঞানী ফ্লোরেন্স। তিনি একটি কাচের সরু নল বানিয়ে তার মধ্যে অ্যালকোহল পুরলেন তারপর নলের মুখ বন্ধ করে দিলেন। অ্যালকোহল নেওয়ার কারণ এটি তরল পদার্থ হওয়ায় কঠিন পদার্থের চেয়ে এর হ্রাসবৃদ্ধির পরিমাণ বেশী। জল যেমন ঠাণ্ডায় জমে বরফ হয়ে যায়, অ্যালকোহলের বরফ হয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই। এই যন্ত্রে শুধু উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা সেটাই বোঝা যেত, কিন্তু কাচের নলের গায়ে দাগ কাটা না থাকায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পরিমাপ করা যেত না।
এই আবিষ্কারের বহুকাল পরে ১৭১৪ সালে হল্যাণ্ডের ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট নামক এক বিজ্ঞানী এই থার্মোমিটারের মান অনেক উন্নত করেন। তার থার্মোমিটারটিও ছিল একটি কাচের নল। কিন্তু তিনি বিজ্ঞানী ফ্লোরেন্সের মত কাচের নলে অ্যালকোহল না নিয়ে পারদ ভরলেন। কারণ পারদ চকচকে। কাচের নলের গা ভিজিয়ে দেয় না। তাপমাত্রা পরিবর্তনে
পারদের আয়তনের পরিবর্তন নিয়মানুগ হয়। প্রসারিত হওয়ার জন্য পারদ বস্তু থেকে অতি সামান্য তাপ নেয়। কাচের নলের একপাশ গলিয়ে নিয়ে অপর পাশে ফুঁ দিয়ে একটি গােলাকার গর্ত তৈরী করে তার মধ্যে পারদ ভরে তিনি খোলা মুখটিকে গলিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তাপমাত্রার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান নির্ধারণের জন্য তিনি এবার কাচের নলের পারদ ভরা মুখটিকে বরফ কুচির মধ্যে ঢুকিয়ে এবং তারপর ফুটন্ত জলের বাষ্পে ধরে দুটি স্থিরাঙ্ক নির্ধারণ করেন। এভাবে তিনি দুই স্থিরাঙ্কের মধ্যবর্তী স্থানকে ১৮০ ভাগে ভাগ করেন। তিনি দেখেন জল ৩২ ডিগ্রীতে জমে বরফ হয় এবং ২১২ ডিগ্রীতে বাষ্পে পরিণত হয়। মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৬ ডিগ্রী। শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য আমরা এই ফারেনহাইট স্কেলই ব্যবহার করি। | এর পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী রোমার হিমাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ০ ডিগ্রী ও ৮০ ডিগ্রী ধরে এক ধরণের তাপমান যন্ত্র তৈরী করেন। তাঁর নামানুসারে এই স্কেলকে বলে রোমার স্কেল।
সুইডেনের বিজ্ঞানী সেলসিয়াস হিমাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ০ ডিগ্রী ও ১০০ ডিগ্রী ধরে যে স্কেল তৈরী করেন তাকে বলে সেলসিয়াস স্কেল। আবিষ্কারকের নামানুসারে এই নাম দেওয়া হয়েছে। তবে এই স্কেল সেন্টিগ্রেড স্কেল হিসাবেই বেশী পরিচিত। উষ্ণতা পরিমাপে এই স্কেলটি বেশী ব্যবহৃত হয়। মানুষের দেহের তাপ মাপার জন্য যে ডাক্তারী থার্মোমিটার হয় সেটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। থার্মোমিটারের ভেতরের সরু নলটা যেখান দিয়ে পারদটা ঢােকানো হয়, সেটা গর্ত মত মুখের ওপরে একটু বাঁকানো থাকে। ফলে মানুষের শরীর থেকে থার্মোমিটার বের করে আনলে বাইরের তাপমাত্রা কম হয়ে গেলেও বাঁকানো পথ দিয়ে সহজে পারদ নেমে যেতে পারে না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ক্ষেত্রে একটা সীমারেখা আছে, কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রা সম্পর্কে কোন পরিসীমা নেই। তাই এখনও বহু উন্নত থার্মোমিটার তৈরী করার চেষ্টা চলছে।

0মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions